সহস্রাধিক শ্রমিকদের অংশগ্রহণে ট্যানারী ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন এর ৫৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত
সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি
ট্যানারী ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন-এর ৫৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বুধবার বেলা ৩টায় সাভারের হেমায়েতপুরে বিসিক চামড়া শিল্প নগরীতে এক বিরাট শ্রমিক সমাবেশ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের সভাপতি জনাব আবুল কালাম আজাদ-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ) এর যুগ্ম সমন্বয়কারী শাহ মোঃ আবু জাফর।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান, বাংলাদেশ লেবার ফাউন্ডেশন এর মহাসচিব জেড এম কামরুল আনাম, বাংলাদেশ লেবার রাইটস্ জার্নালিস্ট ফোরাম এর সাধারন সম্পাদক মোঃ আতাউর রহমান, সলিডার সুইস এর কামরুল আহসান, সলিডারিটি সেন্টার- বাংলাদেশ অফিসের মোঃ নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস্) এর আব্দুল মজিদ প্রমুখ। ট্যানারী ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন এর সহ-সাধারন সম্পাদক টি.এম. লিয়াকত হোসেন এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ট্যানারী ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন এর সাধারন সম্পাদক আব্দুল মালেক।
আব্দুল মালেক বলেন, প্রাণঘাতি রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহা র যে শিল্পে হয়, সেখানে নূন্যতম চিকিৎসা সেবার জন্য কোন হাসপাতাল নেই। অনতিবিলম্বে শ্রমিকদের জন্য হেমায়েতপুর এর শিল্প নগরীতে একটি হাসপাতাল ও আবাসন এর ব্যবস্থা করতে হবে। ন্যাশনাল একশন প্ল্যান এর কোন ধরনের বাস্তবায়ন নেই, এই শিল্পে কমপ্লায়েন্স বাস্তবায়ন সবাই চায়, তবুও এটি বাস্তবায়ন হচ্ছেনা। একটি প্রাতিষ্ঠানিক খাতে কন্ট্রাক্টর এর মাধ্যমে চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক নিয়োগ হচ্ছে, যা অত্যন্ত দুখ:জনক।
ট্যানারী শ্রমিকদের একটি ডাটাবেইজ তৈরী করা সময়ের দাবী, যার অবর্তমানে শ্রমিকরা সরকারের নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দেশীয় বাজারে চামড়ার যোগান বহুগুনে বেড়েছে, অথচ শিল্পের বিপর্যয় ঘটেই চলেছে। শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন এর স্বীকৃতি ও অধিকার মালিকদের দিতেই হবে, শ্রমিক-মালিকদের মধ্যকার স্বাক্ষরিত চুক্তি অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতেই হবে। অন্যথায় শ্রমিকরা তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে।
মোঃ আতাউর রহমান বলেন, বাংলাদেশের শ্রমিকদের মর্যাদা ও অধিকার রক্ষায় আন্দোলনে ২০০ সাংবাদিকদের সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশ লেবার রাইটস্ জার্নালিষ্ট ফোরাম ট্যানারী ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন এর সাথে ছিলো, আছে এবং থাকবে। ট্যানারী শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরী ২৫,০০০টাকা দাবীর সাথে আমরা আপনাদের সাথে আছি। বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতির এই চলমান পরিস্থিতিতে টিসিবির মাধ্যমে এখানকার শ্রমিকদের ন্যায্যমূল্যে রেশনিং এর ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। আগামী প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আগেই এখানে একটি হাসপাতাল স্থাপিত হোক, শ্রমিকদের এই দাবীর সাথে আমরা সাংবাদিকরা আপনাদের সাথে আছি।
মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, ট্যানারী ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন সবসময়ই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে রাষ্ট্র কর্তৃক প্রদত্ত আইনগত দাবী-দাওয়া করেছে, কোন বেআইনী দাবী বা কার্যক্রম এর সাথে এই ট্যানারী শ্রমিক বা ইউনিয়ন সম্পৃক্ত নয়। যারা শ্রমিকদের আইনগত অধিকার বাস্তবায়ন করছেনা, তারাই দেশের আইন লঙ্ঘণ করছে। শ্রমিকের অধিকার আদায়ে যদি শ্রমিকরা আন্দোলন এ যেতে বাধ্য হয়, তবে তার দায় থাকবে মালিকদের। রাস্ট্র আমাদের অধিকার দিয়েছে শ্রম আইনে, তা আদায় করতে শ্রমিক এবং ইউনিয়ন ঐক্যবদ্ধ আছে।
জেড এম কামরুল আনাম বলেন, আধুনিক চামড়া শিল্প নগরী বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি সাথে নিয়ে ট্যানারী শ্রমিকরা হাজারীবাগ থেকে হেমায়েতপুরে এসেছিলো, যা আজও বাস্তবায়িত হয়নি। এখন সময় এসেছে, প্রয়োজনে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে শ্রমিকদের আইনগত অধিকার আদায় করার।
প্রধান অতিথীর বক্তব্যে ট্যানারী ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের ৫৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভেচ্ছা জানিয়ে শাহ মোঃ আবু জাফর বলেন, একটি অরাজনৈতিক শ্রমিক ইউনিয়ন হিসেবে ট্যানারী ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন সারা দেশের শ্রমিক আন্দোলন এর জন্য গর্ব ও উদাহরন। সম্প্রতি ট্যানারী শ্রমিকদের প্রতিনিধি বাদ দিয়ে যে নিম্নতম মজুরী বোর্ড গঠিত হয়েছে, তা অবিলম্বে বাতিল করে নতুন করে মজুরী বোর্ড গঠন করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের প্রতি স্কপ এর পক্ষ থেকে দাবী জানাই। দেশের এই ব্যাপক উন্নয়নের বিপরীতে ট্যানারী শ্রমিকদের ভাগ্যে একটি হাসপাতাল জোটেনি। আগামী প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আগেই এখানে একটি হাসপাতাল বা ক্লিনিক স্থাপিত হবে, তার আশাবাদ আমরা ব্যাক্ত করছি। শ্রমিকদের নূন্যতম আইনগত অধিকার বাস্তবায়নে মালিকদের গড়িমসির জন্য ভবিষ্যতে শ্রমিকদের যেকোন কার্যক্রম এর জন্য প্রস্তুত থাকতে মালিকদের তিনি আহ্বান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে আবুল কালাম আজাদ বলেন, পরিবেশের ক্ষতি হলে শ্রমিকদের পাশাপাশি মালিক ও শিল্প সমানভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। আধুনিক চামড়া শিল্পের অংশ হিসেবে প্রতিশ্রুত শ্রমিকদের বাসস্থান, হাসপাতাল ও যাতায়াত ব্যবস্থা আজও বাস্তবায়িত হয়নি। শিল্পের উন্নয়নে মালিকদের অগ্রসর চিন্তা ও সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আজকের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমাদের প্রত্যাশা, আইনবহির্ভূতভাবে দক্ষ ও অভিজ্ঞ শ্রমিক ছাটাই বন্ধ হবে, শিল্পের প্রসারের পাশাপাশি শ্রমিকদের আইনগত ও সামাজিক অধিকারের বাস্তবায়ন হবে।