ডার্ক মোড
Sunday, 05 May 2024
ePaper   
Logo
মৌলভীবাজারে ব্যতিক্রম উৎসব ‘ফাগুয়া’ চা বাগানে এ যেন এক মিলনমেলা

মৌলভীবাজারে ব্যতিক্রম উৎসব ‘ফাগুয়া’ চা বাগানে এ যেন এক মিলনমেলা

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

দেশের চা শ্রমিকদের অবহেলিত জীবনে অন্যতম উৎসব রং পরব বা ফাগুয়া উৎসব। তার আবেদন এখন সীমানা ভেঙে সব সম্প্রদায়ের মানুষকে কাছে টেনে নিয়েছে। এমনকি এটা যেন এক মিলনমেলায় পরিনত হয়।

শনিবার(১১মার্চ) জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার ফুলছড়া চা বাগান মাঠে নানান বয়সি নারী পুরুষ আবির নিয়ে রঙের খেলায় মেতে ওঠলে সবুজ চায়ের বাগানের হৃদয় কিছুক্ষণের জন্য হয়ে ওঠে নানান রঙে রক্তিম । অনুষ্ঠানটি শেষ হয় রাত সাড়ে এগারোটায়।

বাংলাদেশের চা বাগানগুলোতে নানান জাতিগোষ্ঠির বাস। চা শ্রমিকদের যেমন নিজেদের পৃথক ভাষা, তেমন পৃথক সংস্কৃতিও। ভাষা ও স্ংস্কৃতিতে একেকটি চা বাগান যেন একেকটি দেশ। তবে ফাল্গুনের ‘ফাগুয়া’ উৎসবে এসে সবাই এক হয়ে তারা মেতে ওঠে রঙের উৎসবে। দরিদ্র তবে প্ররিশ্রমি চা জনগোষ্ঠির ফাগুয়াকে আরো রঙিন করে তোলতে শ্রীমঙ্গলে ফাগুয়া উৎসবের আয়োজন করে ফাগুয়া উৎসব উদযাপন পরিষদ।

চা জনগোষ্ঠি থেকে জনপ্রতিনিধিসহ সমাজের অন্যান্য ক্ষেত্রে নেতৃত্বে ওঠে আসা ব্যক্তিদের সম্মিলনে শ্রীমঙ্গল শহরের অদূরে ফুলছড়া চা বাগানের মাঠে আয়োজন করা হয় এই ফাগুয়া উৎসব বলে জানান আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব প্রাণেশ গোয়ালা ।

উৎসবে কেবল রঙের হোলিই নয়, ছিল ভিন্ন সংস্কৃতির অন্তত ৩০টি পরিবেশনা। পত্র সওরা, নৃত্যযোগি, চড়াইয়া নৃত্য, ঝুমর নৃত্য, লাঠিনৃত্য, হাড়িনৃত্য, পালা নৃত্য, ডং ও নাগরে, ভজনা, মঙ্গলা নৃত্য, হোলিগীত, নিরহা ও করমগীত একসাথে উপভোগ করতে পেরে যেমন আনন্দে ভেসেছেন চা শ্রমিকরা তেমন অভিভূত হয়েছেন উৎসবে আসা নাগরিক সমাজ ও। ফাগুয়া উৎসবটি ঘন্টা বাজিয়ে উদ্বোধন করেন জেলার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান ।

তিনি বলেন, ফাগুয়া উৎসবটি আসলে ব্যতিক্রম। এমন অনুষ্টানে অংশগ্রহন করে ভালো লাগছে। তিনি আর ও বলেন, চা বাগানের কৃষ্টি সংস্কৃতি যেন কোনভাবে বিলুপ্ত না হয় সেজন্য আমরা উদ্দোগ নিয়েছি। ফাগুয়া উৎসব যেন বন্দ না হয় সেজন্য আমরা কিছু সহযোগীতা করেছি। এই সুন্দর সংস্কৃতি রক্ষার দায়িত্ব সবার। এটি যেন প্রত্যেকবার করা যায় সেজন্য আমরা কিছু পরিকল্পনা করছি, একসাথে নৃত্যগীতের এত বৈচিত্রপূর্ণ আয়োজন দেখে অন্য সবার মতো আমি ও অভিভূত। আমার বিশ^াস চা বাগানের সংস্কৃতি এই অঞ্চল তথা দেশের একটি সম্পদ।

এটি চর্চা ও সুরক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। এই উৎসব অব্যাহত রাখতে হবে। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, শ্রীমঙ্গল্ উপজলা চেয়ারম্যান ভানুলাল রায়, শ্রীমঙ্গল নির্বাহী অফিসার আলী রাজিব মাহমুদ মিঠুন, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি অর্ধেন্দু কুমার দেব।

সিলেট থেকে উৎসবে যোগ দিতে আসা উষা সাংস্কৃতিক বিদ্যালয়ের প্রধান চা জনগোষ্ঠির তরুণি তমির্শা তিথি বলেন, চা বাগানেই যে এতো নৃত্যগীতের সমাহার এখানে না আসলে আমার জানা হতো না। বীরহা,করমগীত আমি প্রথমবার দেখলাম।

গেষ্ট অব অনার হিসেবে বক্তব্য রাখেন ভারতীয় সহকারী কমিশনার নীরাজ কুমার জায়সওয়াল বলেন, চা বাগানে পৌঁছাতেই কানে বাজলো পাহাড়িয়া মাদলের সুর। চা বাগানের অন্য পাড়ায় গেলেও গিয়েও চোখে পড়লো একই দৃশ্য। শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী, মধ্যবয়সী সবাই নাচছে- গাইছে- আনন্দ করছে। অনেক আয়োজন দেখেছি তবে এমন আয়োজন প্রথম দেখলাম। চা বাগানের মানুষের কৃষ্টি সংস্কৃতি এতো সুন্দর না দেখলে বুঝতে পারতাম না।

দেউন্ডি চা বাগানের থেকে আসা প্রতীক থিয়েটারের সভাপতি সুনিল বিশ্বাস বলেন, শত দুঃখ-কষ্ট, শত অভাব-অনটনের মধ্যেও উৎসবের কয়েকটি দিন তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে আনন্দে কাটানোর চেষ্টা করেন। শ্রমিকেরা এই আনন্দ ভাগাভাগি করেন প্রতিবেশীদের সঙ্গে। দূর-দূরান্তের চা-বাগান থেকে মেয়েরা নাইওর আসে জামাইসহ।

আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব কালিগাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রাণেশ গোয়ালা বলেন, ৩য় বারের মতো এই আয়োজন হলেও আয়োজনটি জাতির জনককে উৎসর্গ করা হয়েছে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে চা শ্রমিকদের এটি একটি বিশেষ আয়োজন। আশা করি পরবর্তী বছর আরো বড় আয়োজনে ফাগুয়া উৎসব করা হবে। অনুষ্টানটি উপস্থাপন করেন চা শ্রমিক সন্তান প্রকাশ ভর ও পিংকি বর্মা।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন