আন্তর্জাতিক মানের ল্যাবে দুর্নীতির অভিযোগ হাস্যকর: বাদল চন্দ্র সাহা
নিজস্ব প্রতিনিধি
আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ল্যাবরেটরিতে রুপান্তর প্রকল্পে অনিয়মের খবর প্রকাশের পর কৃষি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাসের মুখোমুখি হলে প্রতিবেদকের সাথে তিনি খোলাখুলি আলাপ করেন। সে আলাপে মহাপরিচালক বলেন, এই খাতে দুর্নীতির খবর হাস্যকর। সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ নিচে তুলে ধরা হলো:
প্রশ্ন: আন্তর্জাতিক মানের ল্যাব প্রকল্পে ১৭ কোটি টাকা আগাম ছাড়ের অভিযোগ উঠেছে এ বিষয়ে আপনার মতামত যদি জানান।
বাদল চন্দ্র সাহা: আপনারা জেনে খুশি হবেন যে, বাংলাদেশে এই প্রথম আন্তর্জাতিক মানের একটি ল্যাব প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এটা একটা রেফারেন্স হবে। ইতিমধ্যে কয়েকটা ল্যাব কমপ্লিট হয়েছে। আমরা আইএসও সার্টিফিকেটও পেয়েছি। মিডিয়ায় প্রকাশিত সংবাদকে আমার হাস্যকর মনে হয়েছে। আমি সরেজমিন শ্যামপুর ঘুরে এসেছি, একটা ল্যাব তার উন্নয়নে চলমান অবস্থায় আছে। প্যাকেটজাত মেশিনারিজ আসছে। সেখানে বলা হচ্ছে, প্যাকেট দেখিয়ে বিল দেয়া হচ্ছে, টেবিল খালি পড়ে আছে। আরে ভাই, খালি তো থাকবেই। টেবিলে সেট করার আগ পযর্ন্ত খালি তো থাকবেই। কারণ সেটিংয়ের জন্য আমার লাগবে স্পেশাল্টি ইঞ্জিনিয়ার। যে কেউ এটা খুলতে পারবে না, সেটিং করতে পারবে না। সেটিংয়ের জন্য লাগবে আমার সার্বক্ষনীক বিদ্যুৎ সরবরাহ। আমার প্রত্যেকটা কাজ চলমান আছে। ধাপে ধাপে ১০টি ল্যাবের ৬টি ল্যাব আমার অলরেডি প্রস্তুত এখন ৬টা অটোক্লেভিএখন সেট করতে হবে। সেটাও আমাদের চলে আসছে। বাকি ৪টি ল্যাবের মেশিন প্যাকেটজাত হয়ে আসছে, এখনও কয়েকটা প্যাকেট এয়ারপোর্টেও আছে। আমার কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন। সেই অবস্থায় দেখে সাংবাদিকরা প্রতিবেদন করলো, এগুলোর বিল দেয়া হয়েছে, কাজ না করেই – এটা খুবই হাস্যকর লাগছে।একদম অযৌক্তিক, অনৈতিকভাবে এটা প্রচার করা হয়েছে। যেহেতু কাজ চলমান, আমার চারটি ল্যাবে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে হবে। কাজটাই চলমান।যখনই আমি এই বিদ্যুৎ নিশ্চিত করবো তখন স্পেশালিস্টরা এগুলো স্টার্ট করবে, চালু করবে এবং চার বছর ধরে তারা এসব টেক কেয়ার করবে। এ বিষয়ে তাদের সাথে আমাদের চুক্তি আছে। তারা আমাদেরকে প্রশিক্ষণ দেবেন। যদিও আমরা বিভিন্ন ল্যাবে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি, কিন্তু এই ল্যাবে মেশিনটা সেট করার জন্য আলাদা প্রশিক্ষণ দরকার হবে। তা তারা দেবে। এসব না বিবেচনা করে এভাবে প্রচার হলে আমি এইসব প্রতিবেদনকে হাস্যকরই বলবো। যারা এই প্রতিবেদনগুলো করেছে তারা আসলে খুবই হালকাভাবে, পরিবেশ দূষণ করার জন্য করেছে।
প্রশ্ন: ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে মনে করছেন আপনি? কেন মনে করছেন!
