ডার্ক মোড
Wednesday, 27 November 2024
ePaper   
Logo
বেগমগঞ্জে গাছের নিচে চাপা পড়া ঘরে ঝুঁকি নিয়ে বৃদ্ধার বসবাস

বেগমগঞ্জে গাছের নিচে চাপা পড়া ঘরে ঝুঁকি নিয়ে বৃদ্ধার বসবাস

নোয়াখালী প্রতিনিধি

‘আশ্রয়কেন্দ্র থেকে আসি দেখি ঘর-দুয়ার ভাঙ্গিচুরি রইছে। তারপরে আর ঘরে থাকতে দেয় না, সরকারি কোন সাহায্য আসতে দেয় না। প্রতিবেশীর ঘরে আছিলাম কতদিন অন আর থাকতো দেয় না। নিরুপায় অই এই ভাঙ্গা ঘরে থাকতে অয়। ১৫ জন মানুষ লই আমরা অন কই যামু, আঙ্গরে এককানা সাহায্য করেন।’ আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন বেগমগঞ্জের চৌমুহনী পৌরসভার বাসিন্দা মহিফুল বেগম (৬৫)। শহরের বুকে নামিদামি অজস্র অট্টালিকার ভিড়ে ভেঙে পড়া খুপরি ঘরে বিপর্যস্ত জীবনে ছেলে মেয়ে আর নাতিপুতি নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটে বিধবা মহিফুল বেগমের।

বেগমগঞ্জের চৌমুহনীতে এমনই এক সহায় সম্বলহীন অসহায় দুস্থ পরিবারের দেখা মেলে। না রয়েছে তাদের খাদ্য নিরাপত্তা, না রয়েছে তাদের বাসস্থানের নিরাপত্তা। না রয়েছে তাদের সেনিটাইজেশন ব্যবস্থা, না আছে তাদের বাড়ির হেঁটে চলার রাস্তা। সবই আজ অবরুদ্ধ তাদের জন্য। চৌমুহনী পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের ভাইয়ার দোকানের পার্শ্ববর্তী সলিমুদ্দিন ভূইয়া বাড়িতে মৃত আক্তার হোসেনের স্ত্রী মহিফুল বেগমের এতিম পরিবারের এমন অবস্থা দেখে শরীর শিউরে উঠবে যে কারো। জানা যায়, দীর্ঘ ৭০ বছর ধরে এই ভিটে মাটিতেই মহিফুলের শ্বশুরালয় ও স্বামীর সংসারে জরাজীর্ণ ঘরে কোনমতে বসবাস করে আসছেন বৃদ্ধা মহিফুল বেগম।

এবারের বন্যায় ভয়াবহ দুর্যোগ নেমে আসে মহিফুলের পরিবারে। বন্যার পানিতে তাদের ভিটে মাটি ডুবে যাওয়ায় ঠাঁই হয় আশ্রয় শিবিরে। বন্যা পরবর্তী আশ্রয় শিবির থেকে বাড়িতে ফিরে তাদেরকে দাঁড়াতে হয় চরম বাস্তবতার মুখোমুখি। বন্যার সময় ঘরের পাশে থাকা বিশাল আকৃতির কড়ই গাছ ঘরের উপর পড়ে ভেঙে চুরমার হয় জরাজীর্ণ খুপরি ঘরটি। এমন পরিস্থিতিতে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার অবস্থা ১৫ সদস্যে এই পরিবারের।

নিয়তির পরিহাস এখানেই শেষ নয়। বিশাল আকৃতির গাছ কাটতে গিয়ে এবার প্রতিবেশীর জোরালো বাধার মুখে পড়েন তারা। ভূমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে ঘরের উপর পড়ে থাকা গাছ কাটতে দিচ্ছে না প্রভাবশালী প্রতিপক্ষ প্রতিবেশী আব্দুল হান্নানেরা। বন্যা পরবর্তী সরকারি বেসরকারিভাবে পুনর্বাসন শুরু হলেও সহযোগিতা পাওয়ার পূর্ণ দাবিদার এই ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে দাঁড়ায়নি কেউ। ভূমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরেই এমন অমানবিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে ভুক্তভোগী পরিবারের প্রতি। আদালতে ভূমি সংক্রান্ত অমীমাংসিত চলমান মামলা থাকলেও আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করে আদালতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ভিটে মাটি থেকে উচ্ছেদ করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত প্রভাবশালী আব্দুল হান্নানেরা।

বন্ধ করে দেয়া হয়েছে তাদের পরিবারের সদস্যদের চলাচলের রাস্তা। ভেঙে দেয়া হয়েছে তাদের সেনিটাইজেশন ব্যবস্থা। যেই ঘর এখন গরু ছাগল বসবাসেরও উপযোগী নয়, সেই ঘরের উপর পড়ে থাকা গাছ কাটতে না দিয়ে অনিরাপদ ঝুঁকিপূর্ণ জীবন যাপনে বাধ্য করা হচ্ছে। এতে নিরাপত্তাহীনতায় বিপজ্জনকভাবে কাটছে তাদের প্রতিটি মুহূর্ত। বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুর রহমান দৈনিক কান্ট্রি টুডে কে বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই। লিখিত অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। এ সময় তিনি ভুক্তভোগী পরিবারকে লিখিত অভিযোগ দেয়ার পরামর্শ দেন।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন