ডার্ক মোড
Saturday, 27 April 2024
ePaper   
Logo
বালুমহাল আইনের প্রস্তাবে গুরুত্ব পাচ্ছে খাদ্য নিরাপত্তা ও পরিবেশ সুরক্ষা

বালুমহাল আইনের প্রস্তাবে গুরুত্ব পাচ্ছে খাদ্য নিরাপত্তা ও পরিবেশ সুরক্ষা

নিজস্ব প্রতিবেদক

‘বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) আইন-২০২২’ এর খসড়ায় খাদ্য নিরাপত্তা, পরিবেশ সুরক্ষা এবং স্মার্ট বালুমহাল ব্যবস্থাপনায় জোর দেওয়া হয়েছে। গত ৩১ অক্টোবর তারিখে এই আইনের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রীসভা। ভূমিসেবা ডিজিটালাইজেশনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে যেন খসড়াকৃত ভূমি সম্পর্কিত আইনগুলো পাসের উদ্দেশ্যে যেন দ্রুত ও কার্যকরীভাবে সংসদে পাঠানো যায় সেই ব্যাপারে ভূমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সুস্পষ্ট নির্দেশনা আছে।

বালুমহাল ইজারা প্রদান সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন, বালুমহাল হতে পরিকল্পিতভাবে বালু ও মাটি উত্তোলন এবং বিপণন, এর নিয়ন্ত্রণ, এই সংক্রান্ত সংঘটিত অপরাধসমূহ দমনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

এর সাথে বালুমহাল ব্যবস্থাপনা সার্বিকভাবে যুগোপযোগী করার জন্য 'বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০' এর সংশোধনীর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। বালুমহাল ইজারা প্রদান বাবদ রাষ্ট্রীয় কোষাগারের বছরে গড়ে প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ কোটি টাকা আয় হয়। প্রস্তাবিত ‘বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) আইন-২০২২’ এর খসড়ায় সংযুক্ত প্রধান প্রধান বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- ব্যক্তি মালিকানাধীন উর্বর কৃষি জমি রক্ষা, কৃষি জমির উপরিভাগের উর্বর মাটি সংরক্ষণের ব্যবস্থাসহ ভূগর্ভস্থ বালু বা মাটি উত্তোলনের ফলে উক্ত জমিসহ পার্শ্ববর্তী অন্য জমি বা প্রতিবেশের যাতে ক্ষতি সাধন না হয় তা বন্ধ করার বিধান।

এছাড়া, পরিবেশের ক্ষতি সাধিত হয় কিংবা পার্শ্ববর্তী ভূমির ক্ষতি, চ্যুতি বা ধসের কারণ উদ্ভব হয় এমন কোনো ব্যক্তি মালিকানাধীন ভূমি হতেও কোনো বালু বা মাটি উত্তোলন না করার বিধান রাখা হয়েছে প্রস্তাবিত আইনে।

ইজারা কার্যক্রম দ্রুত অনলাইনে সম্পাদন, বালু উত্তোলন কার্যক্রম ও পরিমাণ মনিটরিং করার জন্য স্যাটেলাইট ডাটা ব্যবহার বা সিসি ক্যামেরা স্থাপন বা ৬ মাস পর পর ডিজিটাল সার্ভে করার বিধান রাখা হয়েছে প্রস্তাবিত সংশোধিত আইনে।

সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমের প্রয়োজনে বা জনগুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য ইজারা বহির্ভূত বালুমহাল ও অন্য এলাকা হতে বালু বা মাটি উত্তোলন ও ব্যবস্থাপনা, নির্ধারিত নৌপথের বাইরে হাইড্রোগ্রাফিক জরিপের প্রযোজ্য না হওয়া, এবং ইজারা বহির্ভূত থাকা বালুমহাল থেকে খাস আদায় পদ্ধতিতে বালু-মাটি উত্তোলনের বিধান এই প্রস্তাবিত আইনে সন্নিবেশ করা হয়েছে।

অসাধু ব্যক্তিদের অপতৎপরতা রোধ করার জন্য যেসব বিধান সংযুক্ত করা হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- ইজারার শর্ত ভঙ্গকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করা, অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের অবৈধ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের, অপরাধের সরঞ্জাম বাজেয়াপ্তকরণ ও ক্ষতিপূরণ আদায় ইত্যাদি।

এছাড়া, উত্তোলিত বালু পরিবহনের কারণে কোনো রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা বালু পরিবহনকারী কর্তৃক মেরামত করে দেওয়া বা ক্ষতিপূরণ আদায়ের বিধান এবং ইজারা বহির্ভূত থাকা বালুমহাল থেকে খাস আদায় পদ্ধতিতে বালু-মাটি উত্তোলনের বিধান এই আইনের খসড়ায় প্রস্তাব করা হয়েছে।

ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ‘বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) আইন-২০২২’ মন্ত্রী পরিষদে পাস হওয়ার সাথে সাথে এই আইন প্রণয়নের প্রাথমিক কার্যক্রম শেষ হলো। এখন আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাহায্য চূড়ান্ত খসড়া তৈরি করে পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য সংসদ সচিবালয়ে জাতীয় সংসদে আইন পাসের জন্য বিল উত্থাপনের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঠানো হবে।

ভূমি মন্ত্রণালয় ডিজিটাল সেবা প্রবর্তনের পাশাপাশি আইন ও বিধি-বিধান সংশোধন করে, এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে নতুন আইনের খসড়া করে টেকসই ভূমি ব্যবস্থাপনা স্থাপনে জোর দিচ্ছে। এই আইন ছাড়াও উল্লেখযোগ্য নতুন যে সব আইন নিয়ে কাজ করা হচ্ছে তারমধ্যে অন্যতম ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ভূমি সংস্কার আইন, ভূমি উন্নয়ন কর আইন, হাট ও বাজার স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা আইন, ভূমি মালিকানা ও ব্যবহার আইন ইত্যাদি।

বালুমহাল বলতে পরিবেশ অক্ষুণ্ণ রেখে আহরণযোগ্য বা উত্তোলনযোগ্য বালু (খনিজ বালু ও সিলিকা বালু ব্যতীত) বা মাটি (মটলড্ ক্লে, শেল বা ক্লে এবং চায়না ক্লে ব্যতীত) বা অন্যান্য বালু মিশ্রিত মাটি সংরক্ষিত আছে এমন কোনো উন্মুক্ত স্থান, চা বাগানের ছড়া বা নদীর তলদেশ যা সংশ্লিষ্ট আইনের অধীন জেলা প্রশাসক কর্তৃক বালুমহাল হিসেবে ঘোষিত।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন