ডার্ক মোড
Sunday, 08 September 2024
ePaper   
Logo
নিজেকে নির্দোষ দাবি করে শাহিন বললেন, ‘আমাকে ফাঁসানো হয়েছে’

নিজেকে নির্দোষ দাবি করে শাহিন বললেন, ‘আমাকে ফাঁসানো হয়েছে’

নিজস্ব প্রতিবেদক

কলকাতার নিউ টাউনে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যা ঘটনার মূলহোতা তারই বন্ধু যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আখতারুজ্জামান শাহিন বলে জানায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। সংস্থাটি জানায়, শাহিনই পাঁচ কোটি টাকার বিনিময়ে হত্যাকারীদের দিয়ে এমপি আনারকে হত্যা করান। তবে, বিষয়টি অস্বীকার করে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন অভিযুক্ত শাহিন। এ হত্যাকাণ্ডে তাকে ফাঁসানো হয়েছে বলেও দাবি করেছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (২৩ মে) একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলকে মোবাইল ফোনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই দাবি করেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী শাহিন।

সাক্ষাৎকারে শাহিন বলেন, আমি এ ঘটনার কিছুই জানতাম না। আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। আমি সেখানে ছিলাম না, আমি ভারতেও ছিলাম না। আমি আমার আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলেছে কারও সাথে কথা না বলতে। মানুষ বাংলাদেশে অনেক কথাই বলেন। তাদের কাছে যদি কোনও প্রমাণ থাকে, তাহলে তাদের দেখাতে বলেন। পুলিশের কাছে যদি কোনও তথ্য-প্রমাণ থাকে তাহলে তারা দেখাক। আমাকে বলা হচ্ছে এই ঘটনার মাস্টারমাইন্ড। এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।
কলকাতার যে ফ্ল্যাটে এমপি আনার খুন হয়েছেন, সেই ফ্ল্যাটটি আপনি ভাড়া করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠছে। এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি ভাড়া নিয়ে আমার ফ্ল্যাটে এ ধরনের কাজ করব! আমি এতই স্টুপিড যে এই ধরনের কাজ করলে আমার ফ্ল্যাটে করব?

হত্যাকারীদের ৫ কোটি টাকা দিয়েছেন কি না? এ প্রশ্নের জবাবে শাহিন বলেন, আমার পাসপোর্টের রেকর্ড দেখুন... যে আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। আমাকে বলা হচ্ছে আমি না কি ৫ কোটি টাকা দিয়েছি। কোথায় পেলাম আমি ৫ কোট টাকা? আমি কীভাবে টাকা দিয়েছি? এখন এসব কথা শোনা ছাড়া আমার আর কী করার আছে। ঘটনা যখন ঘটে, আমি তখন বাংলাদেশে ছিলাম। আমি পেপারে এই ঘটনা দেখেছি।

প্রসঙ্গত, গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ভারতের পশ্চিবঙ্গে যান এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার। সেদিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে কলকাতায় তার পারিবারিক বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের সঙ্গে দেখা করতে যান। পরের দিন, ১৩ মে চিকিৎসক দেখাতে হবে জানিয়ে দুপুর ১টা ৪১ মিনিটে গোপালের বাড়ি থেকে বের হন আনার। সন্ধ্যায় ফিরবেন বলেও জানান তিনি। পরে বিধান পার্কের কাছে কলকাতা পাবলিক স্কুলের সামনে থেকে ট্যাক্সিতে উঠেছিলেন তিনি।

চলে যাওয়ার পর সন্ধ্যায় আজিম তার বন্ধু গোপালকে জানান, তিনি দিল্লি যাচ্ছেন এবং সেখানে পৌঁছে তাকে ফোন করবেন। পরে তার সঙ্গে ভিআইপিরা আছেন জানিয়ে বন্ধু গোপালকে ফোন না দেওয়ার জন্য সতর্ক করেছিলেন।

গত ১৫ মে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো বার্তায় এমপি আনার বন্ধু গোপালকে জানান, তিনি দিল্লি পৌঁছেছেন এবং ভিআইপিদের সঙ্গে আছেন। তাকে ফোন করার দরকার নেই। একই বার্তা পাঠান বাংলাদেশে তার ব্যক্তিগত সহকারী রউফের কাছেও।

১৭ মে আনারের পরিবার তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে গোপালকে ফোন করেন। ওই সময় তারা গোপালকে জানান, তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না তারা। পরিবারের পক্ষ থেকে ওই দিনই ঢাকায় থানায় অভিযোগ করা হয়। এরপর থেকে এমপি আনারের খোঁজ পাওয়া যায়নি।

২০ মে এমপি আনারের খোঁজ করতে গিয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তার মোবাইল লোকেশন ট্র্যাক করে। তারা জানতে পারে, কলকাতায় বন্ধুর বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর তার মোবাইলের লোকেশন একবার পাওয়া গিয়েছিল সেখানকার নিউমার্কেট এলাকায়। এরপর ১৭ মে তার ফোন কিছুক্ষণের জন্য সচল ছিল বিহারে।

পরে বুধবার (২২ মে) ভারতের এনডিটিভির খবরে বলা হয়, কলকাতার নিউ টাউনের সঞ্জিভা গার্ডেন্সের একটি ফ্লাটে এমপি আনারকে খুন করা হয়েছে। এনডিটিভি বলে, ১২ মে কলকাতায় আসার পর নিখোঁজ হওয়া এমপি আনারের খোঁজে তল্লাশি শুরুর পর বুধবার সকালে তার খুনের ব্যাপারে নিশ্চিত হয় পুলিশ।

এরপর গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, এমপি আনারকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। তাকে হত্যার ঘটনায় তিনজনকে আটক করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আটক তিনজন বাংলাদেশ পুলিশের কাছে আছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

মন্ত্রী বলেন, চিকিৎসার জন্য আনোয়ারুল আজীম দেশের বাইরে গিয়েছিলেন। সেখানে তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। ভারতের পুলিশ আমাদের নিশ্চিত করেছে, তাকে হত্যা করা হয়েছে।

এদিকে, বুধবার (২২ মে) ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায় খুন করার উদ্দেশ্যে অপহরণের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন এমপি আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। এমপি আনার সংসদ ভবন এলাকায় থাকতেন। সেখান থেকে তিনি ভারতে গেছেন। তাই ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) প্রধান হারুন-অর-রশিদের পরামর্শে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা দায়ের করেন তার মেয়ে।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন