ডার্ক মোড
Monday, 28 April 2025
ePaper   
Logo
বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল বরাবর বাংলাদেশ ফার্মাসিস্টস ফোরামের ১২ দফা দাবি পেশ

বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল বরাবর বাংলাদেশ ফার্মাসিস্টস ফোরামের ১২ দফা দাবি পেশ

 

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে ফার্মেসি পেশার মানোন্নয়ন ও আধুনিকীকরণের লক্ষ্যে ১২ দফা রূপরেখা দিয়েছে বাংলাদেশ ফার্মাসিস্টস ফোরাম। তারা বলছে, এসব রূপরেখা বাস্তবায়িত হলে দেশের হাসপাতাল, ক্লিনিক ও কমিউনিটি পর্যায়ে নিরাপদ ও আধুনিক ওষুধ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। একইসঙ্গে ফার্মাসিস্টদের জন্য স্পষ্ট ক্যারিয়ার গঠন ও দক্ষ মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।

১৭ এপ্রিল রোববার বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিলের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় ফার্মেসি কাউন্সিলের কাছে ১২ দফা দাবি পেশ করা হয়।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিলের সচিব মোহাম্মদ মাহবুবুল হক। ফার্মাসিস্টস ফোরামের পক্ষে অংশগ্রহণ করেন সভাপতি মো. আজিবুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মেহেদী হাসান তানভীর, শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক নুরুল ইসলাম এবং মো. সাদ্দাম হোসেন সহ অন্য নেতারা।

সভায় বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিলের সচিব ফার্মেসি পেশার উন্নয়নে বাংলাদেশ ফার্মাসিস্টস ফোরামের কার্যক্রমের প্রশংসা করেন এবং হসপিটাল ফার্মেসি বাস্তবায়নে কাউন্সিলের গৃহীত উদ্যোগ ও অগ্রগতি তুলে ধরেন।

বাংলাদেশ ফার্মাসিস্টস ফোরামের সভাপতি মো. আজিবুর রহমান সভায় জানান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সারা দেশে ৭০০টি সরকারি ফার্মেসি স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে, যা অত্যন্ত সময়োপযোগী পদক্ষেপ।

তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে ২২ হাজার রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট রয়েছেন এবং ৪৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৮ হাজার শিক্ষার্থী ফার্মেসি অধ্যয়নরত আছেন। দক্ষ মানবসম্পদ থাকায় হাসপাতাল ফার্মেসি, কমিউনিটি ফার্মেসি এবং ক্লিনিক্যাল ফার্মেসি বাস্তবায়নে দ্রুত অগ্রসর হওয়া সম্ভব। এজন্য তিনি সব বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্রুত ফার্ম ডি (ডক্তর অব ফার্মেসি) চালুর ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমানের ‘গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের তত্ত্বাবধানে ওষুধের দোকান রূপান্তরিত হতে পারে প্রকৃত ফার্মেসিতে’ — এই আন্তর্জাতিক মানের চিন্তাধারাকে ফোরাম আন্তরিকভাবে স্বাগত জানায়।
সভায় ফার্মাসিস্টস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মেহেদী হাসান তানভীর প্রস্তাব করেন, হাসপাতাল ফার্মেসি সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য বি-ফার্মের সিলেবাসে ক্লিনিক্যাল ফার্মেসির গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং বি-ফার্ম কোর্সের মেয়াদ ৪ বছর থেকে বাড়িয়ে ৫ বছর করতে হবে। পাশাপাশি সরকারি হাসপাতালে ছয় মাস মেয়াদি ইন্টার্নশিপ চালুর পরামর্শও দেন তিনি।
ফার্মাসিস্টস ফোরামের উত্থাপিত ১২ দফা দাবি–
১. হসপিটাল ফার্মেসি, ক্লিনিক্যাল ফার্মেসি ও কমিউনিটি ফার্মেসির বাস্তবায়নে ফার্মেসি কাউন্সিলের সক্রিয় সমন্বয় ও সহযোগিতা নিশ্চিত করা।
২. গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের মাধ্যমে জাতীয় ফার্মেসি নেটওয়ার্ক গঠনে দ্রুত ফার্ম ডি চালু এবং পর্যাপ্ত ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা।
৩. সব বিশ্ববিদ্যালয়ে বি-ফার্ম থেকে ফার্ম ডি-তে রূপান্তর এবং কারিকুলামে আধুনিক বিষয় অন্তর্ভুক্তি– ফার্মাকোথেরাপি, ফার্মাসিউটিক্যাল কেয়ার, পেশেন্ট সেইফটি, ফরেনসিক মেডিসিন, এমবুলেটরি কেয়ার, ইন্টার্নাল মেডিসিন, ফার্মাকোজেনোমিকস, ফার্মাকোএপিডেমিওলজি, নিউক্লিয়ার ফার্মেসি।
৪. হাসপাতাল ফার্মেসি বাস্তবায়নে ফার্মাসিস্টদের জন্য সুস্পষ্ট ক্যারিয়ার প্ল্যান (ফার্মাসিস্ট, সিনিয়র ফার্মাসিস্ট, চিফ ফার্মাসিস্ট, ফার্মেসি ডিরেক্টর)।
৫. পৃথক ফার্মেসি পরিদপ্তর স্থাপনের জন্য উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন পরিচালক নিয়োগ।
৬. ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্টদের জন্য সরকারি ও বেসরকারি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ‘ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্ট’ উল্লেখ বাধ্যতামূলক করা।
৭. ফার্মেসি প্র্যাকটিস অ্যাক্ট দ্রুত বাস্তবায়ন এবং রেজিস্ট্রেশনবিহীন ফার্মেসি প্র্যাকটিস বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ।
৮. সরকারি হাসপাতালে ফার্মাসিস্টদের ইন্টার্নশিপ কার্যক্রম চালু ও সুপরিকল্পিত গাইডলাইন প্রণয়ন, পাশাপাশি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে চুক্তি করা।
৯. বি-ফার্ম ডিগ্রিধারীদের জন্য ২ বছর মেয়াদি পোস্ট বি-ফার্ম ডি প্রোগ্রাম চালু করা।
১০. ৩ মাসের রেজিস্ট্রেশন কোর্স সম্পন্নকারীদের ‘ফার্মেসি টেকনিশিয়ান’ হিসেবে পুনঃনামকরণ এবং কোর্স মেয়াদ বৃদ্ধি।
১১. ফার্মেসি আইনের খসড়া সময়োপযোগীভাবে সংশোধন ও দ্রুত আইনে রূপান্তরের উদ্যোগ।
১২. গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের জন্য প্রাধিকারভিত্তিক সার্ভিস চালু করে দ্রুত রেজিস্ট্রেশন ও সার্টিফিকেট প্রদান।
ফার্মাসিস্টস ফোরামের নেতারা বলছেন, বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের নীরব এই পরিবর্তনের ঢেউ ইতোমধ্যেই ফার্মেসি পেশার উন্নয়ন এবং স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নের বার্তা দিচ্ছে। এ অবস্থায় স্বাস্থ্যসেবায় গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের অবদানকে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলতে এখন প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা, প্রশাসনিক উদ্যোগ এবং সব পক্ষের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। স্বাস্থ্য খাতের নীরব এই পরিবর্তন একদিন বাংলাদেশের জনগণের জন্য আরও নিরাপদ, আধুনিক এবং মানবিক স্বাস্থ্যসেবার ভিত্তি হয়ে দাঁড়াবে।

বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল বরাবর বাংলাদেশ ফার্মাসিস্টস ফোরামের ১২ দফা দাবি পেশ

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন