বেতাগী পৌরসভা কার্যালয়ে হামলা-ভাঙচুর
বেতাগী (বরগুনা) প্রতিনিধি
বরগুনার বেতাগী পৌরসভা কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছে এক দল দুস্কৃতকারী ব্যক্তিরা। এতে দুই কর্মকর্তাসহ তিনজন আহত হয়।
রোববার (১৮ আগস্ট) সকাল পৌনে ১১টার দিকে ওই হামলার ঘটনা ঘটে। তখন পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম গোলাম কবির পৌরসভা কার্যালয়ে ছিলেন না। এ ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
পৌরসভার এক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ঘটনাটি সকাল সাড়ে দশটার দিকে ঘটেছে। সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস হওয়ায় তখনও অফিসের সবাই কার্যালয়ে আসেননি। এমন সময় ১৫ থেকে ২০ জনের এক দল এক দল দুস্কৃতকারী ব্যক্তিরা অতর্কিতভাবে পৌরসভা ভবনের দ্বিতীয় তলায় মেয়রের কক্ষ ভাঙচুর করে। তাঁরা এ সময় মেয়রকে খোঁজাখুঁজি করেন। তবে তখন তিনি অফিসে ছিলেন না।
দুপুর পৌনে একটার দিকে সরেজমিনে পৌরসভা কার্যালয়ে গেলে মেয়রের কক্ষের ভিতররে ভাঙা দরজার কাচ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়। হামলাকারীরা মেয়রের কক্ষে প্রবেশের দরজা, চেয়ার টেবিল, টিভি, এসি, শোকেস ও নামফলক ভাঙচুর করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বেতাগী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র এবিএম গোলাম কবিরসহ শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা আত্মগোপনে চলে যান। এরই মধ্যে গত ১২ আগস্ট সোমবার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৃণমূলের নেতাকর্মীদের চাঙা থাকতে ও ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালনের জন্য নির্দেশনা দিতে বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবিরের সাথে মুঠোফোনে কথা বলেন।
ওই সময় পৌর মেয়র এবিএম গোলাম কবিরকে সেখানে প্রকাশ্যে দেখা যায়। এর দুইদিন পর ১৪ আগস্ট পুলিশ জাহাঙ্গীর কবিরকে আটক করলে পৌর মেয়র এবিএম গোলাম কবির আবার আত্মগোপনে চলে যান। শনিবার থেকে গুঞ্জন ছিল রোববার তিনি পৌরসভায় অফিস করবেন এবং হামলার আগে তিনি পৌর ভবনে অবস্থান করছিলেন এমনটাই একটি সূত্র নিশ্চিত করেন।
বেতাগী পৌর সভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিএবিএম গোলাম কবির বলেন, তিনি পৌর কার্যালয় অবস্থান করছিলেন। খবর পেয়ে বের হওয়ার কিছুক্ষণ পরই ভবনে হামলা-ভাঙচুর চালিয়ে মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। বিএনপির লোকজন এই হামলা চালিয়েছে। আমি এ ধরনের হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানাই।
বেতাগী পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী জসিম উদ্দিন জানান, এক দল দুস্কৃতকারী ব্যক্তিরা পৌর ভবন ভাঙচুর করে। এ বিষয় ইতোমধ্যে অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে এবং থানায় মামলা করা হবে।
অবশ্য এ বিষয় বেতাগী উপজেলা বিএনপির আহবায়ক মো. হুমায়ূন কবির বলেন, পৌরসভা কার্যালয়ে হামলার কথা শুনেছি। এর সাথে আমার দলীয় কোন লোক জড়িত নয়। উপজেলা আওয়ামী লীগের মধ্যে দলীয় কোঁন্দলের কারণে এ হামলা হয়েছে।
গত জানুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং সদ্য অনুষ্ঠিত উপজেলা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন কেন্দ্র করে মেয়র গোলাম কবির তার দলের সাধারণ সম্পাদকের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এর বহি:প্রকাশ হিসেবেই তাঁদের মধ্যের কোন এক পক্ষ এই ভাংচুরের ঘটনা ঘটিয়ে উল্টো বিএনপিকে দোষারোপ করতে চাইছে।
বেতাগী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মাহবুবুর রহমান জানান, পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। অভিযোগ পেলে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বেতাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ফারুক আহমেদ বলেন, পৌরসভায় হামলার খবর শুনে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। কারা হামলা চালিয়েছে তা জানা যায়নি। তবে আমরা তদন্ত করছি।