
বাংলাদেশে আগামী বছরের জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন: প্রধান উপদেষ্টা
নিউজ ডেস্ক
বুধবার (২৮ মে) জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও জাপান-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী লিগের সভাপতি তারো আসোকের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ তথ্য জানিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের জানান, ‘অধ্যাপক ইউনূস তারো আসোকে বলেছেন, নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। তিনি ছয় মাসের সময়সীমা নির্ধারণ করেছেন এবং এই সময়ের মধ্যেই নির্বাচন সম্পন্ন হবে।’
তিনি জানান, ‘সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হলে নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা। জুন পর্যন্ত সময় নির্ধারণ একটি নির্বাচনী রোডম্যাপ হিসেবেও কাজ করবে।’
‘অধ্যাপক ইউনূস স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, তিনি জুনের পর একদিনও ক্ষমতায় থাকবেন না।’
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার একাধিক ক্ষেত্রে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে—অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করা হয়েছে, প্রশাসনিক ও আইনি সংস্কার চলছে এবং নির্বাচন কমিশনকে ঘিরে প্রস্তুতি এগিয়ে যাচ্ছে।
রাজনৈতিক সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি জানান, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রিয়াজ ইতোমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য ও মতপার্থক্য চিহ্নিত করেছেন।
আগামী জুনের শুরুতে কমিশনের দ্বিতীয় দফা আলোচনা শুরু হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সরকার আশা করছে, রাজনৈতিক দলগুলো দ্রুত সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্যে পৌঁছাবে এবং জুলাইয়ের মধ্যেই সংস্কারের গতি বাড়বে।’
তিনি বলেন, ‘অধ্যাপক ইউনূস তিনটি বিষয়কে সামনে রেখে এগোচ্ছেন—সংস্কার, ফ্যাসিস্ট শক্তির বিচার এবং নির্বাচন। সব প্রস্তুতি শেষ হলেই তিনি নির্দিষ্ট নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন।’
সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনো অস্থিরতা আছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, ‘আমরা কোনো রাজনৈতিক অস্থিরতা বা প্রশাসনিক অনিশ্চয়তা অনুভব করছি না। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চলমান প্রক্রিয়ার অংশ এবং সব দলই প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে আস্থা প্রকাশ করেছে।’
এর আগে বুধবার বিকেলে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস জাপানের রাজধানী টোকিওতে পৌঁছান। তিনি ৩০তম নিক্কেই ফোরাম: ফিউচার অব এশিয়ায় যোগ দেওয়ার পাশাপাশি জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার সঙ্গে বৈঠক করবেন।
হোটেলে ফিরে প্রধান উপদেষ্টা তারো আসোর সঙ্গে বৈঠক করেন, যার মাধ্যমে তাঁর টোকিও সফর শুরু হয়।
প্রেস সচিব জানান, বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা তাঁর সরকারের গৃহীত সংস্কার কার্যক্রমের অগ্রগতি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, তারো আসো জানান, তিনি বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিবর্তন ও অগ্রগতির বিষয়ে অবগত এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারে আগ্রহী।
প্রেস সচিব জানান, ‘বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব গড়ে তুলতে আন্তরিক প্রয়াস চালাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। তারো আসোও যত দ্রুত সম্ভব দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা জোরদারে গুরুত্বারোপ করেছেন।’
প্রধান উপদেষ্টা জানান, ‘অর্থনীতিতে তিনটি বড় সংস্কার—ব্যাংক খাতকে সক্রিয় করা, বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা এবং বিদ্যুৎ ও অন্যান্য খাতে বকেয়া পরিশোধ—বাস্তবায়নের ফলে দেশের অর্থনীতি এখন অনেক ভালো অবস্থায় রয়েছে।’
রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্যাম্পে রোহিঙ্গা তরুণ প্রজন্ম হতাশার মধ্যে বেড়ে উঠছে। “তাদের আশার আলো দেখাতে হবে যেন তারা স্বদেশে ফিরে গিয়ে উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে।”
তিনি রোহিঙ্গাদের মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনে জাপানের সহায়তা কামনা করেন।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী লুৎফে সিদ্দিকী এবং এসডিজি বিষয়ক প্রধান সমন্বয়কারী লামিয়া মোরশেদ।