ডার্ক মোড
Sunday, 02 February 2025
ePaper   
Logo
মেঘনায় মরা মাছ ভেসে ওঠার ঘটনায় উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন : টিমের সরজমিনে পরিদর্শন

মেঘনায় মরা মাছ ভেসে ওঠার ঘটনায় উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন : টিমের সরজমিনে পরিদর্শন

চাঁদপুর প্রতিনিধি

চাঁদপুরে মতলব উপজেলার মেঘনা নদীর বিশ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী মরে ভেসে উঠছে। তার প্রেক্ষিতে সরজমিনে এসেছে পরিবেশ অধিদপ্তর ও মৎস্য বিভাগের সমন্বয়ে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত টিম।

তদন্ত কমিটিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ড. মো. সোহরাব আলীকে প্রধান করে এবং মৎস্য বিভাগের সিনিয়র সহকারী পরিচালক আলমগীর কবিরসহ ৮ জনকে নিয়ে এই কমিটি গঠন করা হয়।

বৃহস্পতিবার তদন্ত কমিটি পরিদর্শনকালে ষাটনল, ষাটনল বাবু বাজার, মোহনপুর ও এখলাছপুর এলাকা থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করে প্রাথমিক পরীক্ষার পর চূড়ান্ত পরীক্ষার জন্য ঢাকায় ল্যাবরেটরিতে নিয়ে যান।

এ সময় তদন্ত কমিটির প্রধান পরিবেশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ড. মোঃ সোহরাব আলীর সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, পুরো এলাকাটা আমরা ঘুরে দেখলাম। মেঘনা নদীর তীরবর্তী চারটি স্পট থেকে পানির নমুনাও সংগ্রহ করেছি ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার জন্যে। ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার পর রিপোর্ট পেতে পাঁচদিন সময় লাগবে। তারপর আমরা মেঘনার এ অঞ্চলের মাছ মরে যাওয়ার প্রকৃত কারণ নিশ্চিত করতে পারবো।

গত কয়েক বছর যাবতই এ অঞ্চলে এভাবে মাছ মরে যাওয়ার কারণ কী হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানকার নদীর পানির অক্সিজেনের প্রকৃত অবস্থা, কাছাকাছি অঞ্চলে শিল্প কারখানার বর্জ্যসহ বিভিন্ন বিষয় আমাদের মাথায় আছে। তবে পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে না পাওয়া পর্যন্ত আমরা কিছু বলতে চাচ্ছি না।

এদিকে মেঘনাপাড়ের ষটনল মালোপাড়া, বাবু বাজার, ছটাকী, দশানী, মোহনপুর, হাশিমপুর, এখলাছপুর ও জহিরাবাদ এলাকার নদীর পাড়ের বেশ কয়েকজন জেলের সঙ্গে কথা হলে তারা জানায়, গত ২৪/২৫ দিন ধরেই ভাটার সময় মেঘনা নদীর পাড়ে চেউয়া, পুঁটি, চিংড়ি, পাঙ্গাশ, আইর, কাচকি, বেলেসহ বিভিন্ন জাতের মরা মাছ নদীতে ভাসতে দেখা যায়। মাছ ছাড়া সেলেং, ব্যাঙ, কুঁচিয়া, সাপসহ নানা জলজ প্রাণীও মরে ভেসে উঠছে।

সম্প্রতি মাছ ও জলজ প্রাণী মারা যাওয়ার খবর পেয়ে নদীর পানির মান পরীক্ষা করছে মতলব উত্তর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়। ফলাফলে দেখা গেছে, মেঘনার পানিতে পিএইচ-এর পরিমাণ কমে এখন ৬ থেকে সাড়ে ৬ পিপিএম-এ দাঁড়িয়েছে। এর স্বাভাবিক পরিমাণ বা নরমাল ভ্যালু সাড়ে ৭ থেকে ৯ পিপিএম। পানিতে অ্যামোনিয়ার স্বাভাবিক পরিমাণ থাকে শূন্য দশমিক ১ পিপিএম। মেঘনার পানিতে সেটি বেড়ে এখন শূন্য দশমিক ২ পিপিএম বা ততোধিক। পানিতে অক্সিজেনের স্বাভাবিক পরিমাণ থাকে ৫ থেকে সাড়ে ৫ পিপিএম। অতিরিক্ত দূষণের ফলে মেঘনার পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ১ থেকে দেড় পিপিএম-এ। এ কারণে ব্যাপকহারে মাছ মরে যাচ্ছে।

মেঘনা অঞ্চলের জেলে মহাবীর বর্মণ বলেন, গত ২৪/২৫ দিন ধইরা নদীর পাড়ে মাছ মরার কারণে আমরা মাছ ধরতে যাইতে পারি না। ২/৪ জন জাল লইয়া নদীতে মাছ ধরতে গেলেও কোনো মাছ জালে আহেনা।

মেঘনাঞ্চলের জেলে প্রতিনিধি ইমাম হোসেন জানান, গত ২২/২৩ দিন ধরে জেলেরা নদীতে মাছ ধরতে যায় না। যারা যায় মাছ পায় না। জেলেরা খুব কষ্টে দিন কাটছে।

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার বলেন, নদীর পানিতে অ্যামোনিয়ার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় এবং পিএইচ ও অক্সিজেনের হার কমে যাওয়ায় ব্যাপকহারে মাছ মরছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জ জেলার কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য মিশে মেঘনার মিঠাপানিও দূষিত হয়ে উঠেছে।

উল্লেখ্য, ২৭ জানুয়ারি এ বিষয়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশের পর ৮ সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এবং বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি ২০২৫) দুপুরে তদন্ত কমিটি মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা নদীর ষাটনল থেকে আমিরাবাদ পর্যন্ত পরিদর্শন করেন।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন