
বরিশালে মাদকসেবী সোলায়মান কে সালাম না দেওয়ায় মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে তরুণ প্রকৌশলী রাফি:কাঁদছে ভাষানচরবাসী
মাসুদ রানা, বরিশাল ব্যুরো
আমার ছেলেটা শুধু সালাম না দেওয়ার কারণে এমন নিষ্ঠুরতার শিকার হলো,এটা কি কোনো সভ্য সমাজ হতে পারে চোখে পানি আর কণ্ঠে কান্না নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন রাফি নামে এক তরুণ প্রকৌশলী মা।
রাফির মা বলছিলেন, আমার ছেলে কারও সঙ্গে ঝগড়া করে না। খুব শান্ত স্বভাবের। শুধু সালাম না দেওয়ার কারণে আর যেন কারও সন্তানকে এমনভাবে হত্যা চেষ্টা না করা হয়। পাশেই বসে ছিলেন রাফির বাবা তিনিও কান্না কণ্ঠে বলেন, আমি সামান্য আয়ের মানুষ। চিকিৎসার খরচ চালাতে গিয়ে এখন সর্বস্বান্ত। আমার একটাই চাওয়া আমার ছেলেকে হত্যার চেষ্টাকারীদের বিচার হোক। এমন পাষণ্ডদের যেন কেউ ছাড় না দেয়।
গত ২ মে (শুক্রবার) সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে ভাষানচরের তরুণ রাফি মোল্লাকে কেবলমাত্র সালাম না দেওয়ার অজুহাতে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা চেষ্টা করা হয়। অভিযুক্ত সোলায়মান পূর্ব পরিকল্পিতভাবে রাফিকে তার বাড়ির কাছেই পথরোধ করে মাথায় হাতুড়ি দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাফি কিছু বুঝে ওঠার আগেই তার মাথা ফেটে যায়, দাঁত ভেঙে যায় এবং সে রক্তাক্ত অবস্থায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে।
পরিবারের লোকজন ও স্থানীয়রা দ্রুত রাফিকে উদ্ধার করে প্রথমে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু সেখানে অবস্থার অবনতি ঘটায় তাকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে সে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (ICU) মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। রাফি একটি হাসপাতালের বেডে চোখ-মুখ ফুলে যাওয়া ও মুখে অক্সিজেন টিউব লাগানো অবস্থায় নিস্তেজ পড়ে আছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সোলায়মান দীর্ঘদিন ধরেই এলাকায় চুরি, মাদক সেবন ও বিক্রি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি এবং হুমকি-ধামকির সঙ্গে জড়িত। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাব ও প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণে সে আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে বারবার মুক্তি পেয়ে আসছে।
আহত রাফির চাচা ইউনুস মোল্লা বাদী হয়ে কাজিরহাট থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন (মামলা নম্বর: ০১, তারিখ: ০২ মে ২০২৫)। মামলায় ৩৪১/৩২৫/৩২৬/৩০৭ ধারায় অভিযোগ আনা হয়। মামলা দায়েরের পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে সোলায়মান হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করে এবং ঘটনাস্থল থেকে রক্তমাখা হাতুড়িও উদ্ধার করে।
৬ মে ভাষানচরের দফাদার বাজারে প্রায় চার শতাধিক মানুষ, যার মধ্যে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, রাজনৈতিক নেতা ও সাধারণ গ্রামবাসী একত্র হয়ে বিশাল মানববন্ধন করেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ছিল,উত্তর ভাষানচর এছহাকিয়া দাখিল মাদ্রাসা, নবারুন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, এস এম মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ভাষানচর বিদ্যানন্দপুর কলেজ।
এ সময় বক্তারা বলেন, একজন নিরীহ তরুণকে কেবলমাত্র সালাম না দেওয়ার কারণে পিটিয়ে মারার চেষ্টা করা কোনো সভ্য সমাজে কল্পনাও করা যায় না। আমরা এর বিচার চাই। নইলে আগামী ভিকটিম হতে পারে আমাদের সন্তান।
মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন সমাজসেবক ইকবাল হক নিজাম এবং বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ আলম হাওলাদারসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যক্তিত্ব। সবার একটাই দাবি,সোলায়মানের মতো অপরাধীদের দ্রুত বিচার করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে, নইলে ভাষানচরের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।
বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার ভাষানচর ইউনিয়ন যেন পরিণত হয়েছে মাদকের রাজ্য ও সন্ত্রাসের অভয়ারণ্যে। বছরের পর বছর ধরে এলাকাবাসী আতঙ্কে দিন কাটালেও, সম্প্রতি যে ঘটনা ঘটেছে তা ভাষানচরবাসীর অন্তরে রক্তক্ষরণ ঘটিয়েছে।