বিষখালী নদীর রুহিতার চরের জমি দখলের চেষ্টা ও ফসল কেটে বিনষ্ট
বেতাগী (বরগুনা) প্রতিনিধি
বরগুনার বেতাগীতে বিষখালী নদীর কোলঘেঁষে জেগে ওঠা রুহিতার চর দখলের চেষ্টা ও চাষাবাদকৃত ধান ও সবজি মহিষ এবং গরু দিয়ে খাওয়ানো ও কেটে নিয়ে গেছে এমনই অভিযোগ করেছেন উপজেলার নদী ভাঙনের শিকার অসহায় কৃষকরা।
শনিবার বামনা উপজেলার কতিপয় ভূমিদস্যু জবর দখলের তান্ডব চালিয়ে চরের চাষাবাদকৃত মহিষ ও গরু দিয়ে ধান খাওয়ানো ও কেটে নিয়ে গেছে। অসহায় কৃষকরা ইতোমধ্যে মানববন্ধন এবং সহায়তা চেয়ে পহেলা জানুয়ারী বরগুনা জেলা প্রশাসকের সাথে দেখা করে।
স্থানীয়রা জানায়, বিষখালী নদীতে জেগে ওঠা উপজেলা সাথে বিচ্ছিন্ন রুহিতার চরটি আড়াইশত একর জমি নিয়ে বিষখালীর বুকে দৃশ্যমান রয়েছে। কৃষিতে অপার সম্ভাবনাময় জেগে ওঠা এই চরটি দেশের উপক’লীয়জনপদ বেতাগী উপজেলার সীমানার বিষখালী নদীর কুল ঘেষে গড়ে ওঠা বুড়ামজুমদার ইউনিয়নের ৪৭ নং বলাইবুনিয়া ও ৫২ নং তালবাড়ি মৌজার বাসিন্দাদের জমি নদীতে ভেঙে চর জেগে ওঠে এবং বেতাগী অংশের সম্পত্তি ও আগ থেকেই নথিভুক্ত।
অভিযোগে জানা গেছে, গত বছরের ৯ ডিসেম্বর ও চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি দুই দফায় বামনার কিছু ভূমিদস্যুরা হঠাৎ ট্রলারে করে এসে চরে ঢুকে খেসারি ঢাল, সবজি বেগুন, বাধা কপি, মরিচ খেত কেটে ও বিনষ্ট করে ফেলছে। জোর পূর্বক জমিতে কুমাড় বিচি সড়িষা বুনিয়েছে। বাধাঁ দেওয়া চেষ্টা করলে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে আসায় তারা ভয়ে ও আতঙ্কে ভ’গছে। ফলে বর্তমানে ধান কেটে তুলে চাষাবাদ করতে পারছেন না। এমনকি গরু ছাগলকেও ঘাস খাওয়াতে পারছেনা। বাধা দেওয়া চেষ্টা করলে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। এতে তারা ভয়ে ও আতঙ্কে ভ’গছে।
তাই বছরের পর বছর ধরে ভাঙন কবলিত বেতাগী উপজেলার সাধারন ও ভূমিহীন মানুষেরা বিষখালী নদীর তীরের রুহিতার চরের জমিতে চাষাবাদকরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল। কিন্ত দু:খের বিষয় বেতাগী উপজেলার সম্পত্তি হিসেবে নথিভুক্ত ঐ চরের জমি নদীর অপর তীরের বামনা উপজেলার কতিপয় ভূমিদস্যু ২০২৪ সালের ১৮ নভেম্বর থেকে দাবি করে তাদের আওতায় নেওয়ার মরিয়া হয়ে উঠেছে।
নদী ভাঙনকবলিত ঐ এলাকার বাসিন্দা আব্দুস সোবাহান হাওলাদার অভিযোগ করেন, এইচরটির একটি অংশ নিয়ে নিয়ে বামনা উপজেলার সাথে দীর্ঘ বছর ধরে বিরোধ ছিলো। তবে সর্বশেষ গত ১৯ ডিসেম্বর বেতাগী ও বামনা উপজেলা ভ’মি অফিস সীমানা নির্ধারন করে অস্থায়ীভাবে বাস পুতে দেয়। কিন্ত দু:খের বিষয় এর পরেও নদীর অপর তীরের বামনা উপজেলার ভূমিদস্যুরা থামছে না।
যহেতু রুহিতার চরটি বেতাগী উপজেলা অংশের সরকারি সম্পত্তি ও আগ থেকেই নথিভুক্ত। স্বাভাবিকভাবে এ উপজেলার মানুষ চরের জমি ভোগদখল করবে এটাই নিয়ম এটাকে কখনো ভাঙনে সর্বহারা মানুষগুলো জান দেবেন কিন্ত জমি হাতছাড়া করতে দেবেনা। এই চরটির যাতে হাতবদল না হয়- এ কারণে গত ১১ ডিসেম্বর উপজেলা পরিষদের সম্মুখে মানববন্ধন করে অসহায় এলাকাবাসী। এ সময় স্থায়ী বন্দোবস্তে দ্রæত পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের কাছে এমন দাবি করেন বক্তারা।
মানববন্ধন কর্মসূচিতে বলাইবুনিয়া ও তালবাড়ি গ্রামের ভাঙনে নি:স্ব প্রায় শতাধিক সাধারন ও ভূমিহীন কৃষক এতে অংশ নেন। মানববন্ধনে বক্তব্য দেন- ঐ এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রব সিকদার, আব্দুর রাজ্জাক, মিরাজ হোসেন, মো: শহীদ মৃধা, মামুন মৃধা, মো: সিদ্দীক, মো: সোহরাব সিকদার, কামাল হোসেন, মো: ইউসুফ, মো: নেছার ও মো: শুক্কুর।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুর রব সিকদার জানান, আমরা পহেলা জানুয়ারী বরগুনা জেলা প্রশাসক স্যারের সাথে দেখা করে ছিলাম। তিনি দুই উপজেলার ইউএনও স্যারদের হস্তক্ষেপে বিরোধ মীমাংসার নিদের্শ দিয়েছেন। সেই অনুযায়ী ইউএনও স্যারদের উপস্থিতে ৬ জানুয়ারী রুহিতার চরে গিয়ে সকলের সাথে বৈঠকের কথা রয়েছে এমনটা উভয়পক্ষকে জানানো হয়েছে। কিন্ত দু:খের বিষয় তারা কোন কিছু মানছেন না। ৪ জানুয়ারি কতিপয় ভূমিদস্যু জবর দখলের তান্ডব চালিয়ে চরের চাষাবাদকৃত মহিষ ও গরু দিয়ে ধান খাওয়ানো ও কেটে নিয়ে গেছে। আমরা কোন ধরনের হানাহানি চাই না। প্রশাসন যে সিদ্বান্ত দেন তা আমারা মেনে নেবো।
জানতে চাইলে বেতাগী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: বশির গাজী জানান, বিষয়টি নিয়ে বরগুনা জেলা প্রশাসক স্যার আমি সহ বামনা উপজেলার ইউএনওকে নির্দেশ দিয়েছেন। সেই অনুসারে উভয় এলাকার লোকজন নিয়ে রুহিতার চর এলাকায় বসার কথা রয়েছে। আমরা এর একটা সঠিক সমাধানে পৌঁছতে পারবো বলে আশা রাখি।
বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, এ নিয়ে কোন ধরনের শঙ্কা ও উৎকন্ঠার কারণ নেই। বিষয়টি সুষ্ঠভাবে সমাধানের জন্য দুই উপজেলার ইউএনওদের নির্দেশ দিয়েছি। আশা করি তারা যতদ্রুত সম্ভব এর সমাধান করতে পারবেন।