ডার্ক মোড
Sunday, 08 September 2024
ePaper   
Logo
বিজ্ঞানের জ্ঞান আহরণের কৌশল

বিজ্ঞানের জ্ঞান আহরণের কৌশল

মোঃ জাহিদুল ইসলাম

আমি হব জ্ঞানী না বিজ্ঞানী। জ্ঞানী এবং বিজ্ঞানের মধ্যে পার্থক্যটা কোথায়। এ বিষয়ে আমাদের ধারণাটাও বা কতটুকু। মূলত জ্ঞানী এবং বিজ্ঞানী এক কথা নয়। অনেক জ্ঞানী হলোই যে বিজ্ঞানী হওয়া যাবে বিষয়টি তা নয়।সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে পৃথিবীতে আমাদের আগমনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সৃষ্টিকর্তার বৈজ্ঞানিক জ্ঞানকে অন্বেষণ করা অর্থাৎ খুঁজে বেড়ানো। আজ পর্যন্ত যারা পৃথিবীর বড় বড় বিজ্ঞানী এবং জ্ঞানী হয়েছেন তারা প্রত্যেকেই সব সময় কোন না কিছু আবিষ্কারের নেশায় সর্বদাই বিজ্ঞানের জ্ঞানে মগ্ন থাকতেন।

অজানা রহস্যের গভীরতা থেকে সেই রহস্যের উদঘাটন করার পাশাপাশি অদৃশ্যকে দেখার শক্তিকে জয় করার অসম্ভবকে সম্ভবে রূপান্তরিত করাই হচ্ছে বিজ্ঞানকে জানা। সৃষ্টির শুরু থেকে আজ পর্যন্ত বিজ্ঞানের সকল আবিষ্কার গুলো ঘটেছে বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে এবং প্রয়োজনের তাগিদে। সভ্যতার শুরুতে বেঁচে থাকার লড়াইয়ের জন্য তখন মানুষ আবিষ্কার করেছিল আগুন জ্বালানোর কৌশল। প্রকৃতপক্ষে বিজ্ঞান হলো পরীক্ষালব্ধ জ্ঞান। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে যে বিষয়গুলো সত্য হিসেবে প্রমাণিত হয় তাই বিজ্ঞান গ্রহণ করে। পরমাণু মৌলিক পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণা এবং অবিভাজ্য। কিন্তু পরবর্তীতে প্রমাণিত হল যে পরমাণুকেও ভাঙা বা বিশ্লেষণ করা সম্ভব। মানবকল্যাণে কাজে লাগবে এমন কিছু বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার উদঘাটন করাই হচ্ছে একজন প্রকৃত বিজ্ঞানীর মূল উদ্দেশ্য এবং মহত্ব।

অনেক জ্ঞানী অথবা অনেক শিক্ষিত হয়ে সেই জ্ঞান-বিজ্ঞানের সকল ভান্ডার নিজের মধ্যে রেখে দিলে সেটা কিন্তু কোন কাজে আসে না। এই পুঁথিগত বিদ্যা সত্যিকার অর্থে মূল্যহীন ।এখন আমরা যদি চাই খুব জ্ঞানী হতে তাহলে সেটাও সম্ভব। আপরদিকে আমরা যদি চাই যে বিজ্ঞানী হতে সেটাও পারবো। এটা নির্ভর করে আমাদের নিজস্ব বাস্তবতার ওপর। নিজের একান্ত চেষ্টায় যতটুকুই পারা যায় নিজ থেকে কিছু আবিষ্কার করে সেটা মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করাটাই হচ্ছে প্রকৃত শিক্ষা। আর এই শিক্ষার আলোটা চারিদিকে ছড়িয়ে দেওয়াই হচ্ছে প্রকৃত মনুষত্ব।

হোক না এরকম যে আমরা একটি বিষয় নিয়ে কল্পনা করেছি। কিন্তু আবিষ্কার করতে পারেনি। অন্য একজন আবিষ্কার করেছে তাতে ক্ষতিই বা কি। সে আবিষ্কারটি যদি সবার উপকারে আসে তাহলে এটাই হচ্ছে একজন প্রকৃত বিজ্ঞানীর সবচেয়ে বড় পাওয়া। একজন প্রকৃত বিজ্ঞানী মানব কল্যাণে তার আবিষ্কৃত প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহারে সবচেয়ে বেশি আত্ম তৃপ্তি পায়। একজন আবিষ্কারকের কাছে তাহার আবিষ্কার তার জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ।

একটা আবিষ্কারের সবচেয়ে বড় অবদান এটাই যে সে আবিষ্কার তার আবিষ্কারকের পরিচয় সবার সামনে তুলে ধরে। ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যাবে যারা প্রকৃত বিজ্ঞানী তাদের কিন্তু বড় বড় ডিগ্রী নেই। কিন্তু তাদের কাছে ছিল জ্ঞানের ভান্ডার। তারা জ্ঞানের সাগরে সব সময় নিমজ্জিত ছিলেন। আমরা সবাই স্বপ্ন দেখি যে আমি বড় হয়ে পড়ালেখা করে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, লেখক, কবি, সাহিত্যিক, শিক্ষক,গায়ক, খেলোয়াড় কত কিছুই না হব। কিন্তু আমি বড় হয়ে বিজ্ঞানী হব এটা আসলে অনেক সময় আমরা ভেবেও ভয়ে দূরে সরে আসি। মূলত এই ভয়টাকে জয় করতে পারলেই আমরা বিজ্ঞানী হতে পারব। খুব বড় বড় আবিষ্কার না করে ছোট ছোট আবিষ্কার থেকেও আমরা বিজ্ঞানী হতে পারি।

বিজ্ঞানের আলোয় আলোকিত হয়ে মানবজাতি এবং বিশ্বের কল্যাণে আবিষ্কৃত যে কোন উদ্ভাবন করাই একজন প্রকৃত বিজ্ঞানের আসল গুরুত্ব বহন করে।আমাদের চারপাশের পরিবেশে অসংখ্য জিনিস রয়েছে। যেগুলো নিয়ে একটু ভাবলে আমরা নিজেরাই বের করতে পারব আমরা কিভাবে বিজ্ঞানী হতে পারি।আমাদের চারিদিকে ভাবার মত অনেক কিছু আছে। আমি কি নিয়ে ভাববো এবং কি আবিষ্কার করব?

কি আবিষ্কার করার আছে আমার। এই কি, কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যে উত্তরের জন্ম দেয় সেটাই হচ্ছে আবিষ্কারের প্রথম সূত্র। নিজের চিন্তাশক্তিকে ভালো কাজে লাগাতে হবে। কোন কিছু উদ্ভাবনের দিকে ধাবিত হতে হবে। কাজ নেই বলে অলস সময় না কাটিয়ে ছোট ছোট জিনিস থেকেও অনেক বড় কিছু আবিষ্কার করা সম্ভব। এই বাস্তব বিষয়টি মনে ধারণ করতে হবে।উদ্ভিদের জীবন আছে এটা প্রমাণিত হয়েছে। তাহলে কাঠেরও কি জীবন রয়েছে। সে হিসেব মতে জড় পদার্থেরও কি জীবন রয়েছে৷ যদি উত্তর হা হয় তবে অনেক প্রশ্নের আবির্ভাব ঘটবে এবং সমাধানের জন্য নানান ব্যাখ্যা বিশ্লেষনের প্রয়োজন হবে। এসব জড় পদার্থের মধ্যে অনেক জড় পদার্থ বিদ্যুৎ পরিবাহী আবার অনেক জড় পদার্থ বিদ্যুৎ পরিবাহী নয়।একটি জড় পদার্থের মধ্যে যখন কম্পনের সৃষ্টি হয় সেই কম্পন কিন্তু সেই জড় পদার্থের একটি পরমাণু থেকে আরেকটি পরমাণুতে কম্পন সৃষ্টির মাধ্যমে তথ্যের আদান প্রদান ঘটায়।

প্রত্যেক বস্তু অনু, পরমাণু দিয়ে গঠিত। ওই পরমাণুকে বিশ্লেষণ করলে অথবা ভাঙলে ইলেকট্রন প্রোটন এবং নিউট্রন পাওয়া যায়। প্রতিটি পদার্থই জড় পদার্থকে আঘাত করলে বিপরীতমুখী আঘাত প্রদান করে। অর্থাৎ ক্রিয়ার ফলে প্রতিক্রিয়া রয়েছে তাদের। হয়তো আমরা এসব জড় পদার্থের শব্দ শুনতে পাই না এবং তাদের প্রকৃত আকৃতির ডাইমেনশন দেখতে পাই না। কারণ আমাদের শ্রবণ এবং দৃষ্টি সীমার একটি নির্দিষ্ট পরিসীমা রয়েছে।অন্য শ্রবণসীমায় তাদের শব্দ এবং ডাইমেনশনে তাদের আচরণ ভালোভাবে বোঝা যাবে। বিশ্বে যা কিছু আছে সবকিছুর কম্পন (স্পন্দন) রয়েছে। এই মহাবিশ্বে এবং বিশ্বে এমন কিছু আছে যেগুলো রহস্যের চাদরে আবৃত।

এসব রহস্যের চাদর বিজ্ঞানের পক্ষে উদ্ভাবন করা এখন পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। আমরা মানুষের একটি নির্দিষ্ট পরিসীমার মাঝের শব্দের কম্পাঙ্কের শব্দগুলো শুনতে পাই। এই কম্পাঙ্কের উপরের এবং নিচের শব্দ আমরা শুনতে পাই না। তদ্রুপ আমরা মানুষের অনেক কিছু দেখতে পারিনা। আমাদের দৃশ্যমান আলোর একটি নির্দিষ্ট ইলেকট্রোম্যাগনেটি আলোক বর্ণালী (ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক স্প্রেকট্রাম) সীমানা রয়েছে। এই আলোক বর্ণালীর সীমানার উপরের বা নিচের আলোক আমরা দেখতে পাই না। জেমস ওয়েবের মহাকাশ দূরবীক্ষণ যন্ত্র ইনফ্রারেড আলোক রশ্মি ব্যবহার করে এমন সব কিছু দেখতে গিয়েছিল যা কখনোই আগে দেখা যায়নি। যদি আমরা সকল আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য দেখতে পেতাম তাহলে আমরাও প্রত্যেকটি বস্তুর আসল আকার দেখতে পেতাম। অস্বাভাবিকভাবে হঠাৎ করে যদি কারো দৃষ্টির আলোকশক্তি নির্দিষ্ট সীমার উপরে চলে আসে বা নিচে নেমে যায় তখন হয়তো অদ্ভুত কিছু চোখের দৃষ্টিতে ধরা পড়বে।

আবার একই ভাবে অস্বাভাবিকভাবে এমনও হতে পারে যে শ্রবণসীমার উপরের এবং নিচের কম্পাঙ্ক আমাদের কানে চলে আসে তাহলে আমরা অদ্ভুত কিছুই শুনতে পাবো। এভাবে অজানাকে জানা আরও সহজ হতো যদি কিছু দেখে এবং শুনে ভয় না পাওয়া যেত। সকল ভয়ের সামনে জয় সুনিশ্চিত। চুম্বকের দুটি মেরু রয়েছে। দুটি চুম্বক পাশাপাশি রাখলে দেখা যে তারা একদিকে যেমন পরস্পরকে আকর্ষণ করছে অন্যদিকে পরস্পরকে বিকর্ষণ করছে। এই আকর্ষণ ও বিকর্ষণ সংঘটিত হয় জড় পদার্থের সম্পূর্ণ নিজস্ব ভাষার দ্বারা। অর্থাৎ জড় পদার্থেরও নিজস্ব ভাষা রয়েছে। তাদের সেই ভাষাগুলো তারা নিজেরাই বুঝতে সক্ষম। এই ভাষাকে উপলব্ধি করে আমরা যতটুকু পারি জড় পদার্থকে সপূর্ণরূপ কাজে লাগাতে পারি। যুক্তি দিয়েই প্রযুক্তিকে দাঁড় করাতে হবে। প্রযুক্তির পেছনে যুক্তিসঙ্গত প্রস্তাবনা উপস্থাপন করতে হবে।

যে প্রযুক্তি দাঁড় করাবো সেই প্রযুক্তির মাঝে নির্ভরযোগ্য যতটুকু উপস্থাপনা বাস্তব সম্মতভাবে উপস্থাপন করা যাবে প্রযুক্তি নির্ভরতা ততোই গ্রহণযোগ্যতা পাবে।এভাবে সূত্র ধরে এগিয়ে যেতে থাকলে আমরা প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার করতে পারব। পৃথিবীর সৃষ্টির শুরু থেকে যুগ থেকে যুগান্তর ধরে প্রকৃতিকে বশ করার প্রতিনিয়তই চেষ্টা করে যাচ্ছে বিজ্ঞান। প্রকৃতিকে নিজের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার জন্য প্রকৃতি থেকে জ্ঞান আহরণ করে সেই জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে বিজ্ঞান আজ প্রতিষ্ঠিত করেছে আধুনিক প্রযুক্তির উন্নত মানব সভ্যতা।

লেখক, নেটওয়ার্ক টেকনিশিয়ান (আইসিটি সেল) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন