ডার্ক মোড
Saturday, 18 May 2024
ePaper   
Logo
পাকিস্তানে আর্দ্র এপ্রিলের রেকর্ড, নজিরবিহীন বৃষ্টি-বন্যা

পাকিস্তানে আর্দ্র এপ্রিলের রেকর্ড, নজিরবিহীন বৃষ্টি-বন্যা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

১৯৬১ সালের পর ইতিহাসের সবচেয়ে আর্দ্র এপ্রিল মাসের রেকর্ড হয়েছে পাকিস্তানে। গত এপ্রিলে দেশটিতে অন্যান্য মাসের স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। শনিবার পাকিস্তানের আবহাওয়া সংস্থার এক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি এই তথ্য জানিয়েছে।

শুক্রবার পাকিস্তানের আবহাওয়া বিভাগের প্রকাশিত মাসিক জলবায়ু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটিতে গত এপ্রিলে ৫৯ দশমিক ৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে; যা স্বাভাবিক গড় ২২ দশমিক ৫ মিলিমিটারের তুলনায় অনেক বেশি।

এতে বলা হয়েছে, ‘‘১৯৬১ সালের পর চলতি বছরের সবচেয়ে আর্দ্র এপ্রিলে ভারী বৃষ্টিপাত, বজ্রঝড় ও বাড়িঘর ধসে অন্তত ১৪৪ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।’’ পাকিস্তান ক্রমবর্ধমানভাবে অপ্রত্যাশিত আবহাওয়ার ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। একই সঙ্গে দেশটিতে প্রায়ই বিধ্বংসী মৌসুমী বৃষ্টিপাত হয়; যা সাধারণত জুলাই মাসে দেখা যায়।

এর আগে, ২০২২ সালের গ্রীষ্ম মৌসুমে নজিরবিহীন বৃষ্টিপাতের কারণে পাকিস্তানের এক তৃতীয়াংশ এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যায়। ওই সময় দেশটিতে ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ক্ষয়ক্ষতি হয় বলে বিশ্বব্যাংকের পরিসংখ্যানে জানানো হয়।

ওই প্রতিবেদন সম্পর্কে পাকিস্তানের আবহাওয়া বিভাগের মুখপাত্র জহির আহমদ বাবর বলেন, এর একটি প্রধান কারণ জলবায়ু পরিবর্তন; যা আমাদের অঞ্চলের অনিয়মিত আবহাওয়ার ধরনকে প্রভাবিত করছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাপপ্রবাহের কারণে এশিয়ার বেশিরভাগ অংশ পুড়লেও গত এপ্রিলে পাকিস্তানের জাতীয় মাসিক তাপমাত্রা ছিল ২৩ দশমিক ৬৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৭৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট)। যা গড় ২৪ দশমিক ৫৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের চেয়ে শূন্য দশমিক ৮৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম।

তবে ওই মাসে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ বেলুচিস্তানে। যা স্বাভাবিক সময়ের গড়ের তুলনায় ৪৩৭ শতাংশ বেশি।

কর্মকর্তাদের মতে, দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি জনসংখ্যার হিসেবে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম। বিশ্বব্যাপী গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনে এক শতাংশেরও কমের জন্য দায়ী দেশটি। কিন্তু বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে দেশটি চরম আবহাওয়ার জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

গত এপ্রিলে বৈরী আবহাওয়ার কারণে দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে সবচেয়ে বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। ওই প্রদেশে ৩৮ শিশু-সহ ৮৪ জন মারা গেছেন। আর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাড়ে তিন হাজারের বেশি বাড়িঘর।

জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ গত মাসে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকির প্রথম দিকে থাকা শিশুদের রক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে সংস্থাটি বলেছে, জলবায়ু সংকটের প্রভাবে পাকিস্তানের শিশুরা ‘অত্যন্ত উচ্চ ঝুঁকিতে’ রয়েছে।

ইউনিসেফ বলেছে, বন্যা কবলিত এলাকায় সাহায্যের উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তানে ৯৬ লাখ শিশুর মানবিক সহায়তার প্রয়োজন পড়ে।

পাকিস্তানের সবচেয়ে জনবহুল প্রদেশ ও অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত দেশটির রুটির ঝুড়ি-খ্যাত পাঞ্জাব প্রদেশের কিছু এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাত ও শিলাবৃষ্টির কারণে অন্যতম প্রধান খাদ্যশস্য গমের ফলনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সংস্থা ওসিএইচএর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আকস্মিক বন্যা বিস্তীর্ণ এলাকার ফসল বিশেষ করে গমের ব্যাপক ক্ষতি করেছে। তখন গম কাটার সময় হয়ে এসেছিল।

সূত্র: এএফপি।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন