ডার্ক মোড
Monday, 29 April 2024
ePaper   
Logo
মঙ্গোলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ফ্ল্যাট জব্দ করতে চায় আমেরিকা

মঙ্গোলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ফ্ল্যাট জব্দ করতে চায় আমেরিকা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

মঙ্গোলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী সুখবাতার বাটবোল্ড দুর্নীতির টাকা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটিতে দু’টি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কিনেছেন বলে অভিযোগ করেছে মার্কিন কর্তৃপক্ষ।

তদন্তকারীরা এখন নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের মিডটাউনে অবস্থিত সেই বিশাল সম্পত্তি জব্দ করতে চাইছেন, যার বাজারমূল্য প্রায় এক কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার।

অভিযুক্ত সুখবাতার বাটবোল্ড ২০০৯ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত মঙ্গোলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তার পরিবার-নিয়ন্ত্রিত ফার্ম বড় এক খনির চুক্তি পাওয়ার পর তিনি ফ্ল্যাট দু’টি কিনেছিলেন।

খনি মঙ্গোলিয়ার মূল শিল্প। তবে নিজের বিরুদ্ধে আনা এই অভিযোগ বাটবোল্ড অস্বীকার করেছেন। ৬০ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ এখনও মঙ্গোলিয়ার সংসদে রয়েছেন।

রয়টার্সে প্রকাশিত তার আইনজীবী অরিন স্নাইডারের এক বিবৃতি অনুযায়ী, ‘বাটবোল্ড আদালতে তার সেই দিনের অপেক্ষায় আছেন, যখন তিনি এই ভিত্তিহীন অভিযোগের বিরুদ্ধে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পাবেন।’

মার্কিন ফেডারেল প্রসিকিউটররা বলেন, তিনি সেন্ট্রাল পার্ক থেকে মাত্র কয়েক ব্লক দূরে দু’টি অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছেন। সেগুলোর একটি কার্লটন হাউসে, আরেকটি ৭০ তলা কাঁচঘেরা আকাশচুম্বী ভবন দ্য পার্ক ইম্পেরিয়ালে।

তারা তার বিরুদ্ধে জনগণের টাকা ‘তার পরিবারের বিলাসবহুল জীবনযাত্রার জন্য অবৈধ শেল কোম্পানির মাধ্যমে খনির চুক্তি থেকে লাখ লাখ ডলার পাচার’ করার অভিযোগ এনেছে।

‘জনগনের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে দুর্নীতির মাধ্যমে মুনাফা অর্জন করার অভিযোগ আনা হয়েছে বাটবোল্ডের বিরুদ্ধে,’ বলেন এফবিআই’র দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক জেমস স্মিথ।

মার্কিন প্রসিকিউটরদের বক্তব্য অনুযায়ী- বাটবোল্ড যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখন মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে তার নিয়ন্ত্রণাধীন একটি কোম্পানিকে ছয় কোটি ৮০ লাখ ডলারের খনির চুক্তি দেওয়া হয়েছিল। যদিও ক্যাট্রিসন নামে পরিচিত সেই প্রতিষ্ঠানটির কোনও খনি কার্যক্রম পরিচালনার ইতিহাস ছিল না। এর একমাত্র পরিচালক ছিলেন ভাষাতত্ত্বের সাবেক একজন শিক্ষক।

সেই খনির চুক্তি থেকে লাখ লাখ ডলার তখন বিদেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাচার করা হয়েছিল এবং শেল কোম্পানি মাধ্যমে সরানো হয়েছিল। এই অর্থের কিছু অংশ ম্যানহাটনের ফ্ল্যাট কেনার পেছনে ব্যয় করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রসিকিউটররা।

আদালতের দাবি, ওই অ্যাপার্টমেন্টগুলোর মধ্যে একটি বাটবোল্ডের বড় ছেলে ব্যবহার করতেন। বাটবোল্ড নিজে এই অভিযোগের মুখোমুখি হচ্ছেন না; তবে আদালত যদি রায় দেয় যে, প্রসিকিউটরদের দাবি সত্য, তাহলে বাটবোল্ডের সম্পত্তি রাষ্ট্র কর্তৃক বাজেয়াপ্ত হতে পারে।

যু‌ক্তরাষ্ট্রের জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের অপরাধ বিভাগের প্রধান নিকোল এম আর্জেন্টিয়েরি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘অভিযোগে যেমনটা বলা হয়েছে, সুখবাতার বাটবোল্ড, মঙ্গোলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী তার পদের অপব্যবহার করে নিজ দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ বিক্রির মাধ্যমে মুনাফা করেছেন। তিনি এবং তার পরিবার দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত সেই অর্থের ১৪ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চমূল্যের সম্পত্তি ক্রয় করেছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই কারণে এসব সম্পত্তি জব্দ হবার যোগ্য। যারা জনগণের অর্থ চুরি করে তাদের জেনে রাখা উচিত, অপরাধের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ উদ্ধার করার জন্য অপরাধ বিভাগ দ্ব্যর্থহীনভাবে কাজ করে যাবে।’

সুখবাতার বাটবোল্ডের রাজনীতি

বাটবোল্ড ব্যবসায়ী থেকে মঙ্গোলিয়ার রাজনীতিতে প্রবেশ করেন ২০০০ সালে। ২০০০ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত তিনি দেশটির উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তাকে মঙ্গোলিয়ার শিল্প এবং বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ২০০৬ সাল পর্যন্ত তিনি সেই দায়িত্বে ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে তিনি একবছর দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীও ছিলেন। ২০০৯ সালে স্বাস্থ্যগত কারণে দেশটির তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী সানজা বায়ার সরে দাঁড়ালে সংসদ তাকে মঙ্গোলিয়ার ২৬তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করে।

২০১২ সালে তার প্রধানমন্ত্রীত্বের মেয়াদ শেষ হলেও এরপর থেকে এখনও পর্যন্ত তিনি দেশটির সংসদ সদস্য হিসেবে রয়েছেন। বিবিসি বাংলা

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন