ইজতেমায় সাদপন্থিদের হামলার নিন্দা ও বিচার দাবি
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
তাবলিগের মহতী ও শান্তিপূর্ণ কার্যক্রম নস্যাৎ করার লক্ষ্যে সাদপন্থিদের ‘বিদ্বেষমূলক’ কর্মকাণ্ড এবং টঙ্গী বিশ্ব ইজতিমা ময়দানে ঘুমন্ত নিরীহ আলেম-উলামা ও মুসল্লীদের উপর বর্বরোচিত হামলা ও হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওলামাপন্থি শিক্ষার্থীরা। এসময় জাতীয় ঐক্য ও ধর্মীয় সম্প্রীতির জন্য বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য রক্ষায় সব ষড়যন্ত্র রুখতে ৪দফা জানান তারা।
রোববার (২২ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান ওলামাপন্থি শিক্ষার্থীরা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলের ১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম রাকিব এবং মাস্টার দ্য সূর্য সেন হলের ১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী আসাদুজ্জামান আজাদ।
ওলামাপন্থি শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো:
১. অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে টঙ্গী ইজতেমা ময়দানে বর্বরোচিত হামলা ও হত্যাকাণ্ডের নিরপেক্ষ তদন্ত ও দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
২. ইতোমধ্যে যে-সব চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও তাদের হুকুমদাতাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে, সেই এজাহারভুক্ত আসামিদের আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে গ্রেপ্তার নিশ্চিত করতে হবে।
৩. তৎকালীন প্রশাসনের মদদপুষ্ট এই সাদপন্থিদের ২০১৮ সালে টঙ্গী ইজতেমা ময়দানে হামলা ও হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
৪. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পরিচয়ে তৎক্ষণাৎ গঠিত ভূঁইফোঁড় সংগঠন ‘সচেতন ছাত্র সমাজ’ সদস্যদের অবিলম্বে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদ ও বিভাগের শিক্ষার্থীরা, গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, গত ১৭ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে ঘুমন্ত নিরীহ আলেম-ওলামা ও সাধারণ মুসল্লিদের উপর একটি বর্বরোচিত সন্ত্রাসী হামলা ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। মাওলানা সাদ কান্ধলভির অনুসারীদের নেতৃত্বে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের এ হামলায় অন্তত চারজন নিহত এবং শতাধিক মুসল্লী গুরুতর আহত হন।
২০২৪ এ সংগঠিত এ হামলা ও হত্যাকাণ্ড, ২০১৮ সালে একই ইজতেমা ময়দানে সাদপন্থিদের হামলা ও হত্যাকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি মাত্র। তৎকালীন সরকারের সঙ্গে সাদপন্থিদের ঘনিষ্ঠতার কারণে ২০১৮ সালের সেই হামলার বিচার তো দূরের কথা, কোন তদন্তও হয়নি। এই সব সহিংস কার্যকলাপ শুধু ধর্মীয় পরিবেশকেই ক্ষতিগ্রস্ত করেনি, বরং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের উপরেও গুরুতর প্রভাব ফেলেছে। এমন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি আমাদের সামাজিক ঐক্য ও ধর্মীয় সম্প্রীতির পরিপন্থি।
ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করে তারা বলেন, অতীত এবং বর্তমানে জাতীয় সংকটময় মুহূর্তগুলোতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে প্রমাণিত হয়েছে। সেই ধারাকে অক্ষুণ্ন রেখে আমরা সাদপন্থিদের এ হামলা ও হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ ও তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আহ্বান জানাতে চাই, এ হামলা ও হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় বিচারব্যবস্থার প্রতি আমাদের আস্থা বিনষ্ট হলে, দেশের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা হুমকির মুখে পড়বে।
সাদপন্থিদের ষড়যন্ত্র সাধারণ মানুষের কাছে উন্মোচিত হয়েছে উল্লেখ করে তারা বলেন, গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে আমরা জানতে পেরেছি, দাওয়াত ও তাবলিগের শান্তিপূর্ণ ও প্রভাবশালী এ কাজ যা আমাদের চিরায়ত ধর্মীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে, তাকে বিনষ্ট করতে প্রতিবেশী দেশসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার পৃষ্ঠপোষকতায় কাজ করে যাচ্ছে এই সাদপন্থি গোষ্ঠী। ২০১৮ সালে টঙ্গী ইজতেমা ময়দানে হামলা ও সর্বশেষ ২০২৪ সালের ১৭ ই ডিসেম্বর দিবাগত রাতের তাণ্ডবে সাদপন্থিদের এ ষড়যন্ত্র দেশব্যাপী সাধারণ মানুষের কাছে উন্মোচিত হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সার্জিস আলমের মধ্যস্থতার মাধ্যমে সমাধানের পথ খুঁজলেও চিহ্নিত এ সন্ত্রাসী গোষ্ঠী শান্তির বার্তাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বর্বরোচিত হামলা ও হত্যাকাণ্ডের পথ বেছে নিয়েছে। এই গোষ্ঠীর অনবরত এই উগ্রতা প্রশ্রয় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মধ্যরাতের এই তাণ্ডবের আগের দিন ‘সচেতন ছাত্র সমাজ’ নামে একটি ভূঁইফোঁড় সংগঠন নিজেদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি দাবি করে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন প্রাঙ্গণে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করে। পাশাপাশি সাদ কান্ধলভিকে কেন্দ্র করে তাদের পেশ করা সব দাবি রাতের মধ্যেই মেনে নেয়ার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে। অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাতে হয়, সেই একই রাতে টঙ্গীতে বর্বরোচিত হামলা ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটে।
আমরা আশঙ্কা করছি এই হামলার পেছনে এ সংগঠনটির সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে। আমরা স্পষ্টভাবে জানাতে চাই, এই সংগঠনের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোনো সম্পর্ক নেই। গুটিকয়েক সদস্যের এই বিপথগামী গোষ্ঠী আমাদের শান্তিপ্রিয় মুসলিম জনতার প্রতিনিধিত্ব করে না। তাদের এই কর্মকাণ্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করেছে। দেশের শৃঙ্খলা বিনষ্ট ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে চাপে ফেলার ষড়যন্ত্রমূলক এই অপতৎপরতাকে আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি।
এই সংগঠনের সবাইকে চিহ্নিত করে জবাবদিহিতার আওতায় আনার দাবি জানিয়ে তারা বলেন, কোন সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সমর্থক ও মদদদাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। আমরা এই ক্যাম্পাসকে একটি নিরাপদ ক্যাম্পাস হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, এই ভূঁইফোঁড় সংগঠনের সদস্যদের চিহ্নিত করে অবিলম্বে তাদের জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসতে হবে এবং ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের অপতৎপরতার পুনরাবৃত্তি করতে না পারে সে বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
Comment / Reply From
You May Also Like
Latest News
Vote / Poll
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলা বন্ধ করতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্যোগ যথেষ্ট বলে মনে করেন কি?