বেতাগী থানা আদালত না থাকায় বছরের পর বছর ভোগান্তির শিকার মানুষ
বেতাগী (বরগুনা) প্রতিনিধি
দেশের উপকূলীয় জনপদ রবগুনার বেতাগীতে উপজেলা আদালত না থাকায় এলাকার মানুষদের নানা সংকট ও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। ফলে বিচার প্রার্থীদের জেলা সদরে যাওয়া -আসা,খাওয়া ও উকিলের পাওনা মেটাতে ভুক্তভোগিদের হিমশিম খেতে হয়।
বরগুনা মহাকুমা থাকাকালীন ১৯৬৯ সালে বেতাগী থানা আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তীতে এরশাদ সরকারের আমলে উপজেলা প্রতিষ্ঠার সুবাদে বেতাগীতে থানা আদালত স্থাপিত হয়। বিএনপি সরকারের সময় ১৯৯২ সালে বেতাগী থেকে আদালত জেলা সদরে স্থানান্তর করা হয়।
আদালতের দাবিতে বিভিন্ন সময় ম্যাস লাইন মিডিয়া সেন্টার (এমএমসি)‘র নেটওয়াকিং সেমিনার এবং আদালত বাস্তবায়ন সংগ্রাম কমিটি ও উপজেলা মানবাধিকার জোট ১ কিলোমিটার পথ জুড়ে পালন করে মানবন্ধন কর্মসূচি পালন করে। দেওয়া হয় প্রধান মন্ত্রী, আইন বিচার ও সংস্থাপন মন্ত্রনালয়সহ সংশ্লিস্ট বিভাগে স্মারকলিপি। সর্বশেষ ‘২০১৭ সালের ২০ মে স্থানীয় সরকার,পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল মালেকের নিকট এক সমাবেশে বেতাগী পৌর সভার পক্ষ থেকে একই দাবি তোলা হয়। তাছাড়াও অনেক লেখা-লেখি ও এলাকাবাসীর আবেদনের প্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সংশ্লিষ্টরা পুনর্বিবেচনার আশ^াস দিলেও অদ্যবধি কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি।
জানা গেছে, এ উপজেলার ১টি পৌরসভা সহ ৭টি ইউনিয়নের ৭১ টি গ্রামে দু‘লাখের বেশি মানুষের বসবাস। বরগুনা জেলা সদর থেকে ৪৫ কি:মি: দুরে বেতাগী উপজেলার অবস্থান। যোগযোগ ব্যবস্থার দিক দিয়েও ব্যয় বহুল ও পিছিয়ে। তাছাড়া সদরে স্থানান্তরিত বেতাগী থানা আদালতের বিশৃঙ্খল অবস্থা। বিচারক, এ্যাডভোকেট, আদালত কর্মকর্তা- কর্মচারীদের বসার সুব্যবস্থা নেই। আসামি ও বহিরাগতদের দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। আসামীদের জবানবন্দির গোপনীয়তা রক্ষা করা সম্ভব হয়না। আদালত কার্যালয়ে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নেই। আদালতের অভাবে মামলার বাদী-বিবাদী উভয় পক্ষকে মাইলের পর মাইলের পথ পাড়ি দিয়ে বরগুনায় জেলা সদরে যাওয়া -আসা,খাওয়া ও উকিলের পাওনা মেটাতে ভুক্তভোগিদের হিমশিম ও চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
স্থানীয়রা জানায়, বরগুনা থেকে ৪৫ কি:মি: দুরত্বে বেতাগী সদর। সেখান থেকে আরও ১৫ কিলোমিটার উত্তরে বিবিচিনি ইউনিয়ন। ওই ইউনিয়নের দেশান্তরকাঠী গ্রামের ভুক্তভোগী মো: হারুন-অর-রশীদ বলেন, এখানে আদালত বিদ্যমান থাকলে উপজেলা সদরের নিকটবর্তী লোকেরা বাড়িতে বসেই মামলা পরিচালনা করতে পারত। সদর থেকে যারা একটু দুরবর্তী তারা সকাল সকাল কাজ সেরে বাড়ি ফিরতে পারত। মামলায় কম টাকা ব্যয় হতো। মানুষের সীমাহীন দুর্ভোগ ও কস্টের শিকার হতে হতো না। কিন্ত আদালত স্থানান্তরের ফলে জনসাধারণের ভোগান্তি বৃদ্ধি পেয়েছে। বেশি অর্থ ব্যয়ের কারনে অনেকে মামলার ব্যয়ভার পরিচালনা করতে পারছে না।
তাছাড়াও প্রশাসনিক জটিলতায় মামলার কার্যক্রম বিলম্বিত হয়। প্রয়োজনীয় স্বাক্ষী সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না। জনগণ ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে কয়েক লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত আদালত ভবন দিন দিন অযতœ অবহেলায় ধ্বংস হচ্ছে। বিচার প্রার্থী প্রভাষক জহিরুল ইসলাম শাহিন বলেন, জেলা সদরে আদালত থাকায় কষ্টের আর শেষ নেই। অর্থ ও সময় সব দিক দিয়েই অপুরনীয় ক্ষতির শিকার হতে হয়।
বরগুনা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট মো: মাহবুবুর রহমান জানান, প্রশাসনিক জটিলতায় মামলার কার্যক্রমে বিলম্বিত হচ্ছে। প্রয়োজনীয় স্বাক্ষী সংগ্রহ করা সম্ভব হয়না। জনগণ ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যায়ে নির্মিত আদালত ভবন অযতœ-অবহেলায় দিন দিন ধ্বংস হচ্ছে।
বরগুনায় জেলা সদরে বেতাগী থানা আদালতে কর্মরত এডভোকেট বিমান কান্তি গুহ বলেন, এখান থেকে যে কারনে আদালত স্থানান্তর করা হয়েছে তার কোন যৌক্তিকতা নেই। ভৌগলিক অবস্থান,যোগাযোগ ব্যবস্থা, মামলার সংখ্যা ও অন্যান্য যে সকল কারনে বিভিন্ন থানায় এখনো আদালত বিদ্যমান রয়েছে। সে সব এউপজেলায়ও আদালত থাকার প্রয়োজনীয়তা অবশ্যই ছিল।
জনস্বার্থে এ উপজেলা আদালত পুন:স্থাপনের দাবি স্থানীয়দের। বেতাগী পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র হুমায়ূন কবির মল্লিক বলেন, মানুষের দীর্ঘদিনের ভোগান্তি লাঘবে জেলা সদর থেকে যাতে দ্রæত বেতাগীতে আদালত স্থানান্তর করা হয় তা পুনর্বিবেচনার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আমরা তাকিয়ে আছি।
বেতাগী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো: শাজাহান কবির বলেন, থানা আদালত পুন:স্থাপনের সরকারের যে নীতিমালা রয়েছে তার সবাই এখানে বিদ্যমান রয়েছে। রয়েছে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ভবন, হাজতখানা, পুলিশ ব্যারাক, বৈদ্যুতিক সংযোগ সহ অন্যান্য ব্যবস্থা। জেলায় রয়েছে এ উপজেলার কোর্ট পরিচালনার জন্য রয়েছে সম্পূর্ণ আলাদা জনবল কাঠামো। এখন শুধুমাত্র আদালত পুন:স্থাপনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করলেই কার্যক্রম পরিচালিত হতে পারে।
বেতাগী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও প্রশাসক ফারুক আহমদ বলেন, এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের হাতে কিছু নেই। এটা সরকারের উর্চ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তের ব্যাপার। তবে বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে এখানে থানা আদালত স্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে।