ডার্ক মোড
Friday, 01 November 2024
ePaper   
Logo
চাঁদপুরে ঘন কুয়াশায় নৌ-ডাকাতির ঝুঁকি

চাঁদপুরে ঘন কুয়াশায় নৌ-ডাকাতির ঝুঁকি

 

নিজস্ব প্রতিবেদক 


চাঁদপুরে নৌ পথে ঘন কুয়াশার কারণে ডাকাতির ঝুঁকি বেড়েছে। ইতোমধ‌্যে পদ্মা-মেঘনা-ডাকাতিয়ায় বেশ কিছু ছোট-বড় যাত্রীবাহী লঞ্চে অনেকগুলো ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্র মতে, চাঁদপুর থেকে বিভিন্ন রুটে ছোট-বড় ২৪ টি যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল করে। ঘন কুয়াশার কারণে লঞ্চগুলো ধীর গতিতে চলে। এঅবস্থায় পড়া লঞ্চগুলোকে টার্গেট করে আক্রামণ চালায় ডাকাতদল।
সূত্রমতে আগে থেকেই স্পিডবোট বা স্টিলবডি ট্রলারে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে প্রস্তুত থাকে ডাকাতদল। সুযোগ মতো পরিকল্পিত জায়গায় লঞ্চগুলো আটকা পড়লে বা ধীর গতিতে চলতে দেখলেই সক্রিয় হয়ে ওঠে তারা।
গত ২১ ডিসেম্বর এমভি শাহ আলী-৪ লঞ্চটি ডাকাতের কবলে পড়ে। লঞ্চের মালিক আক্তার হোসেন রাইজিংবিডিকে জানান, দুটি স্পিডবোটে করে দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র ও রামদাসহ ডাকাতরা লঞ্চে উঠে পড়ে। ১৫-২০ জনের একটি দল। তারা যাত্রীদের জিম্মি করে মারধর করে এবং বিভিন্ন মূল্যবান জিনিসপত্র লুটে নেয়। ডাকাতি করে চলে যাওয়ার সময় যাত্রীরা বিল্লাল হোসেন নামে এক ডাকাতকে আটক করে। অন্যরা স্পিডবোট নিয়ে মাওয়ার দিকে চলে যায়।
নৌ পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আটক ডাকাত সিদ্ধিরগঞ্জের পাইনাদি নতুন মহল্লার আকতার খানের ছেলে বিল্লাল হোসেন। সে তার সহযোগী অন্যদের নাম-পরিচয় পুলিশকে জানিয়েছে।
তারা হলো- ফরিদ গাজী, রাজু সরকার, কবির খালাসী চৌধুরী, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা নবীনগর এতিমখানা এলাকার আমির জসিম, মহসিন সরকার, আবদুল্লাহ, মুরাদ, খালেক, রাব্বী, জুবায়ের, নুর ইসলাম, রাঙ্গা বাচ্চু, ইব্রাহিমসহ অজ্ঞাত আরও কয়েকজন। এ ঘটনায় পরবর্তীতে এদেরকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে।
চাঁদপুর নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জহিরুল হক বলেন, ‘নৌ পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের নির্দেশে ২১ জন পুলিশ সদস্য নিয়ে আমরা চারটি টিম গঠন করে ডাকাতি রোধে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছি। লঞ্চ টার্মিনালে চেকপোস্টে নজর রাখছি। আমাদের এই টিমে পাঁচ জনের অস্ত্রসহ স্পেশাল টিমও রেখেছি। মূলত শীতের মৌসুমকে প্রাধান্য দিয়ে ডাকাতিরোধে আমাদের এই কর্মতৎপরতা।’
নৌ পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘নৌ পথে ডাকাতি রোধে সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা, আবার রাত ৮টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত দুই শিফটে ১২টি টিমে অর্ধশতাধিক পুলিশ ডিউটি করছে। এম.এল. শাহআলী-৪ লঞ্চে ডাকাতির ঘটনায় ফরিদ গাজী ও বিল্লাল নামে দুজনকে আটক করেছি। এছাড়াও ষাটনলে মকবুল-২ লঞ্চে ডাকাতির ঘটনায় মুন্সীগঞ্জ থেকে মো. খালেক, মো. ফরিদ গাজী, মো. তাজু ও রাঙ্গা বাচ্চুকে গ্রেপ্তার করেছি। অন্য ডাকাতদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
বাংলাদেশ সচেতন নাগরিক কমিটি চাঁদপুর জেলা শাখার সদস্য সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা অজিত সাহা রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘নৌ পথে ঘন ঘন ডাকাতি হচ্ছে। গত ২৫ বছরে এমনটা হয়নি। আগে শুধু থানা পুলিশ ছিল। এখন তো নৌ-পুলিশ ও কোস্টগার্ড আছে। থানা পুলিশের ফাঁড়ির সংখ্যাও বেড়েছে। এরপরও এমন ডাকাতির ঘটনায় আমরা শঙ্কিত ও বিস্মিত।’
নৌ পুলিশের চাঁদপুরের এসপি কামরুজ্জামান জানান, শীতকালে কুয়াশার কারণে নৌপথে ডাকাতি বেড়ে যায়। ঘন কুয়াশায় নৌযানগুলো ধীরে চলাচল করে। তাই লঞ্চগুলো তাদের ডাকাতদের সহজ টার্গেটে পরিণত হয়। এছাড়া ডাকাতির পর কুয়াশার মধ‌্যে নিজেদের সহজেই লুকিয়ে ফেলতে পারে তারা।
তিনি বলেন, ‘বেশ কয়েকটি ডাকাতি সংঘটিত হওয়ার স্পট চিহ্নিত করেছি আমরা। ডাকাতরা কোন রুটগুলো ব্যবহার করছে এবং কোন রুটে পালিয়ে যাচ্ছে সেগুলো নির্ণয়ের চেষ্টা চলছে। নৌপথে ডাকাতিরোধে প্রয়োজনে যাত্রীবাহী লঞ্চগুলোতে সাদা পোশাকে পুলিশ মোতায়েন করা হবে।’

 

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন