ডার্ক মোড
Sunday, 01 June 2025
ePaper   
Logo
‘নতুন বাংলাদেশ’ নির্মাণে জাপান ও দেশটির উদ্যোক্তাদের পাশে চাইলেন অধ্যাপক ইউনূস

‘নতুন বাংলাদেশ’ নির্মাণে জাপান ও দেশটির উদ্যোক্তাদের পাশে চাইলেন অধ্যাপক ইউনূস

নিউজ ডেস্ক

বাংলাদেশের কোটি কোটি তরুণের স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ‘নতুন বাংলাদেশ’ নির্মাণে জাপান সরকার ও দেশটির উদ্যোক্তাদের পূর্ণ সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (২৯ মে) টোকিওতে জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের (জেট্রো) সদর দপ্তরে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ বিজনেস সেমিনার ইন টোকিও’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান। জেট্রো ও জাইকার আয়োজনে এই সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়।

দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি তুলে ধরে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমরা বড় সমস্যায় আছি। বাস্তবিক অর্থেই বাংলাদেশ গত ১৬ বছর ধরে একটি ভূমিকম্পের মধ্য দিয়ে গেছে। সবকিছু ভেঙে পড়েছে... এখন আমরা সেগুলো গুছিয়ে তোলার চেষ্টা করছি।’

বাংলাদেশের বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে জাপানের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘একজন ভালো বন্ধু কঠিন সময়ে পাশে দাঁড়ায়; জাপান তেমনই এক বন্ধু। আমি এসেছি আপনাদের ধন্যবাদ জানাতে এবং আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করতে।’

তরুণদের স্বপ্নের কথা উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশের কোটি কোটি তরুণের অসংখ্য স্বপ্ন আছে। সেই স্বপ্নগুলো বাস্তবায়নে তাদের সহযোগিতার দরকার।’

এই চ্যালেঞ্জকে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা ইতিহাসকে দেখাতে চাই—হ্যাঁ, এটি সম্ভব হয়েছিল এবং তা হয়েছিল নিখুঁতভাবে।’

‘আমরা নিজেদের প্রস্তুত করেছি এবং বলছি— আমরা কাজে নামার জন্য তৈরি। আপনাদের সহযোগিতা থাকলে এটি সম্ভব। চলুন একসঙ্গে এগিয়ে যাই এবং কাজটি শেষ করি। এটি অর্থ শুধু উপার্জন নয়, মানুষের জীবন বদলে দেওয়ার বিষয়।’

অধ্যাপক ইউনূস জানান, অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলার দায়িত্ব নিয়েছে তার সরকার, আর সে পথে জাপান বাংলাদেশের বন্ধু ও অংশীদার।

তিনি বলেন, ‘আরেকটি বাংলাদেশের ভিত্তি স্থাপন করুন, যাকে আমরা “নতুন বাংলাদেশ” নাম দিয়েছি। আমরা একসঙ্গে সেই বাংলাদেশ গড়ব। আপনারা পাশে থাকলে এটি অবশ্যই সম্ভব, আর তার ভিত্তি ইতোমধ্যে আমরা স্থাপন করেছি।’

মাতারবাড়ী উন্নয়নে জাপানের সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, এটি একটি পিছিয়ে পড়া দেশের অর্থনীতির ভিত্তি গড়ে দিয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার ভাষ্যে, ‘নেপাল, ভুটান ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্যের মানুষ মাতারবাড়ীর মাধ্যমে বিশ্ববাজারে প্রবেশাধিকার পেতে পারে। মাতারবাড়ী হবে বিশ্বের সঙ্গে সংযুক্তির দরজা... আমরা এই দরজা সবার জন্য খোলা রাখব।’

জাপানের অর্থনীতি, বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের পার্লামেন্টারি ভাইস-মিনিস্টার শিনজি তাকেউচি অনুষ্ঠানে বলেন, ‘বাংলাদেশ এশিয়ার দেশগুলোকে সংযুক্তকারী কৌশলগত কেন্দ্র এবং এই অঞ্চলের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।’

তিনি জানান, বাংলাদেশে জাপানি কোম্পানির সংখ্যা এখন ৩০০ ছাড়িয়েছে, যা গত এক দশকে ৭৫ শতাংশ বেড়েছে।

দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাংলাদেশে জাপানের অব্যাহত সহযোগিতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে জাপান এখন বাংলাদেশের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব আরও জোরদার করতে চায়।

জাপান সরকার দক্ষিণ এশিয়ায়, বিশেষ করে বাংলাদেশে জাপানি কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ বাড়াতে উৎসাহ দিচ্ছে বলে জানান তিনি। জাপানি প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশের বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করার মাধ্যমে টেকসই প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে পারে বলেও মন্তব্য করেন শিনজি। বর্তমানে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য মূলত টেক্সটাইলকেন্দ্রিক হলেও তা আরও বৈচিত্র্যপূর্ণ করার আহ্বান জানান ভাইস-মিনিস্টার।

সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, এসডিজি বিষয়ক প্রধান সমন্বয়কারী লামিয়া মোরশেদ, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এবং টোকিওতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. দাউদ আলী।

অনুষ্ঠান শেষে দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক, বিনিয়োগ ও অন্যান্য সহযোগিতাবিষয়ক ছয়টি সমঝোতা স্মারক সই হয়।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন জেট্রো চেয়ারম্যান ও সিইও নোরিহিকো ইশিগুরো। এ ছাড়া বক্তব্য দেন জাপান-বাংলাদেশ বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা কমিটির চেয়ারম্যান এবং মারুবেনি করপোরেশনের নির্বাহী করপোরেট উপদেষ্টা ফুমিয়া কোকুবু।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন