ডার্ক মোড
Sunday, 25 May 2025
ePaper   
Logo
বিষখালীর ভাঙ্গনে বিলীনের পথে রামনা লঞ্চঘাট; আতঙ্কে কয়েক হাজার পরিবার

বিষখালীর ভাঙ্গনে বিলীনের পথে রামনা লঞ্চঘাট; আতঙ্কে কয়েক হাজার পরিবার

 ‌মোঃ শাকিল আহমেদ, বামনা ( বরগুনা) 

 
বিষখালী নদীর করাল গ্রাসে বিলীন হতে চলছে বরগুনা জেলার  বামনা উপজেলার রামনা লঞ্চঘাট। 
 
এক সময়ের ব্যস্ততম এই বাণিজ্যিক কেন্দ্রটি এখন ভাঙনের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়েছে। নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার অপেক্ষায় থাকা এই জনপদ নিয়ে স্থানীয়দের মনে বিরাজ করছে গভীর হতাশা ও আতঙ্ক। 
 
দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে মানচিত্র থেকে মুছে যেতে পারে রামনা এবং এর সঙ্গে জড়িত কয়েক হাজার মানুষের জীবন-জীবিকা।
রামনা লঞ্চঘাট কেবল একটি খেয়া পারাপারের স্থান নয়, এটি ছিল বামনা উপজেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক প্রাণকেন্দ্র। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পণ্যবাহী ট্রলার ও লঞ্চ ভিড়তো এখানে। প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষের পদচারণায় মুখরিত থাকত শত বছরের চিরচেনা দর্শনার্থী এই স্থানটি। 
 
স্থানীয় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসল বিক্রি করতেন, জেলেরা তাজা মাছ নিয়ে আসতেন, আর ব্যবসায়ীরা চালাতেন তাদের রমরমা ব্যবসা। কিন্তু কয়েক বছরে ব্যবধানে বিষখালীর আগ্রাসী ভাঙন কেড়ে নিয়েছে সেই সোনালী অতীত।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৭ সাল থেকে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করে। প্রথমে ছোট ছোট অংশে ভাঙন দেখা গেলেও গত দুই বছরে এর ভয়াবহতা বেড়েছে দ্বি-গুন। চোখের সামনে বিলীন হয়েছে শত শত দোকানপাট, ঘরবাড়ি। 
 
লঞ্চঘাটের মূল অবকাঠামোও এখন নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। বাজারের অধিকাংশ দোকানপাট সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছেন ব্যবসায়ীরা। যারা এখনও ভাঙন কবলিত এলাকায় রয়ে গেছেন, তাদের রাত কাটছে নির্ঘুম আতঙ্কে। কখন তাদের শেষ আশ্রয়টুকুও নদী কেড়ে নেবে।
 
রামনা বাজারের পুরাতন ব্যবসায়ীরা অশ্রুসিক্ত চোখে বলেন, "আমাদের দাদা, বাবা এই বাজারেই ব্যবসা করেছেন। আমরাও কয়েক বছর ধরে এখানে ব্যবসায় করে আসছি। চোখের সামনে সব শেষ হয়ে যাচ্ছে। কত মানুষ ভিটেমাটি হারিয়েছে, কত পরিবার নিঃস্ব হয়েছে। আমাদের আর যাওয়ার জায়গা নেই। সরকার যদি দ্রুত কিছু না করে, তাহলে আমরা ভেসে যাবো। 
 
এখানকার স্থানীয়রা জানান জিও ব্যাগ ফেলা বা সাময়িক কোনো সমাধান নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করে নদী শাসনের মাধ্যমে এই এলাকার মানুষকে রক্ষা করতে হবে।
স্থানীয়দের মতে, অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন এবং নদীর গতিপথ পরিবর্তনের ফলেই ভাঙন আরও তীব্র হয়েছে। এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন।
রামনা লঞ্চঘাট ও বাজার শুধু একটি বাণিজ্যিক কেন্দ্র নয়, এটি হাজার হাজার মানুষের বেঁচে থাকার অবলম্বন। এই জনপদকে রক্ষা করা না গেলে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে এলাকার অর্থনীতি ও সামাজিক জীবনে। আমরা আশা করি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে রামনার মানুষের পাশে দাঁড়াবে এবং দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে এই জনপদকে বিলীন হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করবে।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন