কুলাউড়ায় ইউপি চেয়ারম্যানের অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করার দাবি ইউনিয়নবাসীর
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য খোরশেদ আহমদ খান সুইটের পদত্যাগ ও অপসারণ চেয়ে গত ১২ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসকের কাছে সরাসরি অনাস্থা প্রস্তাব দাখিল করেন ওই ইউনিয়নের ১২ সদস্য। মাত্র ২দিনের ব্যবধানে ১১ জন সদস্য সেই অনাস্থা প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নেন। তবে ইউপি সদস্যদের মধ্যে কেবল ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য ও ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি ময়নুল হক সোনা মিয়া অভিযোগ প্রত্যাহার করেননি। এ ঘটনায় গোটা ইউনিয়নসহ সর্বত্র চলছে তোলপাড়। ইউনিয়নের সাধারণ মানুষের দাবি মেম্বাররা তাদের স্বার্থে অভিযোগ প্রত্যাহার করেছেন তাতে কোন সমস্যা নেই। তবে প্রশাসনের কাছে মেম্বাররা যে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন সেগুলোর তদন্তক্রমে অনিয়ম দুর্নীতির ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
জেলা প্রশাসকের কাছে যে অনাস্থা প্রস্তাব দেয়া হয়েছে তাতে অভিযোগ করা হয় চেয়ারম্যান খোরশেদ আহমদ খান সুইট ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে বেপরোয়া হয়ে উঠেন। ২০২১-২২ এবং ২০২২-২৩ অর্থ বছরে বরমচাল ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ড থেকে ইউনিয়ন কর আদায় বাবত প্রায় ১২ লক্ষ টাকা এককভাবে আত্মসাৎ করেছেন। ইউনিয়ন পরিষদের ভিজিএফ চালের সরকারকৃত কেরিংয়ের ৮৩ হাজার ৮শত টাকা আত্মসাৎ করেন। তার সকল অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়গুলো নিয়ে পরিষদের মাসিক সভায় সকল ওয়ার্ডের সদস্য প্রতিবাদ করলে তিনি ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে এড়িয়ে যেতেন। এছাড়াও এই দুর্ণীতিবাজ চেয়ারম্যান সরকারের পক্ষ থেকে গভীর নলকূপ বরাদ্দে অনিয়ম ও অতিরিক্ত অর্থ আদায় করেন। অর্থ আদায়ের বিষয়টি তাকে জিজ্ঞাসা ও প্রতিবাদ করায় তিনি উল্টো ইউপি সদস্যদের হুমকি প্রদান করেন। চেয়ারম্যানের প্রয়াত পিতা কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। তার ছোট ভাই সদরুল আহমেদ খান পলিট আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অর্থ উপ-কমিটির সদস্য থেকে সরকারের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে বর্তমানে গা ঢাকা দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন। ইউপি সদস্যরা অভিযোগে আরও উল্লেখ করেন, আমরা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত সদস্যবৃন্দের সাথে তিনি কোনরূপ স্বমন্বয়, পরামর্শ ব্যতিরেকে টিআর, কাবিখা, কাবিটা প্রকল্প গ্রহণ করে সম্পূর্ণ ইচ্ছামাফিক প্রকল্প চেয়ারম্যান নিয়োগ করে প্রকল্পের কাজ না করেই সমুদয় টাকা আত্মসাৎ করেন। ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক প্রদত্ত বিভিন্ন সনদ প্রদানে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ফি ছাড়াও অতিরিক্ত টাকা আদায়, সরকারি সম্পদ আত্মসাৎ, বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ না করিয়ে অর্থ উত্তোলন করা আত্মসাৎ, ইউনিয়ন পরিষদের নিজস্ব একাউন্টে টাকা জমা না রেখে বেশিরভাগ অংশের সমুদয় টাকা তিনি ভোগ করেছেন। গত ২২ সেপ্টেম্বর ইউনিয়ন পরিষদের সভায় প্রত্যাহারের বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও সদস্যদের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝির অবসান বলে বিষয়টি প্রকাশ করলে ইউনিয়নের মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তারা চেয়ারম্যানের অনিয়ম ও দুর্নীতির সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন। সেই সাথে নেটিজেনরা দাবি করেন, ইউপি সদস্যরা অনৈতিকভাবে প্রভাবিত হয়ে অনাস্থা প্রস্তাব প্রত্যাহার করেছেন। তবে ইউপি সদস্যদের মধ্যে কেবল ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য ময়নুল হক সোনা মিয়া অভিযোগ প্রত্যাহারে চেয়ারম্যানের সাথে কোন আপোষ করেননি। একাধিক নির্ভরযোগ্য সুত্র জানায়, ইউপি সদস্যদের কাজের কিছু বকেয়া বিল পাওনা ছিলো। সেগুলোসহ জনপ্রতি এক লাখ টাকা করে পেয়ে অনাস্থা প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নেন। তাছাড়া অনাস্থা প্রস্তাবের পরপর চেয়ারম্যান সদস্যদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ক্ষমা চেয়ে তাদের ম্যানেজ করেন। এ বিষয়ে প্যানেল চেয়ারম্যান-১ আশরাফুল ইসলাম রাজীব ও প্যানেল চেয়ারম্যান-২ কালাম মিয়া টেপন বলেন, চেয়ারম্যান কর্তৃক নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব দিয়েছিলাম ঠিকই কিন্তু ইউনিয়নের সুশীল সমাজ ও মুরব্বীদের পরামর্শে সেই প্রস্তাবটি প্রত্যাহার করি। এখানে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগটি সঠিক নয়।
এ বিষয়ে বরমচাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খোরশেদ আহমদ খান সুইট জানান, ইউপি সদস্যরা তাদের ভুল বুঝতে পেরে অভিযোগ প্রত্যাহার করেছেন। কারো উপর আমার কোন অভিযোগ নেই। আমি সবাইকে নিয়ে সুন্দর করে পরিষদ চালাতে চাই। মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ ইসরাইল হোসেন জানান, অভিযোগের বিষয়ে আমরা বিধিমোতাবেক তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবো।