
সুন্দরবনের উপকূলের ৯উপজেলায় তীব্র গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন
এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির,সুন্দরবন
বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের উপকূলে বাগেরহাটের বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ শরণখোলায় সহ ৯উপজেলায় বৈশাখেরখরতাপে নাজেহাল হয়ে পড়েছে জনজীবন। প্রখর রোদ আর তাপমাত্রার অসহনীয় ঊর্ধ্বগতিতে এ অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন গড় তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে ঘুরপাক খাচ্ছে, যা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি। গরমে রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে পড়েছে, মানুষ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছে না।
দাবদাহের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী খেটে খাওয়া মানুষজন। দিনমজুর, ইটভাটার শ্রমিক, রিকশাচালক, কৃষক ও নির্মাণশ্রমিকদের জন্য রাস্তায় বা খোলা আকাশের নিচে কাজ করাটা জীবন-মরণ সংগ্রাম হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুপুরের পর থেকে রাস্তাঘাট কার্যত জনশূন্য হয়ে পড়ে।
স্থানীয় ভ্যানচালক ইয়াকুব আলী হাওলাদার বলেন, গরমে শরীর ঝিম ধরে যায়। রিকশা চালাতে পারি না, তবুও পেটের দায়ে বের হতে হয়। কিন্তু যাত্রীও নাই, ইনকামও নাই।
মোরেলগঞ্জে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিনই তাপঘাত, পানিশূন্যতা ও হিট স্ট্রোকের উপসর্গ নিয়ে রোগীর ভিড় বাড়ছে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। স্বাস্থ্যকর্মীরা সতর্কতা হিসেবে পর্যাপ্ত পানি পান, টানা রোদে না যাওয়া, হালকা এবং সহজপাচ্য খাবার গ্রহণের পরামর্শ দিচ্ছেন।
মোরেলগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. নাদিরুজ্জামান আকাশ বলেন, এই তীব্র গরমে শিশু ও বয়স্কদের বাইরে বের হওয়া একেবারেই উচিত নয়। প্রতিদিন অনেকেই হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসছেন।
অত্যাধিক গরমের কারণে স্কুল ও মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি হঠাৎ করেই কমে গেছে। শিক্ষকরা জানিয়েছেন, শ্রেণিকক্ষে গরম সহ্য করতে না পেরে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। কিছু কিছু এলাকায় ক্লাস স্থগিত করতেও হয়েছে।
একই সঙ্গে সরকারি-বেসরকারি অফিসেও কর্মীদের উপস্থিতি কমেছে। অনেকেই হাফডে নিচ্ছেন বা কাজের চাপ সীমিত করে ফেলেছেন।
তীব্র গরমের মধ্যে বিদ্যুতের ভেল্কিতে সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে পাখা কিংবা ফ্রিজ চালানো সম্ভব হচ্ছে না। এতে খাদ্যদ্রব্য দ্রুত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় গৃহবধূ মোসা: সাথী বেগম বলেন, সারাদিন পানি নেই, বিদ্যুৎও যায়-আসে। ফ্রিজে রাখা খাবার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে, তবুও কষ্টে থাকতে হচ্ছে।
মোরেলগঞ্জ আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, এই তাপপ্রবাহ আরও কয়েকদিন স্থায়ী হতে পারে। বৃষ্টিপাত না হওয়া পর্যন্ত স্বস্তির কোনো লক্ষণ নেই। আবহাওয়াবিদরা জনগণকে অতিরিক্ত সতর্ক থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন।