ডার্ক মোড
Thursday, 16 May 2024
ePaper   
Logo
মদের মতো ক্ষমতাও মানুষকে নেশাগ্রস্ত করে : আন্না হাজারে

মদের মতো ক্ষমতাও মানুষকে নেশাগ্রস্ত করে : আন্না হাজারে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

‌‌‘‘আমি তাকে অনেকবার মদ এড়াতে বলেছি। কিন্তু তিনি অধিক অর্থের জন্য নীতি তৈরি করেছেন। আমি অত্যন্ত ব্যথিত যে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের মতো একজন মানুষ, যিনি আমার সাথে কাজ করতেন এবং মদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন; তিনি আজ মদের নীতি তৈরি করছেন। কিন্তু কি করা যাবে? তিনি তার কৃতকর্মের কারণে গ্রেপ্তার হয়েছেন।’’

ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও আম আদমি পার্টির (এএপি) প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তারের ঘটনায় এমন মন্তব্য করেছেন তার সাবেক আদর্শিক গুরু ও দুর্নীতিবিরোধী প্রবীণ সমাজকর্মী আন্না হাজারে।

দেশটির অনেক বিরোধী নেতা কেজরিওয়ালের প্রতি সমর্থন জানিয়ে গ্রেপ্তারের নিন্দা করলেও আন্না হাজারে বলেছেন, আম আদমি পার্টির মদ নীতি তৈরি করা উচিত হয়নি।

তিনি বলেন, ‘‘আমি অত্যন্ত ক্ষুব্ধ, অরবিন্দ কেজরিওয়ালের মতো একজন মানুষ যিনি আমার সাথে আন্দোলন করতেন এবং মদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছিলেন, তিনি আজ মদের নীতি তৈরি করছেন।’’

কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তারের বিষয়ে আন্না হাজারে বলেন, ‘‘তিনি তার কৃতকর্মের ফল পেয়েছেন। কিছু না করলে তাকে গ্রেপ্তারের প্রশ্নই ওঠে না। এখন যাই হোক না কেন, তা আইন অনুযায়ীই হওয়া উচিত।’’

২০১১ সালে ভারতে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন শুরু করে ব্যাপক পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন আন্না হাজারে। তার আন্দোলনে শামিল হয়েছিলেন কেজরিওয়াল। সেই আন্দোলনের মাধ্যমেই জন্ম হয় কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টির। সেই সময় নির্বাচনী রাজনীতি পরিহার করে দলের বাইরে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন আন্না হাজারে। কিন্তু এরপর বিভিন্ন বিষয়ে দলটির সমালোচনা করেন তিনি। কেজরিওয়াল ও তার দল সব সময় আন্না হাজারের সমালোচনা সরাসরি এড়িয়ে চলেছে।

ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) বলছে, ২০২১-২০২২ সালে দিল্লিকে কার্যকর হওয়া আবগারি নীতিতে মদের পাইকারি বিক্রেতাদের জন্য ১২ শতাংশ এবং খুচরা বিক্রেতাদের জন্য প্রায় ১৮৫ শতাংশ মুনাফার হার নির্ধারণ করা হয়। পাইকারি বিক্রেতাদের ১২ শতাংশের মধ্যে ৬ শতাংশ ঘুষ হিসেবে আম আদমি পার্টির নেতারা নিতেন। এছাড়া দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের ব্যবসায়ীদের একটি অংশ, যারা ‘‘সাউথ গ্রুপ বা দক্ষিণ লবি’’ নামে পরিচিত, তারা এই মামলার অন্য অভিযুক্ত বিজয় নায়ারকে ১০০ কোটি রুপি অগ্রিম দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এই অর্থ আম আদমি পার্টির নেতাদের কাছে পৌঁছে দেন বিজয়।

দেশটির কেন্দ্রীয় এই তদন্ত সংস্থা বলেছে, মদ নীতি মামলার অন্যতম অভিযুক্ত বিজয় নায়ার প্রায়ই কেজরিওয়ালের অফিসে যেতেন এবং বেশিরভাগ সময় সেখানেই কাটাতেন। নায়ার মদ ব্যবসায়ীদের বলতেন যে, তিনি কেজরিওয়ালের সাথে মদ নীতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। তদন্তকারী কর্মকর্তারা বলেছেন, নায়ারই কেজরিওয়ালের সাথে মদ কোম্পানি ইন্দোস্পিরিটের মালিক সমীর মাহেন্দ্রুর সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন।

সেই সাক্ষাতে আলোচনা ফলপ্রসূ না হওয়ায় পরবর্তীতে কেজরিওয়ালের সাথে মাহেন্দ্রুর ভিডিও কলে কথা বলার ব্যবস্থা করেন। ভিডিও কলে কেজরিওয়াল মাহেন্দ্রুকে বলেছিলেন, নায়ার তার ‘‘সন্তান’’, যাকে তিনি বিশ্বাস করেন।

‘‘দক্ষিণ লবির’’ প্রথম অভিযুক্ত এবং বর্তমানে এই মামলার সাক্ষী রাঘব মাগুন্তা বলেছিলেন, তার বাবা ওয়াইএসআর কংগ্রেস পার্টির সাংসদ। তিনিও মদ নীতি সম্পর্কে আরও জানতে কেজরিওয়ালের সাথে দেখা করেছিলেন। এই মামলায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নয়াদিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও আম আদমি পার্টির (এএপি) প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার করেছে ইডি।

আন্না হাজারে অতীতেও কেজরিওয়ালের সরকারের আবগারি নীতির সমালোচনা করেছিলেন। ২০২২ সালে অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে একটি চিঠি লিখে আবগারি নীতির বিষয়ে নিজের কষ্টের কথা জানিয়েছিলেন তিনি।

কেজরিওয়ালকে লেখা চিঠিতে আন্না হাজারে বলেছিলেন, ‘‘আপনি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর এই প্রথম আমি আপনাকে লিখছি। কারণ আপনার সরকারের মদ নীতি সম্পর্কে সাম্প্রতিক সংবাদে আমি ব্যথিত। মদের মতো ক্ষমতাও মানুষকে নেশাগ্রস্ত করে। মনে হচ্ছে, আপনি ক্ষমতার নেশায় মত্ত।’’

সূত্র: এনডিটিভি।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন