ডার্ক মোড
Saturday, 21 December 2024
ePaper   
Logo
শেরপুরে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি উজানে উন্নতি ও ভাটি এলাকায় অবনতি, দুর্ভোগে হাজারো মানুষ

শেরপুরে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি উজানে উন্নতি ও ভাটি এলাকায় অবনতি, দুর্ভোগে হাজারো মানুষ

খোরশেদ আলম, শেরপুর

শেরপুরে গত ক'দিনের টানা অতি বর্ষন ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি শেরপুরের ৩ টি উপজেলায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি উজানে উন্নতি হলেও ভাটি এলাকায় নতুন করে শেরপুর সদরে ২টি ও নকলা উপজেলার ৩ ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। এতে নতুন করে ৫টি ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পরেছে।

নালিতাবাড়ীর ভোগাই ও চেল্লাখালীর পানি কমতে শুরু করেছে,উজানের পানি নেমে নিন্মাঞ্চলের শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ত্রাণ ও উদ্ধার কাজ চলছে এখন পযর্ন্ত নিহত ৭, নিখোজ রয়েছে ১ জন। পানিবন্দি কয়েক হাজার পরিবার।
নিম্নাঞ্চলে বাড়ছে পানি, ত্রান সহায়তা অপ্রতুল পাহাড়ি ঢলের ভয়াবহ বন্যায় দুই সহোদর ভাইসহ ৭জনের মৃত্যু

নিহতরা হলেন- নন্নী ইউনিয়নের অভয়পুর গ্রামের সহোদর দুই ভাই হাতেম আলী ও আলমগীর হোসেন, রাস্তা পাড় হতে গিয়ে নয়াবিল ইউনিয়নের আন্ধারুপাড় গ্রামের ইদ্রিস আলী, পানিতে ডুবে বাঘবেড় ইউনিয়নের বাঘবেড় বালুরচর গ্রামের মানিক মিয়ার স্ত্রী ওমিজা বেগম ও বানের পানিতে ভাঙা রাস্তা পাড় হওয়ার সময় পোড়াগাঁও ইউনিয়নের বাতকুচি গ্রামের আব্দুল হেকিমের স্ত্রী জহুরা বেগম ও নকলা উপজেলায় আজ এক যুবককে মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে,

নালিতাবাড়ীর ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীর পানি রাত থেকে কমতে শুরু করেছে।

ফলে উজানে ৮টি ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হলেও উপজেলার ৪ ইউনিয়ন যোগানিয়া, মরিচপুরান,কলসপাড়, রাজনগরে অবনতি হয়েছে। নালিতাবাড়ী- নকলা উপজেলার দুইলেন সড়ক ঢলের পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে।

পানিবন্দি মানুষ হাঁস- মুরগি, গরু ছাগল সরিয়ে আনতে সেনাবাহিনীর ৬টি স্পিটবোড কাজ করছে। নেয়া হচ্ছে আশ্রয় কেন্দ্রে। শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে আজ রোববার সকাল ১০টায় ভোগাই নদীর পানি বিপদ সীমানার ৫৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। চেল্লাখালী নদীর পানি বিপদ সীমানার ৫৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

আজ সকাল থেকে নালিতাবাড়ী উপজেলায় ৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।

শেরপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রনোপ কুমার কর্মকার জানান পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে ৬ হাজার পুকুরের ৫০ কোটি টাকার মাছের ক্ষতি হয়েছে।

একর জমির আমন ফসল ও শাক সব্জি আবাদের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে।

পাহাড়ি ঢলের পানির তোড়ে গ্রামিন রাস্তাঘাট, সেতু বিধ্বস্ত হয়ে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পরেছে। এতে দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে শতশত পথচারীদের।

স্থানীয়রা বিধ্বস্ত রাস্তাঘাট ও বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন।

পানিবন্দি এলাকাগুলোতে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট। গবাদি পশুর খাদ্য সংকটসহ গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগি নিয়ে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন পানিবন্দি এলাকার মানুষ। বহু খামারির মুরগির খামারের ক্ষতি সাধিত হয়েছে।

শেরপুরের সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ জসিম উদ্দিন জানান বন্যাকবলিত এলাকায় পানি বাহিত রোগবালাই যাতে ছড়িয়ে পরতে না পারে এ বিষয়ে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য কর্মীরা এলাকায় কাজ করছে। পানিবন্দি এলাকার লোকজনের মাঝে পানি বিশুদ্ধকরন টেবলেটসহ অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।

শেরপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ঢলের পানিতে তলিয়ে কয়েক হাজার পুকুরের কয়েক কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। ফলে বিপাকে রয়েছেন কয়েক হাজার মৎস্য চাষি।

আকর্ষিক পাহাড়ি ঢোলের পানির তোড়ে কয়েক হাজার কাচা ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। গৃহহীন অনেকে আশ্রয় নিয়েছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।

আবার অনেকেই সন্তানাদি নিয়ে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করে আসছেন। অনের বাড়ি থেকে পানি নেমে গেলেও বিধ্বস্ত বাড়ি ঘরে জ্বলছে না চুলা।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে পরিমানের শুকনো খাবার ও রান্না করা খিচুড়ি বিতরন করা হয়েছে। তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।

হাজার হাজার একর জমির আমন ফসল ও শাকসবজি ক্ষেত পানির নিচে নিমজ্জিত হয়েছে। উঠতি আমন ফসলের ক্ষতি সাধিত হওয়ায় হাজারো কৃষক দিশেহারা হয়ে পরেছে।
শ্রমজীবি মানুষ কাজে যেতে পারছেন না। অনাহারে অর্ধাহারে মানবেতর জীবনযাপন করে আসছেন।

পাহাড়ি ঢলের পানির তোড়ে বিদ্যুতের খুটি উপড়ে পরে বৃহস্পতিবার রাত থেকে এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে পরে। জানা গেছে, বিদ্যুৎ বিভাগ জোরাতালি দিয়ে অনিয়মিতভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছেন ।

এতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের।

বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখনো পানির নিচে। পাহাড়ি ঢলের পানির তোড়ে বন্যা কবলিত এলাকার রাস্তাঘাট বিধ্বস্ত হয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ।

এলজিইডি'র শেরপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বিধ্বস্ত রাস্তাঘাটের তালিকা করা হয়নি। পুরোপুরি পানি নেমে যাওয়ার পর তালিকা প্রণয়ন করা হবে।

শেরপুর জেলা খামারবাড়ির অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ হুমায়ুন কবির বলেন পাহাড়ি ঢলের পানিতে প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর আমন আবাদ নিমজ্জিত হয়েছে।

৩শ হেক্টর জমির শাক সব্জি ক্ষেতের ক্ষতি সাধিত হয়েছে। তিনি বলেন ক্ষতির পরিমান আরো বেশি হতে পারে। এ বিষয়ে কর্মকর্তা কর্মচারীরা মাঠে কাজ করছে পরবর্তীতে তা জানা যাবে।

শেরপুরের জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলায় পাহাড়ি ঢলের পানি কমতে শুরু করায় পরিস্থিতি অনেকটাই উন্নতি হয়েছে।

তবে নালিতাবাড়ী উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন এখনও অপরিবর্তিত রয়েছে। পানিবন্দি এলাকার লোকজনকে সরিয়ে নিতে সেনাবাহিনী কাজ করছে।

তিনি বলেন গৃহহীন পরিবারের সদস্যদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারিভাবে সহায়তা করা হবে। তিনি বলেন প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রাণ তৎপরতার পাশাপাশি বেসরকারি ভাবে ও ত্রান বিতরন কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার আগমুহূর্ত পর্যন্ত প্রশাসন, সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের সমন্বয়ে পানিবন্দি এলাকার লোকজনকে উদ্ধার তৎপরতা চলছে। তবে দ্রুতই এ সমস্যার সমাধান হবে বলে আসাবাদি তিনি।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন