ডার্ক মোড
Thursday, 02 May 2024
ePaper   
Logo
বরিশাল সিটি নির্বাচনে পাল্টে গেলো দৃশ্যপট

বরিশাল সিটি নির্বাচনে পাল্টে গেলো দৃশ্যপট

বিশেষ প্রতিনিধি

দীর্ঘ পাঁচ বছর পর বরিশাল বিভাগের কোনো দলীয় অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে গিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। এছাড়াও ওই অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং বাহাউদ্দিন নাছিম অংশ নিয়েছিলেন বলে জানিয়েছে একাধিক সংশ্লিষ্ট সূত্র।

সূত্রটি বলছে, এক সময়ে আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমদের পাল্টাপাল্টি আধিপত্য এবং জাহাঙ্গীর কবির নানকের আধিপত্য বরিশাল অঞ্চলে দেখা গেলেও আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহর উত্থানের মধ্য দিয়ে আমু, তোফায়েল এবং নানক বরিশাল অঞ্চল থেকে বের হয়ে রাজধানী কেন্দ্রীক রাজনীতি শুরু করেছিলেন। সেই থেকে এই অঞ্চলে আওয়ামী লীগের এসব বর্ষীয়ান নেতাদের খুব একটা বেশি দেখা যায়নি।

দলটির বর্ষীয়ান নেতা আমির হোসেন আমুকেও গত পাঁচ বছর বরিশালের কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে দেখা যায়নি। এ ঘটনাকে বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নয়া মেরুকরণের আভাস হিসেবেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আরও মনে করছেন, আগে বরিশালের রাজনীতি হয়ে পড়েছিল এককেন্দ্রিক। এখন সে ধারা থেকে রাজনীতি বের হয়ে আসছে। এটা আপাতত ইতিবাচক বলেই মনে হচ্ছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আমির হোসেন আমুর নির্বাচনী এলাকা ঝালকাঠি। গত পাঁচ বছরে তিনি বরিশালের ওপর দিয়ে বিভিন্ন সময় ঝালকাঠি গেছেন এক রকম নীরবে। মাঝেমধ্যে বরিশাল নগরে জীবনানন্দ দাশ সড়কে (বগুড়া রোড) তাঁর নিজ বাড়িতেও অবস্থান করতেন। সেখানে নেতা-কর্মীদের তেমন ভিড় থাকত না। তবে গতকাল শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) দিনভর নির্জন ওই বাড়িতে ছিল নেতা-কর্মীদের সমাগম; স্লোগানে স্লোগানে মুখর বাড়ির আঙ্গিনা।

সূত্র জানায়, শুক্রবার বিকেলে কয়েক শ’ মোটরসাইকেল ও গাড়ির বহর নিয়ে আমির হোসেন আমুকে নিয়ে যাওয়া হয় বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ- মনোনীত মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহর প্রধান নির্বাচনী কার্যালয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তিনি। অনুষ্ঠানে দলের সভাপতিমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বিশেষ অতিথি ছিলেন। বরিশাল সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দোয়া ও মোনাজাতে অংশ নেন এই নেতারা। দীর্ঘদিন পর বরিশালে দলীয় কোনো কর্মসূচিতে আমির হোসেন আমুর প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেওয়ার বিষয়টি নানা মহলে আলোচিত হচ্ছে।

এদিকে বরিশাল নগরের বিভিন্ন স্থানে এখন শোভা পাচ্ছে আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের ব্যানার। বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এসব ব্যানার-পোষ্টার দিয়ে সাজানো হয়েছে সমস্ত নির্বাচনী এলাকা। সেখানে আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ কিংবা তার ছেলে সাদিক আব্দুল্লাহর কোনো চিহ্ন নেই।

এসব বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, বরিশাল অঞ্চলের রাজনীতিতে আমির হোসন আমু একজন প্রভাবশালী নেতা। বরিশালের সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরণের মৃত্যুর পর ক্রমেই বরিশালের রাজনীতিতে একক প্রভাববলয় তৈরি হতে থাকে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর। তিনি বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে আছেন।

তাঁর বড় ছেলে সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ ২০১৮ সালে সিটি করপোরেশনের মেয়র এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর বরিশালের রাজনীতির প্রাণপুরুষ হয়ে ওঠেন আবুল হাসানাত। এতে আমির হোসেন রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়েন। গত পাঁচ বছর এ জন্য তাঁকে বরিশালের কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা যায়নি। তবে আসন্ন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাদিক আবদুল্লাহ দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ার পর থেকে পাল্টাতে শুরু করেছে দৃশ্যপট।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর ছোট ভাই আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত দলীয় মনোনয়ন পাওয়ায় বর্তমান মেয়র সাদিক আবুদল্লাহ ও তাঁর সমর্থকেরা হতাশ।

এর মধ্য দিয়ে বরিশালে পাঁচ বছর ধরে সাদিক আবদুল্লাহর একক আধিপত্য খর্ব হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে তাঁর বাবার রাজনীতিতেও। বর্ষীয়ান নেতা আমির হোসেন আমুর দীর্ঘদিন পর বরিশালে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যোগদান এরই ইঙ্গিত বলে মনে হচ্ছে। তবে দক্ষিণাঞ্চলের সব বর্ষীয়ান নেতারই যথাযথ মূল্যায়ন, সম্মান ও মর্যাদা নিশ্চিত করা উচিত।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন