১১ বছরেও সন্ধান মেলেনি গুম হওয়া লাকসামের দুই বিএনপি নেতার, পালিত হচ্ছে গুম দিবস
লাকসাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
কুমিল্লার লাকসামে গুম হওয়া সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম হিরু এবং পৌরসভা বিএনপির সভাপতি হুমায়ুন কবির পারভেজ গুমের আজ ১১ বছর। এই দিনটিকে আজ লাকসামের সাধারণ মানুষ গুম দিবস হিসেবে পালন করছে। এই উপলক্ষে ২৭ নভেম্বর (বুধবার) লাকসাম উপজেলা ও পৌরসভা বিএনপি আলোচনা সভাসহ ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
২০১৩ সালের ২৭ নভেম্বর আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে লাকসাম উপজেলা ও পৌরসভা বিএনপির এই দুই শীর্ষ নেতা গুমের শিকার হন। আজও হিরু-হুমায়ুনের পথ চেয়ে আছে পরিবার-পরিজন এবং কুমিল্লা-৯ (লাকসাম- মনোহরগঞ্জ) সংসদীয় আসনের বিএনপিপ্রেমীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের পরিকল্পনাকারী নূর হোসেনের মতো হিরু-হুমায়ুন গুমের ঘটনায়ও লাকসামে কোন এক ছায়া নূর হোসেন রয়েছেন। আর এখানকার নূর হোসেন কে বা কারা তাদের দেখার প্রতীক্ষায় এখন লাকসামবাসী।
সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ২৭ নভেম্বর রাত ৯টা। বিএনপি'র টানা অবরোধ চলছিল। ওই সময় স্থানীয় আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন বিএনপি নেতা সাইফুল ইসলাম হিরু ও হুমায়ুন কবির পারভেজ। তৎকালীন সময়ে কনকনে শীতে বিদ্যুতের কোন লোডশেডিং না থাকলেও সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার কিছুক্ষণ পর বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে পুরো লাকসাম শহর। ওই সময় লাকসামে বিশেষ অভিযান চালায় র্যাব-পুলিশসহ যৌথ বাহিনীর সদস্যরা।
একপর্যায়ে র্যাবের সদস্যরা উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি সাইফুল ইসলাম হিরুর মালিকানাধীন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান লাকসাম ফ্লাওয়ার মিলে প্রায় এক ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে ৯ জনকে গ্রেফতার করেন। র্যাবের অভিযানের খবর পেয়ে ওই রাতেই সাইফুল ইসলাম হিরু, পৌর বিএনপি'র সভাপতি হুমায়ুন কবির পারভেজ এবং একই কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক জসিম উদ্দিন একটি অ্যাম্বুল্যান্সে করে লাকসাম থেকে কুমিল্লার উদ্দেশে রওনা করেন। তাঁদের বহনকারী অ্যাম্বুল্যান্সটি কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের আলীশ্বর এলাকায় পৌঁছলে সাদা পোশাকধারী একদল লোক অ্যাম্বুল্যান্সটিকে গতিরোধ করে।
পরে গতিরোধকারীরা নিজেদের র্যাব পরিচয়ে দিয়ে তাঁদের আটক করে অন্য একটি সাদা মাইক্রোবাসে তুলে কুমিল্লার দিকে নিয়ে যায়। ওইদিন রাত সাড়ে ১২টার দিকে জসিম উদ্দিন (অ্যাম্বুল্যান্সে থাকা) এবং লাকসামে গ্রেফতার হওয়া ৯ জনকে লাকসাম থানায় হস্তান্তর করেন র্যাব-১১ কুমিল্লা সিপিসি-২ এর তৎকালীন ডিএডি শাহজাহান আলী। পরদিন সকালে তাদের জেলহাজতে পাঠায় পুলিশ। এতে জসিম রক্ষা পেলেও শেষরক্ষা হয়নি বিএনপি নেতা হিরু ও হুমায়ুনের।
এদিকে গুমের ঘটনায় মামলা হলে পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদ থেকে র্যাবকে অব্যহতি দেয়া হয়। ফলে মামলার বাদী ওই প্রতিবেদনের উপর নারাজি দিয়ে পূনরায় তদন্তের দাবী জানান।