ডার্ক মোড
Tuesday, 24 December 2024
ePaper   
Logo
চট্টগ্রামে ভূমিদস্যু জমিরের অত্যাচারে অতিষ্ঠ একাধিক প্রবাসী পরিবার

চট্টগ্রামে ভূমিদস্যু জমিরের অত্যাচারে অতিষ্ঠ একাধিক প্রবাসী পরিবার

চট্টগ্রাম ব্যুরো

ঘনবসতিপূর্ণ চট্টগ্রামে দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে নগরায়ণ, এখানে গড়ে উঠছে গার্মেন্টসহ অসংখ্য শিল্পপ্রতিষ্ঠান। স্বাভাবিকভাবেই এখানে জমির দাম বাড়ছে। একইসঙ্গে আবাসন ও দোকান স্থাপনের জন্য বাড়ছে জমির চাহিদাও।

এ কারণে জমি দখলের দিক দিয়ে এগিয়ে চট্টগ্রাম। প্রশাসন ও প্রভাবশালীদের যোগসাজশে গড়ে উঠেছে ভূমি দখলের শক্তিশালী সিন্ডিকেট। বন্দর নগরে ভূমি দখলের সংস্কৃতি কতটা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে তা সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি জমি দখলের অভিযোগের ঘটনায় পরিষ্কার হয়ে ওঠে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, চট্টগ্রামের এস এম জমির উদ্দিন পেশা ও নেশা, নিরীহ ও প্রবাসীদের জমি দখল করা।

গত ২০ বছরে চট্টগ্রাম শহর ও এর আশে পাশে ২৫ টির বেশি সরকারী খাস ও সাধারণ মানুষের জমি দখল করেছে । অবৈধ জবর দখলের টাকায় এখন শত কোটি টাকার মালিক । চট্টগ্রামের বায়োজিদ এলাকায় ৪ টি প্লট, কুয়াইশ অক্সিজেন রোডে প্রায় ২০ কোটি টাকার প্লট, থার্মিনাল ১৪ নাম্বার গ্যারেজ সংলগ্ন মাহবুব কলোনিতে ৫ কাঠা , এ কে খান ১টি প্লট , সিটি গেইট সংলগ্ন প্লট , কুমিরা এলাকায় প্লট।

এছাড়াও শহরের বায়োজিদ লিংক রোডে পাহাড় ও সমতল ভূমিও দখল করে রেখেছেন। দখলকৃত প্লটে জমির উদ্দিনের জিন্নুরাইন ডেইরি ফার্ম নামের প্রতিষ্ঠানের সাইন বোর্ড টাঙিয়ে মানুষের সাথে প্রতারণা করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে।

মাহাবুব কলোনির ভূমি মালিক বাবর-হানিফ, কুমিরার এলাকার জমির মালিক আইয়ুব , সিটি গেইটে এলাকার দখলকৃত জমির প্রকৃত মালিক শহিদুল্লাহ গংরা বলেন ভূমিদস্যু জমির চতুরতার সাথে জমি দখল করে রেখেছেন। ভুক্তভোগিরা বলেন জমির উদ্দিন শানু নামের এক মহিলাকে দিয়ে আমাদেরকে বিভিন্ন মামলা করার ভয় ভীতি প্রদর্শন করে। পরবর্তীতে থানা ও আদালতে হয়রানি মূলক মামলা করে রাতের অন্ধকারে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে জমি দখল করে নেয়। এ ক্ষেত্রে প্রশাসনের কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের ব্যবহার করা হয়।

গত মাসে চট্টগ্রামের চাঁদগাঁও থানার খতিববাড়ী মাহবুব কলোনিতে এক প্রবাসীর জমি দখলের অভিযোগে জমির উদ্দিন গংদের ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। রাতে জমিরের নেতৃত্বে ৩০ থেকে ৪০ জনের একটি সংঘবদ্ধ গ্রুপ কলোনির গেইট ও সিসি ক্যামেরা ভাংচুর, কেয়ারটেকারসহ ভাড়াটিয়াদের মারধর করে বের করে দিয়ে দখল নিয়ে নেয় এবং জমির কেয়ারটেকার নাসিমাকে একটি গাড়িতে করে তুলে নিয়ে মারধর এবং শারীরিকভাবে হেনস্থা করার পর কুয়াইশ ও অক্সিজেন রাস্তার মাথায় একটি নির্জন জায়গায় ফেলে দেয়।

