হেফাজতের সঙ্গে কোন আপস নয়: উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি
হেফাজতে ইসলামের সমর্থকরা প্রকৃত ইসলামের অনুসারী না মন্তব্য করে তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের আপস করবেন না বলে জানিয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য র. আ. ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী।
বৃহষ্পতিবার একটি জাতীয় পত্রিকায় দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বলেন, ‘হেফাজতের মূল উদ্দেশ্য দেশটাকে আফগানিস্তান বানানো। এতে লাভ অস্ত্র ব্যবসায়ীদের। লাভ মোল্লা ওমরদের। এই মোল্লা ওমরদের কোনো সুস্থ চিন্তাধারা নেই। তারা জানে এই দেশে তাদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। তারা লেখাপড়া জানে না।
লেখাপড়া করেও না। তাদের রুটি-রুজির কোনো পথ নেই। আধুনিক যে সিস্টেম তা উঠিয়ে দিয়ে তারা তথাকথিত ইসলামী ঘাঁটি বানাবে। তারা খারিজি। তারা ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে গেছে। তাদের সঙ্গে আমি কোনো কম্প্রমাইজ করবো না। সরকার যদি করেও আমি করবো না।
২৭শে মার্চ আওয়ামী লীগের মিছিল থেকে জামিয়া ইউনুছিয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হামলা চালানো হয়েছিল মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ও হেফাজত নেতাদের এমন দাবির বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘সেদিন আওয়ামী লীগ একটি মিছিল বের করেছিল। আমি সেখানে ছিলাম। মিছিল চলে যাওয়ার পরে পেছন দিকে আমি আওয়াজ শুনেছি। মিছিলের কোনো অংশ মাদ্রাসার দিকে যায়নি। মিছিল আমার সঙ্গে চলে গেছে। আমি দক্ষিণ কাজীবাড়ি থেকে ফিরে আসি। আমি আসার পরও তারা মিছিল করেছে। আমাদের কোনো ঠ্যাঙ্গেরও (পা) ইচ্ছে নেই মাদ্রাসার দিকে যাওয়ার। কারা হামলা করেছে তা মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ভালো জানে।’ তিনি চ্যালেঞ্জ করে বলেন, ‘আমি বা আমার কোনো লোক যদি ওইদিকে গিয়ে থাকে, তা কেউ প্রমাণ করতে পারে আমি রাজনীতিই করবো না।’
উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বলেন, তাদের দীর্ঘদিনের ইচ্ছা এই সরকারকে উৎখাত করে দেশে তালেবানি সরকার কায়েম করবে। দেশটাকে তারা আফগানিস্তানের মতো বানাবে। তারা তো ক’দিন আগেও বলেছে ‘বাংলা হবে আফগান, আমরা হবো তালেবান’। সুতরাং এটা (মাদ্রাসার হামলা) তারা নিজেরাও অর্গানাইজ করতে পারে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চালানো তাণ্ডবের সব দায় হেফাজতকেই নিতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এর আগের দিন ২৬শে মার্চ তারা উসকানিমূলক কাজ করেছে। সেদিন তারা রেলস্টেশন পোড়ালো কেন? সেদিন তো কোনো উসকানি ছিল না। তারা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙলো কেন? দুষ্কৃতকারীরা উসকানির একটা পথ সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু যখন উসকানি ছিল না তখন নাশকতা হলো কীভাবে। হাটহাজারী মাদ্রাসায় মানুষ মারা গেছে, আপনারা এখানে (ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়) মানুষ মাইরা ফালাইতেন। আপনারা রেললাইন উপড়ালেন কেন? রেললাইন উপড়ানোর কী হলো?’
মোকতাদির চৌধুরী বলেন, ২৬শে মার্চ তারা হামলা, নাশকতা করেছে এককভাবে। সেটার ডুকমেন্ট আছে। ২৮শে মার্চ তাদের সঙ্গে আরো অনেকে জয়েন করতে পারে। ২৮শে মার্চ মাঠে থেকে হেফাজতকে সহযোগিতা করার জন্য যৌথভাবে ছাত্রদল, যুবদলের বিবৃতি আছে। তারা তো মাঠে ছিলই।
আওয়ামী লীগের একাংশ এই তাণ্ডবে সংশ্লিষ্ট ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সে আওয়ামী লীগ না। আমরা তাকে পার্টি থেকে বের করে দিয়েছি। তিনি প্রাক্তন। তার লোকজনের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে। এজন্য দায়ী হেফাজত ইসলাম। এর দায় তাদের নিতে হবে। তারা মাইকে বলেছে, ইসলাম বিপন্ন, জিহাদের জন্য এগিয়ে আসুন। এটা শুনলে যেকোনো মুসলমান এগিয়ে আসবেন।’
হেফাজতের নেতাকর্মীরা দানবীয় শক্তির প্রতিনিধিত্ব করে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, তারা ইসলামের নাম ব্যবহার করে এক ধরনের অসভ্যতা সৃষ্টি করছে। তারা মানুষ নয়। যে কারণে তারা ফুলকে পর্যন্ত ভালোবাসে না। তারা ফুলের বাগান নষ্ট করেছে। তারা ২৬শে মার্চ ফুলের বাগানে হামলা করলো কেন? তারা মৎস্য অফিসে হামলা করেছে। সিভিল সার্জনের অফিসে হামলা করেছে। কারণ তারা তাবিজ দেয়া লোক।
ভ্যাকসিন নেয়ার কারণে মানুষের ভেতরে স্বাস্থ্যসচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষ আর দোয়া, বা তাবিজের ওপর নির্ভরশীল হবে না। যে কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে তারা সিভিল সার্জনের অফিসে হামলা করেছে। তিনি বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমি দুঃখিত, আমি মানুষকে রক্ষা করতে পারিনি।
স্থানীয় সংসদ সদস্য হিসেবে এলাকার অনেকে আপনার বিষয়ে নানা অভিযোগ তুলছে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘যারা ধর্ম ব্যবসা করে তারা তো স্বভাবতই আমার ওপর ক্ষুব্ধ হবে। কিন্তু ওদের যখনই সাহায্যের দরকার হয় তখনই আমার পায়ে পড়ে। আমি তখনই তাদের সহযোগিতা করি। কিন্তু আমি কখনো কোনো সহযোগিতার জন্য তাদের কাছে যাইনি। ভবিষ্যতেও যাবো না। কারণ আমি তাদের কখনো সঠিক ইসলাম ধর্মাবলম্বী মনে করি না। তারা হযরত আলী (রা.) সময়ে যে খারিজি ছিল, তারা সেই খারিজিদের উত্তরাধিকারী।’
উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী ২০১১ সালের উপ-নির্বাচনে প্রথম এমপি নির্বাচিত হন। তারপর থেকে টানা তৃতীয়বারের মতো এই আসনের এমপি তিনি। চাকরি জীবনে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর রাজনীতি শুরু ছাত্রলীগের মাধ্যমে। ১৯৭০ সালে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৩ সালে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দেন। ১৯৮৬ সালে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার সহকারী একান্ত সচিব ছিলেন তিনি। ১৯৯৬ সালে সিভিল সার্ভিসের অফিসারদের নিয়ে গঠিত জনতার মঞ্চের অন্যতম সংগঠক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী।