
যশোরের শিক্ষাঙ্গনে এই দুরবস্থার দায় কার
জেমস আব্দুর রহিম রানা
জলাবদ্ধতা এখন আর শুধু অবকাঠামোগত সমস্যা নয়; এটি একটি শিক্ষা-সংকট।টানা বৃষ্টিতে যশোরের মণিরামপুর , কেশবপুর ও অভয়নগর উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যেন একের পর এক পানির ফাঁদে পরিণত হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে কলেজ পর্যন্ত শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হাঁটু থেকে কোমরসমান পানির নিচে। শ্রেণিকক্ষ, মাঠ এমনকি পরীক্ষাকেন্দ্রেও প্রবেশ করেছে পঁচা পানি ও কাদা। এতে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছে হাজারো শিক্ষার্থী। চলমান অর্ধ-বার্ষিক ও এইচএসসি পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থীদের কাঁদা-মাটি আর ভেজা পোশাকে পরীক্ষা দিতে হচ্ছে যা আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক এক চিত্র।
যশোরের শিক্ষাঙ্গনে এই দুরবস্থার দায় কেবল প্রকৃতির নয়, এই দায় দীর্ঘদিনের পরিকল্পনাহীন শহরায়ন, দখল-দূষণের শিকার খাল ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার ব্যর্থতা এবং প্রশাসনের গা-ছাড়া মনোভাবেরও। প্রতিবছর বর্ষা এলে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়, কিন্তু এর কোন স্থায়ী সমাধান নেই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভেতরে পর্যন্ত নেই কার্যকর পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা। শিশুদের স্কুলে যেতে হচ্ছে ভেলা, বাঁশ কিংবা জুতা হাতে নিয়ে। কেউ কেউ ঠান্ডা-জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। শিক্ষার পরিবেশ কোথায় হারিয়ে যাচ্ছে?
স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা কেবল প্রতিশ্রুতি দিয়ে দায়িত্ব শেষ করছেন। কখনো ‘পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে’, কখনো ‘সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া হবে’ এসব কথা আজ আর বিশ্বাসযোগ্যতা রাখে না। পানি উন্নয়ন বোর্ড, ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা সব প্রতিষ্ঠান জানে সমস্যা কোথায়, কিন্তু কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না।
আরও দুঃখজনক হলো, জেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের কেউ জানেন না, কতগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জলাবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে! তথ্য না থাকলে সমাধান কেমন করে হবে?
একটি শিশু ভেজা জামা-কাপড়ে পরীক্ষা দিতে গিয়ে বলে, “কলেজ নয়, মনে হয় নদীর ঘাট পার হচ্ছি” এই উচ্চারণ আমাদের বিবেক নাড়ায় না? শিক্ষা শুধু পাঠদান নয়, এটি নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ নিশ্চিত করার দায়ও বহন করে। জলাবদ্ধতা যদি প্রতিবার একইভাবে ফিরে আসে, তবে তার প্রতিকারও হতে হবে দৃশ্যমান ও কার্যকর।
জেলা প্রশাসক গণমাধ্যমকে বলেছেন, “জলাবদ্ধতা নিরসনে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন” এ কথা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। কিন্তু সেই সম্মিলন কবে ঘটবে? ভোগান্তিতে পড়া শিশুদের আর কত বছর এমন দুর্যোগ সয়ে বড় হতে হবে?
জলাবদ্ধতা এখন আর শুধু অবকাঠামোগত সমস্যা নয়; এটি একটি শিক্ষা-সংকট। পাঠদান যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষার পরিবেশ। যে জাতি তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে জলাবদ্ধতার পঁচা পানির মধ্যে ফেলে রাখে, সে জাতির ভবিষ্যৎ কখনোই আলোকোজ্জ্বল হতে পারে না।
এখনই সময় স্থায়ী সমাধানে পরিকল্পনা গ্রহণ, খাল-ড্রেন দখলমুক্ত ও সংস্কার এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে জরুরি ভিত্তিতে জলমুক্ত করার পদক্ষেপ নিতে হবে।
জেমস আব্দুর রহিম রানা
সিনিয়র গণমাধ্যমকর্মী