ডার্ক মোড
Sunday, 22 September 2024
ePaper   
Logo
সাতক্ষীরার বিনেরপোতা বেতনা নদীর বাঁধ ভেঙে ক্ষতির পরিমাণ ২,৬৩৩ কোটি টাকা

সাতক্ষীরার বিনেরপোতা বেতনা নদীর বাঁধ ভেঙে ক্ষতির পরিমাণ ২,৬৩৩ কোটি টাকা

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

সাতক্ষীরায় বিনেরপোতা বেতনা নদীর বাঁধ ভেঙে ক্ষতি হয়েছে ২হাজার ৬৩৩ কোটি টাকার সম্পদ। এতে প্লাবিত হয়েছে অন্তত ৮০টি গ্রাম। পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন লক্ষাধিক মানুষ। ভেসে গেছে ছয় হাজার মৎস্যঘের ও দেড় হাজার পুকুর। একই সাথে তলিয়ে গেছে শতশত বিঘা আমন ধানের ক্ষেত। পাশাপাশি সাতক্ষীরার বেতনা নদীর বাঁধ ভেঙে ও অতিবৃষ্টিতে কমবেশি ৭০ থেকে ৮০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বিধ্বস্ত হয়েছে কয়েকটি কাঁচা ঘর। জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সদর উপজেলার বিনেরপোতা এলাকার শ্মশানঘাটের পাশের বেতনা নদীর পাউবোবাঁধ গত রোববার সন্ধ্যায় ভেঙে গিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকতে থাকে। ভেঙে যাওয়া বাঁধ দিয়ে আহসাননগর, হরিণখোলা, গোয়ালপোতা, গাছা, দক্ষিণ নগরঘাটা, হাজরাতলা, পালপাড়া, গাবতলা, দোলুয়া, নগরঘাটা, রথখোলা, কাপাসডাঙ্গা, বিনেরপোতা, খেজুরডাঙ্গা, গোপীনাথপুর, তালতলা, নিমতলাসহ কমপক্ষে ৫০ থেকে ৬০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।এছাড়া সাতক্ষীরা সদর উপজেলার পুরোনো সাতক্ষীরা এলাকার ঘুড্ডিরডাঙ্গী, রামচন্দ্রপুর, লবণগোলা, পাথরঘাটা, দামারপোতা, জিয়ালা, ধুলিহর, বালুইগাছা, ফিংড়ি, ফয়জুল্লাহপুর, দরবাস্তিয়া, কোমরপুর, তেঁতুলডাঙ্গী, মাছখোলা, শ্যালেসহ ৩০টি গ্রাম ও পৌর এলাকার অর্ধেক এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।

এতে কমপক্ষে ২০-২৫ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ওই এলাকাসহ সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকার মাছ ও কাঁকড়ার ঘের তলিয়ে গেছে। তলিয়ে গেছে পুকুর ও আমন ধানের খেত।তালা উপজেলার হাজরাতলা গ্রামের কবীর হোসেন, দক্ষিণ নগরঘাটা গ্রামের মো. সাইফুল ইসলাম, রথখোলা গ্রামের আরিফ হোসেন ও আবদুর রহমান জানান, তাঁদের বাড়ির আঙিনায় হাঁটুসমান পানি। আশপাশের ৫০ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। বৃষ্টি থেমে গেলেও বেতনা নদীর ভাঙনকবলিত এলাকা দিয়ে পানি ঢুকছে। বৃষ্টিতে হাজরাতলা গ্রামের জিয়াদ আলী মোড়ল (৫৫), আবদুর রকিব গাজীসহ (৫০) কয়েকজনের কাঁচা ঘর পড়ে গেছে।

সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য বিভাগের উপ-পরিচালক আনিসুর রহমান জানান, ৪ হাজার ৭৮২ হেক্টর আয়তনের ৫ হাজার ৭২১টি মাছের ঘের ও ৭৯৭ হেক্টর আয়তনের ১হাজার ৮২৩টি পুকুর-দিঘি তলিয়ে একাকার হয়ে গেছে। প্রাথমিকভাবে ঘের ও পুকুরের মাছ, স্লুইসগেটসহ সব মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ ২হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তালার ইসলামকাটি ইউনিয়নে খরাই বিলের ৩০টি মাছের ঘের তলিয়ে গেছে।

খলিসখালী, দোলুয়া, দক্ষিণ নগরঘাটা, রথখোলা বিলেরও একই অবস্থা। খরাই বিলের সঞ্চয় সরদার বলেন, তাঁর ৫০বিঘার ঘের ভেসে ২০লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। একই এলাকার হাবলু সরকার বলেন, তাঁর ১২০বিঘার ঘের ভেসে ৫০ লাখ টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। খলিসখালী ইউপির চেয়ারম্যান সাবির হোসেন বলেন, তাঁর ৩০ বিঘার ঘের ভেসে ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।এছাড়া আশাশুনি উপজেলার দক্ষিণ দরগাহপুর গ্রামের মৎস্যচাষি বিপ্লব হোসেন ও আবদুস সাত্তার মোড়ল জানান, তাঁদেরসহ এলাকায় ছোট-বড় এক হাজার মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। এলাকায় পানি নিষ্কাশনের কোনো পথ নেই। পুকুর, বসতবাড়ি ও রাস্তার ওপর পানি থই থই করছে।

সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের শিক্ষক মো. অলিউর রহমান বলেন, বৃষ্টিতে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ মাঠসহ আশপাশের রাজারবাগান ও পুরোনো সাতক্ষীরা সড়ক তলিয়ে গেছে। তলিয়ে গেছে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা চত্বর। রাজারবাগান-মাছখোলা সড়কটি বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় চলাচলে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন মানুষ।সাতক্ষীরা নাগরিক কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব আলী নুর খান বলেন, টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে সাতক্ষীরা শহরের ইটেগাছ, মধুমল্যারডাঙ্গী, মেহেদীবাগ, রসুলপুর, পলাশপোল, মেঠোপাড়া, কাটিয়া, মিলবাজার, থানাঘাটা, পুরোনো সাতক্ষীরা, রথখোলা, কুকরালি, দোহখোলা, চালতেতলা, বাটকেখালীসহ পৌর এলাকায় পানি উঠেছে।

এসব এলাকার ৬০-৭০ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। তাঁরা বাইরে বের হতে পারছেন না। তিনি বলেন, কলারোয়া, সাতক্ষীরা সদর ও তালা উপজেলার বড় অংশ পানিতে তলিয়ে গেছে। সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন, টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের তোড়ে সাতক্ষীরা বেতনা নদীর বেনেরপোতা এলাকার রিং বাঁধের ৪০/৫০মিটার ধসে পড়েছে। ইতিমধ্যে সেখানে মেরামতের কাজ চলমন আছে । বড় গাছ দিয়ে (বল্লি) বসানো কাজ শুরু হয়েছে। আশা করা হয়েছে খুব তাড়াতাড়ি কাজ সম্পন্ন হবে।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন