ধর্ষণ মামলার আসামী অর্ণবের প্রতারণার নতুন ফাঁদ
অনলাইন ডেস্ক
দিনাজপুরের ধর্ষণ মামলার আসামী রাহমাতুর রাফসান অর্ণব এখন নতুন করে প্রতারণায় মেতে উঠেছেন খোদ রাজধানীতে। মাদক ব্যবসাতেও ছুটে চলছেন দুরন্ত গতিতে। উঠতি বয়সী তরুণীরা তার প্রেমের ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব হারিয়ে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার হয়ে দিনাজপুর ও রাজধানীতে একাধিক মামলা করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত অনেক তরুণী।
প্রেমের ফাঁদে তরুনীদের সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে পরবর্তীতে ব্ল্যাকমেইলিং করে দু্ই নাম্বারি পথে বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন এই প্রতারক। এছাড়া মাদক ব্যবসা, চাকুরি দেওয়া ও বিদেশ লোক পাঠানোর নামে সহজ সরল মানুষের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে “উত্তরবঙ্গের টাউট” হিসেবে পরিচিত এই প্রতারকের বিরুদ্ধে। তার প্রতারণার খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব হারিয়ে অনেক সাধারণ মানুষ বর্তমানে পথে বসেছে।
সে নিজেকে ডিআইজি মামুনের ছেলে পরিচয়ে এই প্রতারক নিরীহ মানুষদের রীতিমতো হয়রানি করে চলছে। ভুয়া পরিচয়ে পুলিশী শক্তির অপব্যবহার করে নানা কৌশলে সাধারণ মানুষকে ফাঁদে ফেলে অর্ণব তার প্রতারণা চালিয়ে গেলেও পুলিশ রহস্যজনক কারণে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। ডিআইজি মামুনের পরিচয় দিয়ে প্রতারক অর্ণব অবৈধকাজে পুলিশের স্টিকারসহ গাড়ি ব্যবহার, পুলিশ অফিসারের ক্যাপ ব্যবহারসহ নানা অনিয়ম করে বেড়ালেও এই ব্যাপারে পুলিশের নীরব ভূমিকা নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র জানায়, পুলিশের ডিআইজির ছেলের ভুয়া পরিচয়ে প্রভাব খাটিয়ে পুলিশের ভ্যান ব্যবহার করে ও ডিএমপির স্টিকার লাগিয়ে ও হুডার ব্যবহার করে অর্ণব নামের এই দুর্ধর্ষ অপরাধী কক্সবাজার থেকে ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরণের মাদকদ্রব্য সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ডিআইজি মামুন নামে কোন ডিআইজি’ই নেই। এর আগে দিনাজপুর শহরে লিগেসি নামের একটি চায়নিজ রেস্টুরেন্টের আড়ালে তরুণীদের ব্ল্যাকমেইলিং করে অর্থ আদায় ও ধর্ষণ মামলায় একাধিকবার জেল খেটেছেন অর্ণব। নিজ শহর সিরাজগঞ্জের নিরীহ মানুষদের সাথে প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে দিনাজপুর শহরে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা শুরু করেন এই প্রতারক। কিন্তু গ্রাম্য প্রবাদ “ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে” র মতো অর্ণব তার অপকর্ম ও প্রতারণা দিনাজপুরেও চালিয়ে যান।
এক্ষেত্রে রেস্টুরেন্ট ব্যবসাকে সাইনবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করেন। তার লিগেসি রেস্টুরেন্টের নিয়মিত গ্রাহক এক তরুণীর সঙ্গে প্রেমের ফাঁদে প্রতারণা করে ধর্ষণের অভিযোগে দিনাজপুর সদর থানায় গ্রেফতার হয়ে জেলও খাটেন প্রতারক অর্ণব। বাবা পুলিশের কর্মকর্তা হওয়ার সুবাদে বিশেষ সুবিধা পেয়ে ধর্ষণ মামলা থেকে জামিনে মুক্তি পান। দিনাজপুরে তার মুখোশ উন্মোচন হওয়াতে “উত্তরবঙ্গের টাউট ” খ্যাত এই প্রতারক নতুন করে রাজধানীতে তার প্রতারনার জাল ছড়িয়ে দেন।
এছাড়া তার নিজের প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন কোম্পানীতে চাকুরি দেওয়ার নামে উঠতি বয়সী বিভিন্ন তরুণীর সর্বনাশ করার পাশাপাশি বিদেশ পাঠানোর কথা বলে অনেক নিরীহ মানুষকে সর্বশান্ত করেছেন এই অপরাধ। নিয়মিত প্রতারণার অংশ হিসেবে রাজধানীর বিভিন্ন শিল্পপতি ও ধনাঢ্য ব্যক্তিদের মেয়েদেরকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ করে ও সুকৌশলে সেসব ভিডিও করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। এর মধ্যে এক শিল্পপতির তথাকথিত মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস ইভার কাছ থেকে আড়াইকোটি টাকা ও দুইটি গাড়ি হাতিয়ে নেয় সে। মূলত দিনাজপুরে রেস্টুরেন্ট প্রতিষ্ঠার পর তার অপকর্ম ও প্রতারণা বিস্তৃত হতে থাকে। অপকর্ম ও ব্ল্যাকমেইলিং চালিয়ে যাওয়ার মধ্যেই ধর্ষণ মামলায় গ্রেফতার হওয়ার পর তার প্রতারণার আদ্যোপান্ত বেরিয়ে আসে কেঁচো খুঁড়তে অজগরের মতো।
বর্তমানে রাজধানীর বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে উঠতি বয়সী তরুণীদের নিয়ে রাত কাটানোর পাশাপাশি ঢাকার অভিজাত ক্লাবে মদ ও নারী নিয়ে ফূর্তিতে মেতে উঠে বলেও জানিয়েছে একাধিক অসমর্থিত সূত্র। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী এক তরুণী জানান, প্রেমের ফাঁদে ফেলে ভিডিও কলে নানা ধরনের আপত্তিকর ছবির স্ক্রিনশট রেখে ব্ল্যাকমেইলিং করে বিপুল পরিমানের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। নগদ ৬০ লক্ষ টাকা, ৫০ ভরি স্বর্ণবাবদ ৩৫ লক্ষ টাকা, টয়োটা প্রিমিও গাড়ি বাবদ ২২ লক্ষ টাকা ও ১০ লক্ষ টাকা বাজার মূল্যের একটি নিশান গাড়ি বাবদ ১০ লক্ষ টাকাসহ ব্ল্যাকমেইলিয়ের মাধ্যমে ভুক্তভোগী এই তরুনীর কাছ থেকে মোট ১ কোটি ২৭ লক্ষ টাকার মতো অর্থ আত্মসাৎ করে। এই প্রতারণার প্রেক্ষিতে ২০২২ সালের ৫ এপ্রিল নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ৮ (২) পর্ণোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন তৎসহ ৯( ১) ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন আইন সংশোধনী ২০০৩ এর নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ধারায় মামলা করে ভুক্তভোগী ওই নারী।
অন্যদিকে, অনামিকা নামে রাজধানীর মালিবাগের এক তরুণীকে বিয়ের প্রলোভনে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে ও বিশেষ মুহুর্তের ছবি তুলে তার কাছ থেকে দশ লাখ টাকা নিয়ে চম্পট দেয় এই প্রতারক। এছাড়া পুরাণ ঢাকার শারমীন আক্তার মৌ ও তানজীলা খন্দকার নামের আরো দুই তরুণীকে ব্ল্যাকমেইলিং করেও তাদের দুজনের কাছ থেকে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ভুক্তভোগীরা এই প্রতিবেদকের কাছে আক্ষেপ প্রকাশে করে বলেন, আমরা প্রতারকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
এছাড়া রাজনৈতিক প্রভাব ও বিভিন্ন এম পি মন্ত্রীর নাম ভাঙ্গিয়েও সে তার প্রতারণা অব্যাহত রেখেছে। শুধু তাই নয় বাবার প্রভাব খাটিয়ে পুলিশের কাজে ব্যবহৃত সরকারি গাড়ি ও পুলিশ প্রটোকল নিয়েও চলাফেরা করে এই অপরাধী। এর সচিত্র প্রমাণ আমাদের প্রতিবেদকের হাতে রয়েছে।
এ বিষয়ে জানার জন্য পুলিশ ইন্সপেক্টর জাহিদের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও অপরাধী সন্তানের কূকর্ম ঢাকতে এই প্রতিবেদকের ফোন রিসিভ করেন নি।
এ বিষয়ে জানার জন্য অভিযুক্ত রাহমাতুর রাফসান অর্ণব ফোনে কল দেওয়ার পরে সাংবাদিক পরিচয় শুনেই সে ফোন কেটে দেয়।