মুনিয়া মৃত্যুর ঘটনায় বিচারের দাবির মানববন্ধন পণ্ড
নিজস্ব প্রতিনিধি
গুলশানের ফ্ল্যাট থেকে মোসারাত জাহান মুনিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় দ্রুত বিচারের দাবিতে শনিবার (৫ জুন) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছিলেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। সেখানে উপস্থিত বক্তারা দাবি তোলেন, মুনিয়ার মৃত্যুর জন্য দায়ী ব্যক্তি যাতে ক্ষমতা ও অর্থের দাপটে ছাড় না পায়। এ সময় বক্তারা বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরকে গ্রেফতারের দাবিও জানান।
সেখানে বেলা ১২টার দিকে বক্তব্য দিচ্ছিলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী। এ সময় গণমাধ্যমকর্মী পরিচয়ে কিছু লোক সমাবেশকারীদের ওপরে চড়াও হয়। তারা ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে চিৎকার করতে থাকে। সংসদ সদস্য পুত্র শারুনের অর্থে এই মানববন্ধন হচ্ছে বলে বাগবিতণ্ডা শুরু করেন। পরে তাদের হট্টগোলে সমাবেশ পণ্ড হয়ে যায়।
বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরের বিচারের দাবিতে নাগরিক সমাবেশের ব্যানারে এই আয়োজন শুরু হয় বেলা ১১ টার দিকে। সমাবেশে আইনজীবী ও রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য হাসনাত কাইয়ুম বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, আত্মহত্যার প্ররোচনায় যদি কেউ করে তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট আইনে মামলা হোক। মামলার পদ্ধতি অনুযায়ী, তিনি যেই হোক তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে। কিন্তু, আমরা যেটা দেখছি, কেউ কেউ আইনের ঊর্ধ্বে উঠে যাচ্ছে। তখন এখানকার আইন, আদালত, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, রাষ্ট্র, সরকারের ভূমিকা নিয়ে এক ধরনের সন্দেহ, হতাশা ও ক্ষোভ মানুষের মধ্যে হয়।
হাসনাত কাইয়ুম বলেন, বাংলাদেশ একটি ভয়াবহ রাষ্ট্রহীন, সমাজহীন ব্যবস্থাহীন জায়গার দিকে যাচ্ছে। সরকার, সাধারণ নাগরিকসহ কারও জন্য এটা ইতিবাচক ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে না। দেশকে রক্ষা করতে হলে, নাগরিকের নিরাপত্তা রক্ষা করতে হলে, ন্যূনতম আইনের ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হলে বাধা দূর করতে হবে।
গণসংহতি আন্দোলনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাচ্চু ভূঁইয়া বলেন, বাংলাদেশে একটি বড় প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেশের একটি বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। রাষ্ট্রের কাছে বলছি, অভিযুক্ত যেই হোক না কেন, রাষ্ট্রের কাজ অভিযোগ তদন্ত করে আইনের আওতায় আনা।
ধীরে ধীরে সমাবেশে বক্তাদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। এ সময় কিছু সাংবাদিকও জড়ো হয়ে প্রশ্ন করতে থাকেন। কেন ব্যানারে নাগরিক সমাজ লেখা হয়েছে, মাহমুদুর রহমান মান্না, ড. কামাল তো এই সমাবেশে নেই। ওই সাংবাদিকদের গলায় বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন গণমাধ্যমের আইডি কার্ড দেখা গেছে। তারা মানববন্ধনে উপস্থিত অনেককে জিজ্ঞেস করতে থাকেন, কেউ তাদের টাকা দিয়ে নিয়ে এসেছে কী না।
বেলা ১২টার দিকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন। তিনি বলেন, কয়েক সপ্তাহ আগে মুনিয়াকে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। আমি খুব আশ্চর্য হয়ে গেছি, দেশে কি আইনের শাসন বলতে কিছু নেই? সবকিছু কি আমরা টাকার কাছে বিক্রি করে দিয়েছি? কেন তিনি জামিন ছাড়া প্রকাশ্যে ঘুর বেড়াচ্ছেন?
সে সময়ই হুট করেই কিছু সাংবাদিক মানববন্ধন কারীদের দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন। সমাবেশকারীদের ওপরে চড়াও হন তারা। বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে মানববন্ধনকারীরা প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে সরে যান।
সমাবেশ পণ্ড হওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আইনজীবী হাসনাত কাইয়ুম বলেন, সমাবেশ চলাকালে কিছু লোক সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে আয়োজনটি বানচাল করে দেয়। মাইকে বক্তৃতা চলার সময় তারা অকারণে উল্টোপাল্টা প্রশ্ন করে উচ্চবাচ্য করে। তারা উসকানি দেয় এবং কয়েকজনের দিকে তেড়ে আসে।, তারা প্রভাবশালী ছিল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল এই আয়োজন বানচাল করে দেওয়া। আমরা এর নিন্দা জানাই।