বাদল চন্দ্র সাহা: আমি সরেজমিন গিয়ে ওখানে যারা ছিলো, তাদের সাথে কথা বলেছি, এটা জাতীয় স্বার্থের কাজ। এখানে ষড়যন্ত্র শব্দটা ব্যবহার না করাই উচিৎ। কারো ভুল বা ত্রুটি হতে পারে, সেটা ধরিয়ে দেয়া যায়। ভুলটা ইচ্ছাকৃত না অনিচ্ছাকৃত এটা দেখতে হবে।অতিমাত্রায় কোন ভুল হলো কি না-সেটা দেখতে হবে। আমি ফার্মের কনসালটেন্টের নথি চেয়েছি, দেখবো এই ভুল তাদের করা কি না? নাকি পিডি’র। অথবা পিডি হয়তো টেকনিক্যাল টার্মটা কিংবা ভিতরে অতটা পড়ে নাও দেখতে পারে। ফার্ম কৃষি অধিদ্পতরের। নিজের ফার্মের প্রস্তাবিত মেজারমেন্ট অনুসারে হয়তো বিলটা দিয়েছেন। এটা আমি এখনো দেখিনি, ডেকেছি। দেখবো।
প্রশ্ন: এই যে পিডি সরল বিশ্বাসে অতটা না দেখে বিল ছাড় করলেন-এই ভুলের জন্য আপনি কি উদ্যোগ নিচ্ছেন?
বাদল চন্দ্র সাহা: ওইভাবে বলা ঠিক হবে না। কাস্টিং নতুন একটা শব্দ যেটার মানে আমি বুঝলাম যে অব্দি বিল্ডিং করা হয়েছে। সেখানে যদি আমার কনস্ট্রাকশন ফার্ম বিলে ভুল কিছু লিখে দেয়, তাহলে এটা তাদের ভুল বলে প্রতীয়মান হবে। আর পিডি হয়তো কনস্ট্রাকশন ফার্মের উপর বিশ্বাস করে বিল সই করে দিয়েছেন। বিশ্বাস না করে তো পারা যাবে না। সর্বোপরি পিড’র দেখার দায়িত্ব। এই বিষয়টা আমরা দেখছি। পিডি’র কতটুকু ভুল বা দায়িত্বে অবহেলা করছে, সেই অবস্থানটা বুঝে আমাদের ব্যবস্থা নিতে হবে। এখনো ম্যাজারমেন্ট বুকটা আমি দেখতে পারি নাই। দেখলেই এ বিষয়ে একটা সিদ্ধান্ত নিবো।
প্রশ্ন: পিডি তার অধস্তনদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন। আপনি আপনার অধস্তনের বিরুদ্ধে কি ধরণের ব্যবস্থা নিচ্ছেন বা নিবেন?
বাদল চন্দ্র সাহা: শামীম সাহেব চলমান অবস্থায়, মালাকার সাহেব চলমান অবস্থায় যে ধরণের লেখালেখি, যে ধরণের পরিবেশ তৈরি হয়েছিলো সেখান থেকে বের হয়ে আসতেই খালিদ সাইফুল্লাহকে পিডি হিসেবে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। যদিও শ্যামপুর ল্যাবের ডিডি থাকা অবস্থায় তার বিরুদ্ধেও লেখালেখি হয়েছে, কিন্তু মাত্রা বিবেচনায় তাকেই উপযুক্ত মনে করেছে মন্ত্রণালয়, তাই তাকেই পিডি পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। পিডি সবটা ঠিক নাও জানতে পারে। টেকনিক্যাল ওয়ার্ডগুলো সম্পর্কে তার ধারণা নাও থাকতে পারে।হয়তো পিডি ভাবছে আমার ফার্ম আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে না। হয়তো সেই বিশ্বাস থেকেই অর্থের ছাড় দিয়েছে! আমাকে তো আমাদের অধস্তনদের বিশ্বাস করতেই হবে।
প্রশ্ন: এক মাসের মধ্যেই পদোন্নতি, দুইজনকে বদলী এবং ১৭ কোটি টাকা ছাড় হলো। এই তড়িঘড়ি বিষয়ে আপনার মতামত কি?
বাদল চন্দ্র সাহা: তড়িঘড়ি বলে কিছু নেই। হঠাৎ করেই কিন্তু ১৭ কোটি টাকা ছাড় দেয়া হয় নাই। ল্যাবের যে যন্ত্রপাতি আসছে, তার মূল্য কিন্তু নির্ধারিত। বিলিং সিস্টেমটাও চলমান। সুতরাং রানিং বিল দেয়া হয়েছে। কোনরকম ব্যত্যয় হয় নাই। আমরা সব মিলিয়ে দেখেছি, আমার টিম সব বুঝে নিয়েছে। প্যাকেটের ভিতর ল্যাবেরই মেশিনারিজ আছে-এ ব্যাপারে আমি এবং আমার টিম নিশ্চিত হয়েই রিানিং বিল দেয়া হয়েছে।