পরে টহল পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। এ ঘটনার পর বিষয়টি গণমাধ্যমে ও সিএমপি কমিশনারের দৃষ্টিগোচর হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিলে জমি দখলের ঘটনায় চাঁদগাঁও থানায় মামলা হয় ৬০ জনের বিরুদ্ধে। ৫ জনকে গ্রেফতারও করে পুলিশ। ঘটনার পর মামলার প্রধান আসামী জমির উদ্দিন কিছুদিন পলাতক থেকে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে আবারো জমি দখলের চেষ্টা চালাতে থাকে। দুদক চট্টগ্রাম অঞ্চল-১ এর দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, জমির উদ্দিন সহ কয়েকজন ভূমিদস্যুর নামের তালিকা আমাদের হাতে আছে, ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিব।

ভুক্তভোগীরা আরও জানায়, জমির উদ্দিন ও তার গংরা সরকারি জমি দখলের পাশাপাশি আমাদের কেনা সম্পত্তিও ভূয়া দলিলে দখল করে নিয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়েও সুরাহা হচ্ছে না। ভূমিদস্যু জমির উদ্দিনের কাছে বেশি অসহায় ও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রবাসীরা। কষ্টের আয় দিয়ে জমি কিনে তারা হয়রানি স্বীকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

জীবিকার জন্য বিদেশে অবস্থান করার সুযোগ কাজে লাগায় জমির উদ্দিন ও তার গংরা। জমির উদ্দিন জিন্নুারাইন ডেইরি ফার্ম দখল করেই ক্ষান্ত হয়নি , দখল করেছে বিপুল পরিমান পাহাড়ি খাস জমি। এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আদালতে একাধিক মামলাও চলছে।

চট্টগ্রামের সাবেক এক মেয়রের ছেলের সাথে এই প্রতিষ্ঠানের মালিক জমির উদ্দিনের মামলা চলছে । চট্টগ্রাম মহানগরীতে ভূমিদস্যুতা ও জমি দখলের কোন সুযোগ নেই জানিয়ে সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় বলেন, সেপ্টেম্বর মাসে চান্দগাও এলাকায় এ ধরনের ঘটনায় থানা দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার ফলে ভূমিদস্যুরা জমি দখলের সুযোগ পায়নি।

জমি দখলের বিষয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কতৃপক্ষের সদস্য জসিমউদ্দিন শাহ বলেন, এই বিষয়ে কিছু অভিযোগ পেয়েছি, ভুক্তভোগীদের কথা বিবেচনা করে বিষয়টি দেখার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছি। জমির উদ্দিনের হাতে সহায় সম্পত্তি হারানো ভুক্তভোগীরা প্রতিকার চেয়ে যুগের পর যুগ ভুমি অফিস ও আদালতে ঘুরে ঘুরে কোন সামাধান বা ন্যায় বিচার পাচ্ছেনা।

তারা বলেন, প্রশাসন দ্রুত জমির উদ্দিন ও তার চক্রের হাত থেকে জমি উদ্ধারের পাশাপাশি জমিরকে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানায়।

এ বিষয়ে জানতে জমিরকে ফোন করলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। স্থানিয় স্কুল শিক্ষক এস মুন্না বলেন, ভুমি প্রশাসন সংশ্লিষ্টরা ভূমিদস্যুদের সুবিধার্থে ভূমি মালিকানার একটা সংজ্ঞা দাড় করিয়েছে ১. দলিল ২. দাখিলা ৩. দখলসত্ব। এ অনুযায়ী দলিল ও দাখিলা সত্ত্বেও কেবল দখল না থাকলেও জমির মালিক জমির মালিকানা হারাবে।

যার ফলে অপরের অধিকার হরনকারী, লোভী,চতুর, ক্ষমতাধর, ভূমিদস্যুরাই পাবেন জমির মালিকানা। অন্যায় অবিচারের শিকার দখলচ্যুত ভুমি মালিকরা প্রশাসনের কার্যত কোন পরিসেবাই পাচ্ছেন না। তবে আশার কথা "কাগজ যার , জমি তার " এই আইন পাশ হলে ভূমিচ্যুত অসহায় জমির মালিকরা জমির উদ্দিনদের মত ভূমিদস্যুদের হাত থেকে রক্ষা পাবে জমির প্রকৃত মালিকরা।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন