
স্বাস্থ্য সেবায় হাসপাতালে গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের ভূমিকা এবং নিয়োগদান সংক্রান্ত অংশিজনদের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিলের উদ্যোগে ‘স্বাস্থ্যসেবায় হাসপাতালে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের ভূমিকা এবং নিয়োগদান’ বিষয়ক অংশীজনদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভা শুক্রবার (মে ২) রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত হয় ।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিলের হাসপাতাল ফার্মাসি কমিটির সভাপতি মো. নাসের শাহরিয়ার জাহেদী।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ডাঃ মোঃ সায়েদুর রাহমান, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় বিশেষ সহকারী, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, বিশেষ অতিথি হিসেবে রয়েছেন, জনাব মোহাম্মাদ সাইদুর রাহমান, সভাপতি, বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সচিব, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, অধ্যাপক ড চৌধুরি মাহমুদ হাসান, সহ সভাপতি, বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল, মুলবক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. ইউ লি চ্যাং, নির্বাচিত সভাপতি , ফেডারেশন অব এশিয়ান ফার্মাসিটিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন ।আরো উপস্থিত ছিলেন জনাব মোহাম্মাদ মাহবুবুল হক, সচিব, বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল, মো : আজিবুর রহমান, সভাপতি, বাংলাদেশ ফার্মাসিস্টস ফোরাম, মেহেদী হাসান তানভীর, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ফার্মাসিস্টস ফোরাম বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল কর্তৃক স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের ফার্মেসি অনুষদের ডিন, বিভাগীয় প্রধান/ চেয়ারম্যান, এক্রিডিটেশন ও এডুকেশন কমিটির বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধিবৃন্দ, বিদ্যালয়সমূহের হসপিটাল ফার্মেসি কোর্স পাঠদানকারী শিক্ষকমণ্ডলী এবং বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিলের হাসপাতাল ফার্মেসি কমিটির সদস্যবৃন্দসহ বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত হাসপাতাল ফার্মাসিস্টরা।প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, সরকার স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় ফার্মাসিস্টদের যুক্ত করতে পদ সৃজনের কথা ভাবছেন। একই সাথে ক্যারিয়ার পরিকল্পনার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ফার্মাসিস্টকে গুরুত্ব দিতে হবে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।অধ্যাপক সায়েদুর রহমান বলেন, বর্তমান চর্চা অনুযায়ী হাসপাতালে চিকিৎসক ও নার্সদের মধ্যে একটি সামঞ্জস্য রয়েছে, তবে ফার্মাসিস্ট একটি পৃথক বিষয়। নতুন গাইডলাইনে আমরা হাসপাতালে ফার্মাসিস্ট পদ সৃষ্টি করছি।তবে ক্যারিয়ার পরিকল্পনার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ফার্মাসিস্টকেও মাথায় রাখতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেকে হয়তো বলবেন, ফার্মাসিস্ট দোকানে কীভাবে বসবে? আসলে মানি বা না মানি, আমাদের অনেক মানুষ ওখান থেকেই সেবা নিয়ে জীবন পার করেছেন। তারাও সমাজের একটি বড় অংশের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।এ সময় তিনি ফার্মাসি বিভাগের শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে বলেন, পাঠ্যক্রমে পরিবর্তনের পাশাপাশি ফার্মাসি শিক্ষার্থীদের মানসিকতায়ও পরিবর্তন আনতে হবে। তাদের এমনভাবে উৎসাহিত করতে হবে যেন তারা স্বাস্থ্যসেবায় যুক্ত হতে আগ্রহী হয়। যেমন—চিকিৎসকরা শুরু থেকেই জানেন তাদের গ্রামে গিয়ে কাজ করতে হতে পারে, তেমনি এখানেও প্রতিষ্ঠিত করতে হবে যে, একজন গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টের উপস্থিতিতেই একটি ওষুধের দোকান ‘ফার্মেসি’ হিসেবে গণ্য হবে।বিশেষ সহকারী আরো বলেন, আমরা নতুন কিছু উদ্যোগ নিচ্ছি। এসব উদ্যোগকে স্বাগত জানাতে হবে। আমরা বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় ফার্মাসিস্টদের রাখার জন্য পদ তৈরি করছি। আপনাদেরও টিমওয়ার্কের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।হাসপাতালের সেবার মান খারাপ হওয়ার পেছনে মূল কারণ হিসেবে সামর্থ্যের চেয়ে রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়াকেও দায়ী করেছেন অধ্যাপক সায়েদুর রহমান।সরকারি হাসপাতালে ফার্মাসিস্টের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে উল্লেখ করে ফার্মেসি কাউন্সিলের সভাপতি ও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান বলেন, ৬০০ শয্যার হাসপাতালে ফার্মাসিস্টদের জন্য ছয়টি পদ নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এগুলো ব্লক পদ হিসেবে রাখা হয়েছে, যেখানে পদোন্নতির সুযোগ নেই। ফলে মেধাবী ফার্মাসিস্টরা এসব পদে আগ্রহ হারাতে পারেন। ভবিষ্যতে এই বিষয়গুলো নিয়ে ভাবতে হবে।সভাপতির বক্তব্যে নাসের শাহরিয়ার জাহেদী বলেন, আধুনিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় ‘হসপিটাল ফার্মাসিস্ট’ ছাড়া গুণগত স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া আদৌ সম্ভব নয়। আমাদের দেশে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট ছাড়াই ওষুধ সংরক্ষণ, ডিসপেন্সিং ও ওষুধ বিতরণ করা হয়ে থাকে। গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট হাসপাতালে নিযুক্ত হলে এদেশের হাসপাতালে ডাক্তার, নার্স ও গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট তাদের পারস্পারিক সহযোগিতার মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।বিশেষ অতিথি অধ্যাপক ড. চৌধুরী মাহমুদ হাসান বলেন, জাতীয় ওষুধনীতি ২০১৬ এর ৪.৩ অনুচ্ছেদে ওষুধের যৌক্তিক ও নিরাপদ ব্যবহার সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে।উল্লেখ্য, ৪.৩ অনুচ্ছেদের ‘ঙ’ উপ-অনুচ্ছেদে দেশে পর্যায়ক্রমে সকল সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে আন্তঃবিভাগ ও বহির্বিভাগে ‘হসপিটাল ফার্মেসি’ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি। দেশে সরকারি হাসপাতালগুলোতে (জেলা হাসপাতাল, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতাল, মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল) ওষুধের নিরাপদ সংরক্ষণ, ওষুধের অপব্যবহার রোধ ও যৌক্তিক ব্যবহারে ফার্মাসিস্টের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রান্তিক পর্যায়ে ওষুধ বিপণন ও ডিস্পেন্সিং ব্যবস্থায় গুণগত পরিবর্তন আনয়নের লক্ষ্যে সরকারি হাসপাতালগুলোতে উন্নততর বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে বহির্বিভাগ ফার্মেসিতে একজন গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট ও আন্তঃবিভাগে প্রতি ৫০ (পঞ্চাশ) শয্যার বিপরীতে একজন গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট নিয়োগদান এবং নিয়োগকৃত ফার্মাসিস্টদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি ও তাদের অভিজ্ঞতার আলোকে পদোন্নতির লক্ষ্যে হসপিটাল ফার্মেসিতে পদবিন্যাস করা প্রয়োজন।বাংলাদেশ ফার্মাসিস্ট ফোরামের সভাপতি মো: আজিবুর রহমান বলেন, গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের তত্ত্বাবধানে দেশের ৯৮ পার্সেন্ট ঔষধ উৎপাদিত হচ্ছে বিশ্বের প্রায় দেড় শতাধিক দেশে ঔষধ রপ্তানি হচ্ছে, করনা কালীর সময়ে কোন গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্ট একদিনও ঘরে বসে থাকে নি, ফার্মাসিস্টদের তত্ত্বাবধানে যেমন গুণগত ঔষধ উৎপাদিত হচ্ছে তেমনি করে গ্রাজুয়েট ফার্মাসিদের তত্ত্বাবধানে হসপিটাল ক্লিনিক্যাল ফার্মেসি প্র্যাকটিস এর মাধ্যমে
ওষুধের নিরাপদ ব্যবহারও নিশ্চিত হবে।কাউন্সিলের হাসপাতাল কমিটির সভাপতি নাসের শাহরিয়ার জাহেদীর সভাপতিত্বে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন প্রতিষ্ঠানটির সচিব মাহবুবুল হক।
