ডার্ক মোড
Sunday, 02 February 2025
ePaper   
Logo
ভেঙে ফেলা হলো ঐতিহ্য ধারক বরগুনার নৌকা জাদুঘর

ভেঙে ফেলা হলো ঐতিহ্য ধারক বরগুনার নৌকা জাদুঘর

বরগুনা প্রতিনিধি

ভেঙে ফেলা হলো দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম নৌকা জাদুঘর প্রশাসনের নাকের ডগায় বিএনপি নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে ভেঙে ফেলা হয়েছে বরগুনায় নির্মিত দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম নৌকা জাদুঘর। আওয়ামী লীগ সরকার আমলে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর নির্মাণ করা হয় এই জাদুঘরটি। এসময় এটার নামকরণ করা হয় বঙ্গবন্ধু নৌকা জাদুঘর। বঙ্গবন্ধুর নামে জাদুঘরটি নির্মাণ করা হলেও এখানে স্থান পেয়েছিল দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা হাজার বছরের গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য হরেক রকম নৌকার প্রতিকৃতি। ৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের সময় প্রথম দফায় নৌকা জাদুঘরে হামলা করা হলে এবার পুরোপুরিভাবে ভেঙে ফেলা হলো নৌকা জাদুঘরটি।

আজ শনিবার(১ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টা থেকে স্থানীয় বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্ধ একত্রিত হয়েছে শ্রমিক দিয়ে ভেঙে ফেলে নৌকা জাদুঘরটি।

এসময় বিএনপি নেতাকর্মীরা বলেন, এটি নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছিল তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ। এছাড়াও এখানে একটি পাবলিক লাইব্রেরি ছিল সেটাও ভেঙে ফেলা হয়েছিল। তাই স্থানীয়দের জনদাবির কারণেই ভেঙে ফেলা হয়েছে নৌকা জাদুঘরটি।

সূত্র জানায়, বরগুনা জেলা প্রশাসন ভবন সংলগ্ন ৭৮ শতাংশ জমিতে ১৬৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩০ ফুট প্রস্থের একটি বৃহদাকার নৌকার আদলে নির্মাণ করা হয় জাদুঘরের মূল ভবন। জাদুঘরে স্থান পায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিলুপ্ত ও প্রচলিত ১০০ ধরনের নৌকা প্রতিকৃতি। নদীমাতৃক বাংলাদেশে প্রাচীনকাল থেকেই অন্যতম প্রধান বাহন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে নৌকা। নৌকার পরিচিতি ও হাজার বছরের ঐতিহ্যকে নতুন প্রজন্মেও কাছে তুলে ধরতেই নির্মাণ করা হয় এই নৌকা জাদুঘর। ওই সময় জাদুঘরটির পাশাপাশি নৌকা গবেষণাকেন্দ্র, আধুনিক লাইব্রেরি, মুক্তিযুদ্ধ কর্নার,

শিশুদের বিনোদনের জন্য রাইড, থিয়েটার, ক্ষুদ্র ক্যাফেসহ নানা প্রতিষ্ঠান নির্মাণের কথা ছিল।

শনিবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিএনপির নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে গ্যাসের সিলিন্ডার দিয়ে নৌকা জাদুঘরের দুই প্রান্ত কাটার কাজে ব্যাস্ত বেশ কয়েকজর শ্রমিক। এ সময় তারা নৌকা জাদুঘরের ঢোকার মূল ফটক বন্ধ করে দেন। যাতে কেউ ভেতরে ঢুকে ছবি তুলতে না পারেন। তবে পরবর্তি সময়ে সংবাদকর্মীদের ছবি তোলার অনুমতি মেলে স্বল্প সময়ের জন্য। যেখানে নৌকা জাদুঘরটি ভেঙে ফেলা হচ্ছিল তার পশ্চিম পাশেই রয়েছে জেলা আইনজীবি সমিতি, দক্ষিণ পাশে জেলা প্রশাসক ভবন ও আদালত ভবন, অদূরেই জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয় ও সদর থানা ভবন থাকলেও অজ্ঞাত করনে নিরুত্তাপ ভূমিকা পালন করেছে সবাই।

নৌকা জাদুঘরটি ভাঙার সময় বরগুনা জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রেজবুল কবির, কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সহ সাংগঠনিক অ্যাডভোকেট মুরাদুজ্জামান খান, বরগুনা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মুরাদুজ্জামান টিপন, সাবেক পৌর কাউন্সিলর ও বিএনপি নেতা আমিনুল ইসলাম স্বপন, জেলা যুবদলের দপ্তর সম্পাদক হুমায়ুন, সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফ হোসেনসহ বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপি নেতাকর্মী বলেন, এখানে পৌর গণপাঠাগার ছিল এবং তৎকালীন সরকারকে খুশি করার জন্য নির্মাণ করা হয়েছিল এই নৌকা জাদুঘরটি। নির্মাণ করতে গিয়ে বরগুনার সর্বত্র চাঁদাবাজি করা হয়েছে। পুনরায় এখানে শহীদ জিয়া পৌর পাঠাগার স্থাপন করার দাবি জানান তারা।

পর্যটন উদ্যোক্তা আরিফুর রহমান বলেন, বরগুনা উপকূলীয় জেলা, চারপাশে নদীবেষ্টিত নৌকা আমাদের ঐতিহ্য। তবে দলীয় প্রতিক হিসেবে না দেখে ঐতিহ্য হিসেবে ভাবলে নৌকা জাদুঘরটা রাখা যেত। হয়তো নামের পরিবর্তন করে নৌকা জাদুঘরটা টিকিয়ে রাখা হলে আমাদের উপকূলের ঐতিহ্য টিকে থাকতো।

বরগুনা জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সস্পাদক মুরাদুজ্জামান টিপন বলেন, নৌকা জাদুঘরের নামে ১০ টা জাদুঘরের চাঁদা তোলা হয়েছে। সরকারি সস্পত্তি দখল করে নৌকা জাদুঘর করা হয়েছে। তাই জনগণ এটা ভেঙ্গে ফেলেছে।

জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সহ সাংগঠনিক অ্যাডভোকেট মুরাদ খান বলেন, নৌকা জাদুঘর এটাকে বঙ্গবন্ধু নৌকা জাদুঘর নাম দেওয়ার কারণে জনরোষ সৃষ্টি হয়েছে। জনগণ ৫ তারিখ আগুন দিয়ে পোড়ানোর পর খালিহাতে ভাঙতে ব্যর্থ হলে সরঞ্জাম দিয়ে ভাঙা হয়েছে। আমরা এটাকে শহীদ জিয়া স্মৃতি পাঠাগার তৈরি করার দাবি জানাই জেলা প্রশাসকের কাছে।

বরগুনা জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সস্পাদক অ্যাডভোকেট রেজবুল কবির বলেন, এখানে পৌর গণপাঠাগার ছিল সেটা ভেঙে বঙ্গবন্ধু নৌকা জাদুঘর বানানো হয়েছে, এখান থেকে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে। তৎকালীন সরকারের তেলবাজী করার জন্য বঙ্গবন্ধু নৌকা জাদুঘর বানানো হয়েছে। এখন জনগণ এটা ভেঙে ফেলছে যারা ভাঙছে তারা দেশ প্রেমিক। তৎকালীন জেলা প্রশাসকের নামে চাঁদাবাজি মামলা করা হবে আমি তার বাদী হব।

জাদুঘর ভাঙার বিষয়ে জানতে চাইলে বরগুনা জেলা পাবলিক পলিসি ফোরামের আহ্বায়ক মো. হাসানুর রহমান ঝন্টু বলেন, যারা এই নৌকা জাদুকর ভেঙেছে তারা মূর্খতার পরিচয় দিয়েছে। কোনো কিছু ভেঙে ইতিহাস ঐতিহ্যকে মুছে ফেলা যায় না। এর সাথে প্রশাসনের লোক জড়িত আছে তা না হলে প্রশাসনের নাকের ডগায় এটি কীভাবে ভেঙে ফেলা হয়?। একটি রাষ্ট্রীয় সম্পদ এভাবে ভেঙে ফেলা হচ্ছে অথচ প্রশাসন নির্বিকার। বিষয়টি খুব দুঃখজনক।

নৌকা জাদুঘর ভাঙার বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মো. শফিউল আলম বলেন, নৌকা জাদুঘর ভাঙা হয়েছে বলে শুনেছি । তবে এটা আমাদের না ওটা পৌরসভার অধীনে আমি পৌরসভাকে বিষয়টি জানিয়েছে। এছাড়া এ বিষয়টি পুলিশকেও অবহিত করা হয়েছে।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন

আপনি ও পছন্দ করতে পারেন