
গ্রামীণফোনের পৃষ্ঠপোষকতায় উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন হলো ঐতিহাসিক জব্বারের বলী খেলার ১১৬তম আসর চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী কুস্তি প্রতিযোগিতা
বিজনেস ডেস্ক
শত বছরের ঐতিহ্য বহনকারী আব্দুল জব্বারের বলী খেলার ১১৬তম আসর আজ বিকেলে চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক লালদীঘি ময়দানে উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছে। এবারের প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন বাঘা শরীফ (শরীফ বলী) এবং রানার্স-আপ হয়েছেন রাশেদ বলী। দেশের শীর্ষ মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন এবারের আয়োজনের পৃষ্ঠপোষকতা করেছে।
বলী খেলাকে ঘিরে তিন দিনব্যাপী একটি বৈশাখী মেলারও আয়োজন করা হয়েছে, যা স্থানীয় সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও উৎসবের আবহকে আরও বর্ণিল করে তুলেছে।
বিকেল ৪টায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হাসিব আজিজ এই প্রতিযোগিতার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বলী খেলা আয়োজক কমিটি ২০২৫-এর সদস্য সচিব এবং আব্দুল জব্বার সওদাগরের নাতি শওকত আনোয়ার বাদল, গ্রামীণফোন চট্টগ্রাম বিজনেস সার্কেলের সার্কেল বিজনেস হেড সামরিন বোখারী, চট্টগ্রাম সেন্ট্রালের রিজিয়নাল হেড মোরশেদ আহমেদ, এবং মার্কেট কমিউনিকেশন হেড মো. আব্দুল্লাহ আল নূরসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ১৪৭ জন বলী এবারের প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। নির্ধারিত নিয়মে প্রতিযোগীরা একে অপরের সঙ্গে কৌশল ও শক্তির লড়াইয়ে নামেন। কয়েক ধাপের পর্ব শেষে মূল চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়। বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
লালদীঘি ময়দান ও আশেপাশের এলাকা ছিল বৈশাখী মেলার আমেজে মুখরিত। হস্তশিল্প, ঐতিহ্যবাহী খাবার, খেলনা ও নানান পণ্যে সমৃদ্ধ মেলাটি তিন দিনব্যাপী চলে—বলী খেলার আগের দিন, খেলার দিন ও পরের দিন।
বলী খেলা আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব শওকত আনোয়ার বাদল বলেন, “এই বলী খেলা আমাদের গৌরবময় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। প্রতিবছরের মতো এবারও আমরা সুষ্ঠুভাবে এই আয়োজন সম্পন্ন করতে পেরেছি। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ, সিটি করপোরেশন ও মেলা কমিটিসহ সকলের সহযোগিতায় এটি সম্ভব হয়েছে। বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই গ্রামীণফোনকে, যারা আমাদের পাশে থেকে এই ঐতিহ্যকে ধারণে সহায়তা করেছে।”
গ্রামীণফোনের সামরিন বোখারী বলেন, “জব্বারের বলী খেলার মতো একটি ঐতিহ্যবাহী এবং জনপ্রিয় আয়োজনের অংশ হতে পেরে আমরা গর্বিত। এই শতবর্ষী খেলা কেবল ক্রীড়া নয়, এটি এক ঐক্যের উৎসব। ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি শুধু অতীতের অহঙ্কার নয়, বরং ভবিষ্যতের পথ চলার শক্তি। আমরা দেশের সাংস্কৃতিক পরিচিতিকে উৎসাহ দিয়ে মানুষের হৃদয়ে সংযোগ স্থাপন করতে চাই। এই ধরনের আয়োজনে গ্রামীণফোন ভবিষ্যতেও পাশে থাকবে।”
উল্লেখ্য, ১৯০৯ সালে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে চট্টগ্রামের যুব সমাজকে ঐক্যবদ্ধ ও শারীরিকভাবে সুদৃঢ় করতে বলী খেলার সূচনা করেন বদরপাতি এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আব্দুল জব্বার সওদাগর। পরবর্তীতে তার নামানুসারেই এই আয়োজন ‘জব্বারের বলী খেলা’ নামে পরিচিতি লাভ করে। শত বছরের বেশি সময় ধরে চট্টগ্রামের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে এই বলী খেলা।
