এলজিইডির প্রকল্পে নারী শ্রমিক নিয়োগে ‘ঘুষ বাণিজ্য’
কক্সবাজার প্রতিনিধি
কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অধীনে একটি প্রকল্পে নারী শ্রমিক নিয়োগে ঘুষ নেওয়াসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় জড়িত পেকুয়া এলজিইডির কার্য সহকারী আয়াতুল হকের বিরুদ্ধে ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন উপজেলার শিলখালী ইউনিয়নের কয়েকজন নারী। ইউএনও অভিযোগটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য পেকুয়া উপজেলা প্রকৌশলী জাহেদুল আলম চৌধুরীকে নির্দেশ দিয়েছেন।
পেকুয়া উপজেলা প্রকৌশলী তার কার্যালয়ের কার্যসহকারী আয়াতুল হকের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, তদন্তে টাকা নেওয়ার সত্যতা পাওয়া গেলে কার্যসহকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগে শিলখালী ইউনিয়নের ওই নারীরা উল্লেখ করেন, তারা ১ নম্বর ওয়ার্ড়ের অসহায়, বিধবা, খেটে খাওয়া নারী শ্রমিক। পেকুয়া এলজিইডির কার্য সহকারী আয়াতুল হক ও শিলখালী ইউনিয়নের আরইএমপি-৩ প্রকল্পের সুপারভাইজার ছৈয়দা বেগম তাদের প্রকল্পে নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে জনপ্রতি ১০ হাজার টাকা করে ঘুষ নেন। কিন্তু তাদের নিয়োগ না দিয়ে কালক্ষেপণ করে আসছিলেন আয়াতুল হক। সর্বশেষ গত ৩০ জুলাই টাকা ফেরৎ দেওয়ার জন্য শিলখালী ইউনিয়ন পরিষদের সামনে আসেন আয়াতুল হক। কিন্তু তারা টাকা ফেরত না নিয়ে কাজে নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানান।
জানা যায়, পল্লী কর্মসংস্থান ও সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচি ৩ (আরইআরএমপি-৩) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় সারা দেশের মতো পেকুয়া উপজেলার সাত ইউনিয়নে (প্রতি ইউনিয়নে ১০ জন করে) মোট ৭০ জন নারী শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে স্ব-স্ব ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের সুপারিশের ভিত্তিতে। তবে অভিযোগ উঠেছে, পেকুয়ার অধিকাংশ ইউনিয়নেই অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে নারী শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
সূত্রমতে, এ প্রকল্পে নারীকর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা এবং নারীপ্রধান পরিবারের নারী শ্রমিক, ভূমিহীন বা শূন্য দশমিক ৫ একরের কম জমির মালিকানাসম্পন্ন এবং মেরামতের জন্য তালিকাভুক্ত সড়কের কাছে বসবাসকারী নারীদের অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু পেকুয়ার অধিকাংশ ইউনিয়নে নারী শ্রমিক নিয়োগে এসব নির্দেশনা মানা হয়নি। কয়েকটি ইউনিয়নে দরিদ্র নারী শ্রমিকদের কাছ থেকে নিয়োগ পেতে ঘুষ নেওয়া হয়েছে। পেকুয়ার ইউনিয়ন পরিষদের সংশ্লিষ্টরা পেকুয়া এলজিইডির অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে গোপনে গত জুন মাসে নারী শ্রমিক নিয়োগের কাজ সম্পন্ন করে। ইউনিয়ন পরিষদ এবং পেকুয়া উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলীর কার্যালয়ের নোটিস বোর্ডে নারী শ্রমিক নিয়োগের কোনো নোটিস বা বিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হয়নি।
পেকুয়া এলজিইডির কার্য সহকারী আয়াতুল হক ঘুষ নেওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, শিলখালীর কিছু নারী চাকরি না পেয়ে ক্ষোভের কারণে অভিযোগ করেছেন।
পেকুয়া এলজিইডির প্রকৌশলী জাহেদুল আলম চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, নারী শ্রমিক নিয়োগে অনিয়ম হয়নি। তিনি এ ব্যাপারে প্রতিবেদন না করতে অনুরোধ করে বলেন, এসব রিপোর্ট হলে অফিসের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়।