শুল্ক ফাঁকিবাজ চক্রের অস্ত্র যখন মিডিয়া ট্রায়াল
বিশেষ প্রতিনিধি
অমর কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের একটি বহুল প্রচারিত উক্তি আছে যে শুধুমাত্র লেখা জানলেই চলবে না, লেখা কোথায় থামাতে হলে সেটাও জানতে হবে। অমর কথাশিল্পী তাঁর এই উক্তির মাধ্যমে লেখকের দায়িত্বশীলতার কথা বুঝিয়ে ছিলেন। তবে এই দায়িত্বশীলতা, শুধুমাত্র লেখকের বেলায় সীমিত নয় গণমাধ্যম বা সাংবাদিকতার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে আমাদের দেশে গণমাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা বিষয় নিয়ে মাঝে-মধ্যে এমন ক্রেজ মাঝে-মধ্যে দেখা যায়, যাতে স্বাভাবিকভাবেই দায়িত্বশীলতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। গণমাধ্যমে এ ধরনের ক্রেজ বা মাতামাতি নামে যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি পীড়াদায়ক সেটি হলো মিডিয়া ট্রায়াল। সংবাদপত্র বা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার সুযোগ নিয়ে লাগামহীন মিডিয়া ট্রায়াল যেভাবে চলে, তাতে ক্ষেত্রবিশেষে মিথ্যা, অতিরঞ্জিত অথবা অর্ধসত্য ও উদ্দেশ্যপ্রনোদিত তথ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে বিবেক এবং গণমাধ্যম প্রচলিত রীতিনীতিই লঙ্ঘিতই হয়না, ভুক্তভোগীদের নির্বিচারের সুনাম ও সামাজিক মর্যাদা ক্ষুন্ন করার মাধ্যমে এমন মানসিক নির্যাতন করা হয়ে থাকে প্রকারান্তরে যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের সামিল।
সম্প্রতি দেশের এমন একজন সাবেক রাজস্ব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কথিত দুর্নীতির অভিযোগ এনে মিডিয়া ট্রায়াল চালানো হয়, কর্মজীবনে যিনি শত শত কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের এমন কৃতিত্ব স্থাপন করেছেন যে যেখানে তাঁর পোস্টিং ছিল সেখানেই শুল্ক আদায় কয়েকগুণ বেড়েছে। এর পাশাপাশি সুতা চোরাচালন বন্ধ করে শুধুমাত্র রাজস্ব বৃদ্ধিই নয়, এ দেশের সুতা কারাখানগুলো রক্ষা করার ক্ষেত্রে অবদান রাখেন এবং একাজের জন্য দুর্নীতি বিরোধী প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআইবি) কর্তৃক পুরস্কৃত হয়েছিলেন। এছাড়া রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও গতিশীলতা বৃদ্ধি করে দুর্নীতি ও জটিলতা দূরীকরণের জন্য চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে অটোমেশনসহ নানা সংস্কারমূলক কাজে অবদান রেখেছেন। রাজস্ব বৃদ্ধির স্বার্থে এ কাজ করতে গিয়ে তিনি শুল্ক ফাঁকির সঙ্গে জড়িত কিছু দুর্নীতিবাজ কাস্টমস কর্মকর্তা এবং অসাধু ব্যবসায়ী ও চোরাকারবারিদের টার্গেট হন। বিভিন্ন সময়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)সহ নানা দপ্তরে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রনোদিত অভিযোগ থেকে শুরু করে এক শ্রেণি পত্রিকায় নেতিবাচক রিপোর্ট প্রকাশ করে তাঁকে হয়রানী করা হয়। তবে যথাযথ তদন্তে তিনি বারবার নির্দোষ প্রমাণিত হন। সেই সঙ্গে কর্মদক্ষতা ও রাজস্ব বৃদ্ধি নজির স্থাপনের সুবাদে একের পর এক পদোন্নতি লাভ করে কর্মজীবনে এগিয়ে গেছেন।
আর এটাই তার বিরুদ্ধে কুচক্রী মহলের গাত্রদাহের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কখনো তার পিছু ছাড়েনি। শুল্কফাঁকির সঙ্গে জড়িয়ে চক্রটি সবসময় ওৎ পেতে ছিল কী করে তাকে বিপদে ফেলা যায়। তাদের ষড়যন্ত্রের শিকার ওই শুল্ক কর্মকর্তা এনবিআর সদস্য হিসেবে পদোন্নতি লাভের পর চক্রটি সেই সুযোগ পেয়ে যায়, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার আমলের শেষদিকে অত্যন্ত প্রভাবশালী শীর্ষ সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে নরসিংদী জেলার এক উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পারিবারিক বিরোধের সুযোগে তাঁকে দলে ভিড়ায়। এরপর পেশাগত জীবনে অত্যন্ত দক্ষ ও সফল শুল্ক কর্মকর্তাকে অত্যন্ত চতুরতার সঙ্গে তথাকথিত ‘ছাগলকাÐ’ সাজিয়ে মিডিয়া ট্রায়ালের মাধ্যমে তার পেশাগত এবং পারিবারিকভাবে শুধু নাজেহাল নয়, রীতিমতো দুর্বিষহ করে তোলা হয়।
এতক্ষণ যার কথা বলা হলো, তিনি হলেন অত্যন্ত কর্তব্যনিষ্ঠ এবং কর্মজীবনে প্রায় রেকর্ড তুল্য সাফল্যের অধিকারী সাবেক এনবিআর সদস্য ড. মো. মতিউর রহমান। তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে কুচক্রী মহল রাতারাতি অসত্য ও অতিরঞ্জিত তথ্য গণমাধ্যম এবং সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে তাঁকে দেশের প্রায় শীর্ষ দুর্নীতিবাজ হিসেবে প্রতিপন্ন করে। যেভাবে তাঁর পারিবারিক ছবিসহ মিথ্যা, অতিরঞ্জিত খবর প্রচার করা হয়, তা দেখে সচেতন ব্যক্তিমাত্রই আঁচ করতে পেরেছেন যে মহলবিশেষ ফাইল নিয়ে আগে থেকেই তৈরি ছিল, অর্থাৎ ব্যাপারটা পূর্বপরিকল্পিত। যেভাবে সত্য-মিথ্যা যাচাই না করে গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসানোর মতো এক শ্রেণির গণমাধ্যম উদ্দেশ্যপ্রনোদিত মিডিয়া ট্রায়ালের মাধ্যমে কর্মজীবনে সফলতার স্বাক্ষর রাখা এক এনবিআর কর্মকর্তার কেরিয়ারের যবনিকা টানতে বাধ্য করেছে সেটা খুবই দুঃখজনক।
যেহেতু কুচক্রী মহল তাঁর কর্মক্ষেত্রে এমন এক অপমানজনক পরিস্থিতির জন্ম দেয়, যার ফলে চাকরির মেয়াদ বছর তিনেক অবশিষ্ট থাকা সত্তে¡ও স্বেচ্ছায় অবসর নেন। পরবর্তীতে এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ সচিব বরাবরে লিখিত এক পত্রে ড. মো. মতিউর রহমান জানান যে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার আমলের প্রভাবশালী ব্যক্তি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) এর মহাপরিচালক লে. জেনালের (বর্তমানে বরখাস্ত) মোঃ মজিবুর রহমানের ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা ও ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দীর্ঘদিন ধরে শুল্ক ফাঁকিসহ নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত একটি মহলের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ভয়ানক তথ্য সন্ত্রাসের শিকার হয়ে তিনি এবং তার পরিবারের সদস্যরা মানসিক ও আর্থিকভাবে দারুণ বিপর্যস্ত।
উল্লেখিত আবেদনপত্রে মতিউর বলেন, “এই মহলটি গোয়েন্দা সংস্থা, গণভবন ও সিআরআই ইত্যাদি ব্যবহার করে গত ঈদ-উল-আযহার সময় কৌশলে তথাকথিত ‘ছাগলকাÐ’ নাটক সাজিয়ে আমাকে ও আমার পরিবারের সদস্যদেরকে মিথ্যা, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও অতিরঞ্জিত, অপতথ্য, সোশ্যাল মিডিয়া এবং গণমাধ্যমে প্রচার করে আমাকে ও আমার পরিবারের সদস্যদের ‘দুর্নীতিবাজ’ আখ্যা দিয়ে সমাজের সামনে হেয় প্রতিপন্ন করে এক বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে ঠেলে দেয়। উদ্দেশ্য ছিল জনগণের দৃষ্টি অন্যত্র সরিয়ে রাখা। কয়েক দশক ধরে যথাযথ নিয়মে কর পরিশোধসহ বৈধপন্থায় বিনিয়োগের মাধ্যমে আমার ও আমার পরিবারসহ আত্মীয়-স্বজনের শিল্প বাণিজ্য সম্পর্কে মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর ও অতিরঞ্জিত অপতথ্য ছড়িয়ে জনমনে এক বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে। এসব অপতথ্য কতটা ভিত্তিহীন ছিল, তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হলো- মাথা ন্যাড়া করে আমার সপরিবারে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার মিথ্যা সংবাদ প্রচার।”
মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার সাবেক এনবিআর সদস্য ড. মো. মতিউর রহমান এবং তার পরিবারের সদস্যদের নামে শুধু সপরিবারে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার মতো মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করেই ক্ষান্ত থাকেনি কুচক্রী মহল গুলশানের সাহাবুদ্দিন পার্কের পাশে ৮৩ নম্বর রোডে চারটি ফ্লাট, শান্তা ডেভেলপারের করা বিভিন্ন ভবনে ৮টি ফ্লাট ছাড়াও ধানমন্ডি ২৭ নম্বর এলাকার একাধিক ফ্লাট, কাকরাইলের স্কাইভিউ মমতা সেন্টার ভবনে ফ্লাট সহ স্ত্রী-সন্তান ও ঘনিষ্টদের নামে দুই ডজন ফ্লাট, বসুন্ধরা ডি বøকের ৭/এ রোডে এক ভবনের মালিক ইত্যাদি এমন সব সম্পদের মালিক তাঁকে করা হয়েছেÑ যা বাস্তবতা বিবর্জিত। এককথায় ডাহা মিথ্যা। এই মিথ্যাচার ছাড়াও ষড়যন্ত্রকারীরা এমন অপতথ্য গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় মতিউর ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ছড়িয়ে দিয়েছে যা অতিরঞ্জিত ও বিভ্রান্তিকর। যেমন বলা হয়েছে, টঙ্গিতে ৪০ হাজার বর্গফুটের এসকে ট্রিকস নামে ব্যাগ ম্যানুফ্যাকচারিং ও এক্সেসোরিজ আছে তাঁর। অথচ রপ্তানিমুখী এই শিল্প প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মতিউর নন, তার ছোট ভাই কাইয়ুম হাওলাদার সংশ্লিষ্টযার ১৪ শতাংশ শেয়ার আছে এবং ৩০ বছর যাবৎ তিনি সুনামের সাথে ব্যবসা করে আসছেন। উল্লেখ্য যে এই পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি উন্নতমানের লাগেজ ও ব্যাগ তৈরি করে যুক্তরাজ্য, জাপন, চীন ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে।
প্রতিষ্ঠানটিতে ১৫ শতের মতো লোক কর্মরত এবং এখান থেকে বার্ষিক ১২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি পণ্য রপ্তানি করা হয়। এই কোম্পানির ৭০ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের, অথচ এর মালিক বানানো হয়েছে মতিউরকে। একইভাবে ময়মনসিংহের ভালুকায় মতিউরের সম্পত্তি হিসেবে ৩০০ বিঘা জমির ওপর গেøাবাল সুজ লিমিটেড নামের এক জুতা কারখানা আছে বলে এমন করে অপপ্রচার চালানো হয়েছে, যা দেখে পাবলিক মনে করে ওই কারাখানার মালিক তিনিই। প্রকৃত অর্থে জুতা কারখানটি হলো একটি জয়েন্ট ভেঞ্চার প্রতিষ্ঠান। ওই প্রতিষ্ঠানে বিদেশি নাগরিকসহ স্থানীয় ছয়জন পরিচালক রয়েছে। রপ্তানিমুখী ওই প্রতিষ্ঠানে মতিউর রহমানের পরিবারের সদস্যদের (যাদের আলাদা আলাদা আয়কর নথি রয়েছে) বৈধ আয় থেকে বিনিয়োগকৃত ৩৫ শতাংশ মালিকানা রয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, কুচক্রী মহল ভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ী ইউনিয়নের ঝালপাজায় মৌজায় ৩০০ বিঘা জমির জুতা কারখানাটি স্থাপিত বলে যে অপপ্রচার চালিয়েছে, আদতে তা সত্য নয়। প্রতিষ্ঠানটির জমির প্রকৃত পরিমাণ ৮৯০ শতাংশ অর্থাৎ ৩৩ শতাংশ করে যদি বিঘা ধরা হয়, তাহলে জমির পরিমান প্রায় ২৯ বিঘা।
এভাবেই অর্ধসত্য, অতিরিঞ্জিত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তথ্য প্রচারের মাধ্যমে গাজীপুরের পূবাইলে মতিউর রহমানের পরিবার সদস্যদের আয়কর প্রদত্ত অর্থ বা সাদা টাকার বিনিয়োগ এবং অধিকাংশ লিজ নিয়ে ভাড়ার জমিতে প্রতিষ্ঠিত আপন ভুবন পিকনিক অ্যান্ড শ্যুটিংস্পট; নরসিংদীর মরজালে মতিউরের স্ত্রী লায়লা কানিজ লাকীর ওয়ান্ডার পার্ক অ্যান্ড ইকো রিসোর্ট নিয়েও বিভ্রান্ত ছড়ানো হয়েছে। মতিউরের পৈত্রিক বাড়ি বরিশালের মুলাদী উপজেলা বাড়িঘর ছাড়া প্রায় এক হাজার ৫০০ বিঘা জমি থাকার সম্পূর্ণ মিথ্যা গল্প রটানো হয়েছে। তথ্য সন্ত্রাসের মাধ্যমে কর্মজীবনে অত্যন্ত দায়িত্বশীল এবং কর্মক্ষেত্রে দুর্নীতির নজির নেই এহেন এনবিআর কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে একথাও রটানো হয় যে বন্ড সুবিধায় আনা পণ্য খোলাবাজারে বিক্রিতে ব্যবসায়ীদের সহযোগীতা করে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এছাড়া এই আষাঢ়ে গল্পও প্রচার করা হয় যে করোনাকালে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ৩০০ কোটি টাকার চেক স্ত্রীকে লিখে দিয়েছেন। মতিউরের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে তথ্য সন্ত্রাস বা মিডিয়া ট্রায়াল কতটা মিথ্যার উপর প্রতিষ্ঠিত সেটা বোঝা যায়, মাথান্যাড়া করে প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে তাকে সপরিবারে ভারতে পাঠিয়েই কুচক্রী মহল থেমে থাকেনি, তারা একথাও রটিয়ে ছিল, ভারত থেকে শক্তিশালী সিন্ডিকেটের সাহায্যে সরাসরি দুবাইয়ের উদ্দেশে রওয়ানা দেবেন। সেই সঙ্গে এই মিথ্যাচার চালানো হয়, সিঙ্গাপুর, মালায়েশিয়া, দুবাই ও যুক্তরাষ্ট্রে তার বিপুল পরিমানের সম্পদ রয়েছে।
সাবেক এনবিআর সদস্য ড. মো. মতিউর রহমান এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের পুঁজিবার বা শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ নিয়েও মিথ্যা, অতিরঞ্জিত এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত অপপ্রচার চালানো হয়েছে। বলা হয়েছে, বিভিন্ন কোম্পানিতে তাঁর ৬০ লাখের বেশি শেয়ার ছিল। পরে পুঁজিবাজারে কোম্পানিগুলোর শেয়ার কয়েকগুণ মূল্য বৃদ্ধির পর তিনি তাঁর হাতে থাকা প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রি করে মোটা অংকের মুনাফা নেন। মতিউরের শেয়ার সংক্রান্ত সংবাদ এমনভাবে প্রচার করা হয়েছে, তাতে মনে হবে তিনি বুঝি বেআইনি শেয়ার কারসাজিতে জড়িত। এভাবেই কুচক্রী মহল তাঁকে শেয়ার কেনা-বেচার ম্যানিপুলেশেনে বা কারসাজিতে জড়িয়ে হয়রানীর অপচেষ্টা করেছে। অথচ অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রকৃত সত্য ভিন্ন। ছাত্রজীবনে মতিউর রহমান অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগে তিনি অনার্সে ফার্স্ট ক্লাস থার্ড এবং মাস্টার্সে ফার্স্ট ফার্স্ট হন। এমবিএ পরীক্ষাতেও সিজিপিএ-এর চারের মধ্যে ৩.৮ অর্জনের কৃতিত্ব দেখান। এহেন ব্যক্তির পক্ষে পুঁজিবাজার নিয়ে আগ্রহ থাকাটাই স্বাভাবিক। যে কারণে তিনি কর্মজীবনে প্রবেশের পর তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেস্টন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে “ইনডিভিজুয়াল অ্যাচিউড অব শেয়ার হোন্ডারস ইন রেসপেক্ট অব ঢাকা স্টক একচেঞ্জ” বিষয়ের ওপর পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ২০০৯ সালে কুচক্রী মহলটি পত্রিকান্তরে ভুয়া রিপোর্ট প্রকাশের মাধ্যমে মতিউর রহমানকে চাকরি থেকে ওএসডি করাতে সক্ষম হয়েছিল। সে সময় তিনি সম্পত্তি বিক্রি এবং ফ্লাট মর্টগেজ রেখে পাওয়া টাকার শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করেন। দুটি প্রাথমিক শেয়ারে বিনিয়োগ করে বেশ লাভবান হন। পরবর্তীতে এ ধরনের প্রাথমিক শেয়ার বা সেকেন্ডারি মার্কেটের ভালো শেয়ার পেলে সুযোগ বুঝে বিনিয়োগ করেছেন। কখনোই গ্যাম্বলিং ট্রেডিং বা কারসাজির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। বরং বিনিয়োগ করতে গিয়ে অনেক সময় প্রতারণার শিকারও হয়েছেন। বিনিয়োগকৃত টাকা ফেরত পাননি।
সাবেক এনবিআর সদস্য ড. মো. মতিউর রহমান দীর্ঘ ৩২ বছর চাকরি করেছেন। তাঁর চাকরি জীবনে কখনো বিভাগীয় তদন্ত বা দুর্নীতির অভিযোগ আসেনি। উপরন্তু বিভিন্ন সময়ে ৩৪ লক্ষ টাকা পুরস্কার পেয়েছেন। আগেই বলা হয়েছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অধীনে তিনি যেখানেই কর্মরত ছিলেন সেখানেই অনিয়ম ও শুল্ক ফাঁকি রোধ রাজস্ব বৃদ্ধির কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। তাঁর প্রথম কর্মস্থল ছিল কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট ঢাকা (উত্তর) এর টঙ্গি ডিভিশনে। সেখানে ১৯৯৪ সালের মে থেকে ১৯৯৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত ডিভিশনাল অফিসার পদে কর্মরত থাকা অবস্থায় তাঁর একান্ত প্রচেষ্টায় ওই ডিভিশনে গড়ে মাসিক রাজস্ব সাত কোটি টাকা থেকে ১২ কোটি পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। কোহিনুর কেমিক্যাল কোম্পানি লিমিটেড কর্তৃক প্রতি মাসে ৬০ লাখ টাকা শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার ঘটনা উদঘাটন করে তিনি চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিলেন। শুল্ক ফাঁকি উদঘাটনের স্বীকৃতিস্বরূপ পুরস্কার বাবদ তিনি ১৭ লাখ টাকা লাভ করেন।
২০০০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০০১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত বেনাপোল কাস্টমস স্টেশনে কর্মরত থাকা অবস্থায় মতিউর রহমান বেনাপোল চেক পোস্টের দুর্নীতিসহ অবৈধ কর্মকাÐ সম্পূর্ণ নির্মূল করার জন্য দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। এ কারণে সেখানকার চোরাকারবারের সঙ্গে জড়িত একটি দুষ্টচক্র তাঁকে হত্যা চেষ্টা চালায়। বেনাপোলে থাকার সময়ে শুল্ক ফাঁকির বিভিন্ন ঘটনা প্রতিহত করার কাজের স্বীকৃতিবাবদ ৭.৫ লাখ পুরস্কার তাঁকে দেওয়া হয়েছিল। ২০০১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০০৩ সালের ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত ড. মো. মতিউর রহমান কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটে কর্মরত থাকা অবস্থায় এই দপ্তরের সংস্কারমূলক কর্মকাÐ এবং দুর্নীতি রোধের ক্ষেত্রে বেশ দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছিলেন। সে সময় তাঁর কাজ এবং পদক্ষেপসমূহ খুব প্রশংসীত হয়েছিল। অসাধারণ দক্ষতা ও কর্তব্যনিষ্ঠার কারণে মতিউর রহমানকে কক্সবাজার ভ্যাট ডিভিশনে বদলি করা হয়। যার মধ্যে ছিল চোরাচালানের জন্য তখন কুখ্যাত টেকনাফ স্থলবন্দর। সেখানে চোরাচালান বন্ধের যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ায় এক বছরের মধ্যে শুল্ক আদায় ৪৪ কোটি টাকায় উন্নীত হয়Ñ যা পূর্ববর্তী বছরে ছিল মাত্র ৭ কোটি টাকা।
শুরু থেকেই বিভিন্ন কর্মস্থলে একের পর এক সাফল্যের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৪ সালের ফেব্রæয়ারিতে ড. মো. মতিউর রহমানকে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরে বদলি করা হয়। ২০০৬ সালের অক্টোবর পর্যন্ত সেখানে চাকরিরত অবস্থায় ৬২৭ কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকি উদঘাটনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বুড়িমারী এবং হিলি কাস্টমস স্টেশনে শুল্ক ফাঁকির কৌশলসমূহ চিহ্নিত করে তা প্রতিরোধের উদ্যোগ নেন। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরে থাকার সময় তিনি ৭২.৫ কেজি হোরাইন চোরাচালন ধরার ক্ষেত্রে অবদান রাখেন এবং বাংলাদেশে হেরোইন পাচারের রুটসমূহ শনাক্ত করে প্রতিবেদন পেশ করেন। পেশাগত কৃতিত্ব প্রদর্শনের ফলশ্রæতিতে ড. মো. মতিউর ২০০৬ সালের নভেম্বরে অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে যোগ দেন। ওই সময়েÑ বিশেষ করে ‘ওয়ান-ইলেভেন’ খ্যাত ক্ষমতার পট-পরিবর্তনের পর তৎকালীন সেনা সমর্থিত তত্ত¡াবধায়ক সরকার চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার জটসহ নানা অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলার পরিপ্রেক্ষিতে সংস্কারমূলক কাজের উদ্যোগ নেয়।
এ লক্ষ্যে গঠিত কমিটির সদস্য সচিব ছিলেন ড. মো. মতিউর রহমান। যে সব সমস্যা সমাধানে তিনি অগ্রণী ভ‚মিকা রাখেন, তার মধ্যে ছিল ১৯৮৩ সাল থেকে সেখানে জমে ওঠা বিষাক্ত ও বর্জ্য পদার্থসহ পরিত্যক্ত মালামালের ধ্বংস সাধন। যে কাজ করার জন্য যেখানে ১০ কোটি টাকা মূল্যের একটি বিশেষায়িত মেশিন কেনার প্রস্তাব করা হয়েছিল, সেখানে মাত্র ১৬ লাখ টাকা ব্যয় করে ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টসের ফার্নেস ব্যবহারের মাধ্যমে ওইসব বর্জ্য নিরাপদে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়েছিল। সংস্কার কমিটির দুর্নীতি বিরোধী পদক্ষেপের ফলে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের সেবার মান উন্নত হওয়ায় দুষ্টচক্র ও সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রিত নিলাম ব্যবস্থা নিস্ক্রিয় করা হয়।
সেই সঙ্গে ডাইরেক্ট ট্রেডার্স ইমপুট সিস্টেম প্রচলন এবং ডাটাবেজের মাধ্যমে সকল স্টেকহোল্ডারের তথ্যাদির উন্নয়নের পাশাপাশি এসেস কন্ট্রোল সিস্টেম প্রসার ঘটানো হয়। ফলশ্রæতিতে একদিকে রাজস্ব বৃদ্ধি আরেকদিকে দুর্নীতি হ্রাস পায়। এহেন কৃতিত্বের পরও দেখা গেছে, ড. মো. মতিউর রহমানের পেশাগত শত্রæরা তার বিরুদ্ধে সক্রিয় হয়ে হয়রানী করার জন্য মিথ্যা গুজব রটানো থেকে শুরু করে তার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ ও অপপ্রচার চালিয়ে গেছে। এর প্রেক্ষিতে তাঁকে রাজশাহীর কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটে অতিরিক্ত কমিশনার পদে বদলি করা হয়। তবে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে অটোমেশন এবং সংস্কার কাজে তার দক্ষতা ও যোগ্যতা দেখে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের যৌথবাহিনী তাঁকে দায়িত্বে বহাল রাখে। ফলে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে অটোমেশন ও সংস্কার কাজে ব্যস্ত থাকলেও বেতন তুলতে হতো রাজশাহী কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট থেকে। এই সংস্কার ও অটোমেশন নানা মহলে প্রশংসিত হলেও ড. মো. মতিউর রহমানের পেশাগত শত্রæদের ঈর্ষা অব্যাহত থাকে। কর্মক্ষেত্রে মহল বিশেষের চক্রান্ত ও হয়রানীর শিকার হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি ২০০৮ সালের ৬ অক্টোবর থেকে ২০০৯ সালের ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রিসার্চ উইং-এর পরিচালক পদে যোগ দেন। সেখানে অল্প সময়ের মধ্যে বেশ কিছু সংস্কারমূলক কাজ সম্পন্ন করেন। যার মধ্যে ছিল এ ২১ প্রকল্পের সহযোগিতায় পররাষ্ট্র দপ্তর ওয়েবসাইটের আধুনিকায়ন।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন হওয়ার পর পেশাগত ক্ষেত্রে ড. মো. মতিউর রহামানের শত্রæরা প্রতিহিংসাবশত আবার তাঁর পিছনে লাগে। তাঁকে ছাত্রশিবিরের ক্যাডার বলে অপপ্রচার চালায়। তাঁকে ওএসডি করা হয়। অথচ তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসিন হলের আবাসিক ছাত্র থাকা অবস্থায় তো দূরের কথা, কখনোই কোনো ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। এক্ষেত্রে তাঁর আবাসিক শিক্ষক অধ্যাপক ড. আবুল বারাকাতের অভিমত এবং সরকারি গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতে তিনি আবার চাকরিতে ফিরে আসেন। ২০০৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ২০১১ সালের ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ড. মো. মতিউর রহমান কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের অতিরিক্ত কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেন। সে সময় এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নাসিরউদ্দিনের (পরবর্তীতে দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার) সহযোগিতায় তিনি বন্ডেড ওয়্যারহাউস পদ্ধতির অটোমেশনের গুরু দায়িত্ব পালন করেন। অটোমেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে গিয়ে তাঁকে সকল স্টেকহোল্ডারের মতামত এবং সহযোগিতার জন্য ২৭টি সেমিনারের আয়োজন করতে হয়। অতঃপর ড. মো. মতিউর রহমান কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট ঢাকা (পশ্চিম)-এর কমিশনার হিসেবে ২০১৫ সালের ৬ এপ্রিল থেকে ২০১৬ সালের ২২ আগস্ট পর্যন্ত অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। সব ধরনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত নতুন অফিস স্থাপন; অত্যন্ত স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ১৩০ জন কর্মচারী নিয়োগ এবং ৫০ শতাংশের বেশি রাজস্ব প্রবৃদ্ধির সাফল্য তিনি প্রদর্শন করেন।
বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ) ভ্যাট-এর কমিশনার পদে ২০১৬ সালে ২৮ আগস্ট থেকে ২০১৮ সালের ৮ আগস্ট পর্যন্ত দায়িত্ব পালনকালে ড. মো. মতিউর রহমানের উচুঁ মাত্রায় নিষ্ঠার সাথে তাঁর দপ্তরকে আধুনিকায়ন এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে সক্ষম হন। তাঁর এই ডায়নামিক নেতৃত্বের ফলে এলটিইউ ভ্যাট ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত মোট রাজস্ব সংগ্রহ করেছিল ১৯,৯৭৫ কোটি টাকা। একই সময়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মোট ভ্যাট সংগ্রহ ছিল ৩৫,৭০৫ কোটি টাকা। ওই অর্থবছরে যেখানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৭ শতাংশ, সেখানে এলটিইউ ভ্যাট-এর প্রবৃদ্ধি ১৯.১৭ শতাংশ। এই রেকর্ড পরিমাণ রাজস্ব আদায়ের পাশাপাশি এলটিইউ ভ্যাট কর্তৃপক্ষ সে সময় মোট ৩০৫৫.৭০ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি শনাক্ত করেছিল। কমিশনার হিসেবে মতিউর রহমানের এই সর্ব বৃহৎ করদাতা সেক্টরে কাজের ক্ষেত্রে বিপুল অভিজ্ঞতা রয়েছে। বিশেষ করে টোবাকো খাতে বিভিন্ন ভ্যাট কমিশনারেটকে কাজে লাগান। বর্তমানে এলটিইউ ভ্যাট দুটি বৃহৎ সিগারেট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ব্রিটিশ আমেরিকা টোবাকো এবং ঢাকা টোবাকো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড থেকে রাজস্ব আদায় তাঁর প্রদর্শিত পথেই এগুচ্ছে।
এলটিইউ ভ্যাটের কমিশনার হিসেবে সাফল্যের নজির স্থাপনের পর ড. মো. মতিউর রহমান ২০১৮ সালের ১৮ আগস্ট থেকে ২০২১ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত লিয়েন ছুটিতে থাকা অবস্থায় আর্ন্তজাতিক বাণিজ্যে জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে চীনের জিয়ামেন গোল্ড বেসিন ট্রেডিং লিমিটেডের সঙ্গে কাজ করেছেন। ২০২১ সালের ১৬ আগস্ট থেকে ২০২৪ সালের ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালের মেম্বার (টেকনিক্যাল) হিসেবে তাঁর বিচারাধীনে থাকা বহু অমীমাংসিত মামলা নিষ্পত্তি এবং যথাযথ রায় প্রদান করেন। ২০২৪ সালের ৩ জানুয়ারি থেকে ১৮ ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট আপিল কমিশনারেটের কমিশনার হিসেবে স্বল্প সময়ের মধ্যে একই ধারা অব্যাহত রাখেন। ২০২৪ সালের ২২ ফেব্রæয়ারি থেকে কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালের প্রেসেডিন্ট এর দায়িত্ব গ্রহণের পর স্বেচ্ছা অবসরের আগ পর্যন্ত অমীমাংসিত মামলা সমূহ নিষ্পত্তি এবং যথাযথ রায় প্রদানের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভ‚মিকা পালন করেছেন। ড. মো. মতিউর রহমান কর্মজীবনের নিয়মিত দাপ্তারিক কাজের পাশাপাশি ২০২২ সালের ২ ফেব্রæয়ারি থেকে সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হিসেবেও অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন।
এছাড়া তিনি সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত বরিশাল বিভাগ অফিসার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ২০১৬ সাল থেকে অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে পালন করেন। দীর্ঘ কর্মজীবনের বিভিন্ন সময়ে ড. মো. মতিউর রহমান দেশে-বিদেশে বেশ কিছু পেশাগত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ভ্যাট অ্যাকাউন্টিং, কাস্টমস মর্ডানাইজেশন, কাস্টমস অটোমেশন, পোস্ট ক্লিয়ারেন্স অডিট, ভ্যাট অডিট ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণ তাঁকে একজন দক্ষ ও সফল কর্মকর্তা হিসেবে গড়ে তোলে। ফলশ্রæতিতে কর্মজীবনে নজিরবিহীন সাফল্যের কারণে তিনি পেশাগত ক্ষেত্রে অনেকের ঈর্ষার পাত্র এবং শুল্ক ফাঁকিবাজ চক্রের শত্রæতে পরিণত হন। ফলশ্রæতিতে তাঁর বিরুদ্ধে বার বার দুদকসহ বিভিন্ন দপ্তরে মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগ দায়ের করে বার বার হয়রানী করা হয়েছে। প্রতিবারই এসব অভিযোগ তদন্ত করে নথিভুক্ত করা হয়, অর্থাৎ মতিউর অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পান। এর মধ্যে সর্বশেষ নথিভুক্ত দুদকের স্মারক নম্বর : ০০.০১.০০০০.৫০০.৫০.০২৬.২১.২৮/১(৮) তারিখ ০২ মার্চ ২০২১। যদিও শুল্ক ফাঁকিবাজ চক্রের প্রতিহিংসাবশত মিডিয়া ট্রায়ালের পাশাপাশি নতুন করে হয়রানীর অংশ হিসেবে বর্তমানে দুদক মতিউরের বিরুদ্ধে আরেক দফা তদন্ত করছে। শুধু তাই নয়, বিগত সরকারের প্রভাবশালী মহলের চাপে মতিউর ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের যেমন বিদেশে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, তেমনই তাদের ব্যক্তিগত এবং প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাংক এবং বিও অ্যাকাউন্টও জব্দ করে আর্থিকভাবে এক নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।
ড. মো. মতিউর রহমান এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরা যথাযথ আয়কর ফাইলে দেখানো সম্পদের বাইরে, বেআইনিভাবে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের মালিক হয়েছেন কিনা সেটা দুদক বা যে কোনো সংস্থার নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বেরিয়ে আসবে। কিন্তু যেভাবে ‘ছাগলকাÐ’ নাটক সাজিয়ে মিডিয়া ট্রায়ালের মাধ্যমে তাদেরকে মানসিক ও অর্থনৈতিকভাবে হেনস্তা করা হচ্ছে, তা কী সমর্থনযোগ্য? মিডিয়া ট্রায়াল কতটা নির্মম ও দুঃসহ সেটা ভুক্তভোগীই মাত্র জানেন। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান পদ্মা সেতুতে পরামর্শক নিয়োগে তথাকথিত দুর্নীতির অভিযোগে মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার হয়েছিলেন। এক পর্যায়ে তিনি সাংবাদিকদের বলতে বাধ্য হন, “আপনারা আমাকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করুন। এই রকম চাপে যে কোনো লোক হার্ট অ্যাটাক করতে পারে বা ব্রেইনস্ট্রোক করতে পারে।” পরবর্তীতে দেখা গেল, ড. মশিউরের বিরুদ্ধে দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হয়নিÑ এমন কি কানাডার আদালতেও ওই অভিযোগ ভুয়া বলে আখ্যায়িত হয়।
আসলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার সুযোগ নিয়ে হলুদ সাংবাদিকতা, অপসাংবাদিকতা বা মিডিয়া ট্রায়াল কখনোই বিবেকবান নাগরিকদের কাছে কাম্য হতে পারে না। অনেকের মতে এটা অনেকটাই নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়ার মতোই অপরাধের সামিল। কেউ দুর্নীতি বা অপরাধ করলে তার বিচার করবে প্রচলিত আইন অনুসারে আদালত। বিচারে অপরাধ প্রমাণিত হলে আদালত শাস্তি বা সাজা দিবে। সেই বিচারের আগেই গণমাধ্যমে প্রায় জেহাদ ঘোষণা করেই একের পর এক উদ্দেশ্য প্রনোদিত ও বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রকাশের সাহায্যে মিডিয়া ট্রায়াল অর্থাৎ বিচারের আগেই বিচার করার বিশেষ করে আদালতে ‘দুর্নীতিবাজ’ প্রমাণিত হওয়ার আগেই ব্যক্তি বিশেষকে ‘দুর্নীতিবাজ’- এর তকমা দেওয়া কতটা সমীচীন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠাই স্বাভাবিক। পরবর্তীতে কোন ব্যক্তি বা পরিবার আদালতে দুর্নীতির অভিযোগ থেকে নির্দোষ প্রমাণিত হলেও সামাজিকভাবে তারা যে ক্ষতির সম্মুখীন হন তা কখনোই পূরণ হওয়ার মতো নয়। মিডিয়া ট্রায়াল শুধু ড. মো. মতিউর রহমান এবং পরিবারের সদস্যদের জন্যই নয়, যে কোন ভুক্তভোগীর জন্যই দুঃসহ। জনস্বার্থেই বিষয়টি নিয়ে ভেবে দেখার প্রয়োজন আছে বলে গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞ মহল মনে করেন।