সিলেটে দুবাই পাঠানোর নামে প্রতারণা মানবপাচার আইনে মামলা দায়ের
সিলেট ব্যুরো
দুবাই পাঠিয়ে ফাইভ স্টার হোটেলে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা বেতনের চাকুরী দেয়ার কথা বলে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে এক যুবকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে সিলেটের মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করা হয়েছে। সিলেট শহরতলীর শাহপরান (রহঃ) থানা এলাকার সুরমা গেইট দলইপাড়া গ্রামের শুকুর মিয়ার ছেলে রায়হান আহমদ বাদি হয়ে গত ২৪ আগস্ট এ মামলা দায়ের করেন। মামলা নং- ৫১।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, এ মামলা তদন্ত করার দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে পুলিশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)কে। মামলায় অভিযুক্তরা হলেন, সিলেট নগরীর সোনারপাড়া এলাকার আনা মিয়ার ছেলে যথাক্রমে সাকিব আহমদ, রাহিল আহমদ জুয়েল, সৌরব আহমদ, সাকিল আহমদ, আনা মিয়ার স্ত্রী মিনারা বেগম।
বাদীর অভিযোগে সূত্র থেকে জানা গেছে, তিনি এক বন্ধুর মাধ্যমে জানতে পারেন ২নং অভিযুক্ত রাহিল আহমদ জুয়েল বিদেশে লোক পাঠান। সেই সুবাদে ৩নং অভিযুক্ত সৌরব আহমদের সাথে যোগাযোগ করেন। তখন এ ব্যাপারে সৌরব বলেন, রায়হানকে হোটেলে ভিজিট ভিসায় দুবাই নিয়ে ফাইভ স্টার হোটেলে চাকুরী দেবেন। সে জন্য তাকে সর্বমোট ৭ লক্ষ ৩৪ হাজার টাকা দিতে হবে। পূর্ব কথানুযায়ী ২০২১ সালের ১০ নভেম্বর থেকে ২০২২ সালের ২০ আগস্ট পর্যন্ত সময়ের মধ্যে সকল অভিযুক্ত আসামীর যোগাযোগে বিভিন্ন কিস্তিতে মোট ৭ লক্ষ ৩৪ হাজার টাকা তাদের মা মিনারা বেগম ও ১নং অভিযুক্ত সাকিব আহমদ উল্লেখিত টাকা গ্রহণ করেন।
কথানুযায়ী ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর রায়হান আহমদকে দুবাই পাঠানো হয়। সেখানে অভিযুক্ত রাহিল আহমদ জুয়েল বিমান বন্দরে রায়হান আহমদকে রিসিভ করেন। দুবাইতে কয়েক দিন থাকার পর রায়হান আহমদ অভিযুক্ত সৌরব আহমদকে ফাইভ স্টার হোটেলে চাকুরীর কথা জিজ্ঞাসা করলে, তিনি নানান টালবাহানা শুরু করেন। দুবাইতে অবস্থান কালে সৌরবের সাথে এ সময় প্রতারণা কাজে যোগ দেয় অভিযুক্ত রাহিল আহমদ জুয়েল ও সাকিল আহমদ।
দুবাইতে থাকাকালে (চাকুরী পেতে) রায়হান আহমদের কাছে দফায় দফায় টাকা দাবি করা হয়, যা রায়হান আহমদের পরিবার মিনারা বেগম ও সাকিব আহমদ এর কাছে পরিশোধ করেন। এভাবে বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পরও চাকুরী না হওয়া নির্যাতিত রায়হান আহমদ অভিযুক্তদের কাছে এ ব্যাপারে কারণ জানতে চাইলে অভিযুক্ত পক্ষ অকথ্য ভাষায় তাকে গালি-গালাজ এবং মারধর করে।
এক পর্যায়ে অভিযুক্ত সৌরব আহমদ ছুরি দিয়ে বাদি রায়হান আহমদকে তেড়ে আসে। এরপর থেকে চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে পড়ে যান রায়হান আহমদ। এমন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে না পেরে দুবাইতে বাংলাদেশী কয়েকজনের কাছে ৪০ হাজার টাকা ধার নিয়ে বিমানের টিকেট করে প্রাণ বাঁচানোর উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে চলে আসেন মামলার বাদি রায়হান আহমদ। বর্তমানে মামলার অন্যতম ২নং স্বাক্ষীকে অভিযুক্ত আসামীরা নানান ভাবে হুমকী-ধামকী, ভয়-ভীতি প্রদান করছে। নিরাপত্তার স্বার্থে মামলার স্বাক্ষী ফাইয়াজ হোসেন গত ০৬/০৯/২০২২ইং এসএমপি সিলেটের শাহপরাণ (রহঃ) থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেছেন। জিডি নং- ৩০২।
বাদি রায়হান আহমদও গত ১১/০৯/২০২২ ইংরেজি রোববার নিজের নিরাপত্তার স্বার্থে সিলেট কোতোয়ালী মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরী করেছেন। জিডি নং- ১১১০।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে, মামলার বাদি রায়হান আহমদ জানান, টাকা আদায়ের লক্ষ্যে মামলা করে আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় আছি। আসামী পক্ষ খুবই চতুর প্রকৃতির ও প্রভাবশালী বিধায় তারা যেকোন সময় আমাদের আরও ক্ষতি করতে পারে। আমরা আপনার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সকল মহলের সহযোগিতা কামনা করছি।