নিউইয়র্কে হত্যা-মামলাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে গণমাধ্যমে লাগাতার মিথ্যাচারের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন
যুক্তরাষ্ট্র ব্যুরো
নিউইয়র্কে বসবাসরত ৩ ভাই এবং ৩ বোন ৯ নভেম্বর শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন যে, বাংলাদেশে চলমান পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে সিলেটের রাজনগর উপজেলার নিজগাঁও গ্রামের আব্দুল মালিক-কে খুনের মামলার অভিযুক্তরা এ ৬ প্রবাসীর সহায়-সম্পদ হাতিয়ে নেয়ার অভিপ্রায়ে গণমাধ্যমে লাগাতার মিথ্যাচার করছে।
এ সময়ে বহুল আলোচিত আয়নাঘর-টর্চার সেল শব্দ ব্যবহার করে উদ্ভট ঐসব প্রচারণাকে ভাইরালের ফন্দি আঁটা হয়েছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়। নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসে নবান্ন পার্টি হলে এ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশের সাবেক সহকারি এটর্নী জেনারেল এডভোকেট আব্দুর রকিব মন্টু। এ সময় পাশে ছিলেন তার ভাই আব্দুর রহিম বাদশা এবং আব্দুর রউফ পাশা, বোন ডা. শাহানারা আলী, জাহানারা আহমেদ এবং মনোয়ারা বেগম।
সংবাদ সম্মেলনে এডভোকেট আব্দুর রকিব মন্টু জানান, ‘রাজনগরে অন্যের জমি দখল করে টর্চার সেল/আয়নাঘর’ শিরোনামে বিভিন্ন গণমাধ্যমে আমাকে আক্রমণ করে সম্প্রতি যেসব প্রচারণা চালানো হয়েছে মূলত: আমাদের কেয়ারটেকার মো. আব্দুল মালিকের হত্যা মামলায় অভিযুক্তদের রক্ষার অভিপ্রায়ে। একইসাথে আমার ভাই-বোনদের সমস্ত সহায়-সম্পদ গ্রাস করার মতলবও রয়েছে।
রকিব মন্টু বলেন, বানোয়াট তথ্যের আলোকে প্রকাশ ও প্রচারিত সংবাদে কখনোই আমার বক্তব্য গ্রহণের প্রয়োজনবোধ করা হয়নি। খুনের মামলার ঘাতকেরা সুপরিকল্পিতভাবে সামাজিকভাবে আমাদের পরিবারকে হেয়-প্রতিপন্ন করতে এহেন জঘন্য প্রচারণা চালাচ্ছে।
লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার পানিশাইল তথা নিজগাঁও গ্রামে আমাদের পিতা মরহুম আলহাজ্ব বশির আলী, মাতা মোছাম্মৎ রাবেয়া খানম, ও খালা রহিমা খানম দুটি পৃথক দলিল মূলে (৩৪৮৭/১৯৭৪ এবং ৩৪৮৮/১৯৭৩) বসতভিটা ও ফসলি জমিসহ প্রায় সাড়ে তিন একর জায়গা ভোগ-দখল করে ক্রমান্বয়ে আরো প্র্য়া ৯ একর জমি ক্রয় করেন। আমাদের পিতা সিলেট জেলাধীন ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানায় কর্মরত থাকায় উপরে বর্ণিত বাড়ি ও জমি দেখভাল করার জন্য নূরল ইসলাম কলা মিয়াকে দায়িত্ব দেন।
আমরা ভাই-বোন সকলেই অধ্যয়নরত ও প্রবাসে থাকার কারণে বাবা কেয়ারটেকারের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। সে বিশ্বাস ও সরলতার সুযোগ নিয়ে কেয়ারটেকার নূরল ইসলাম কলা মিয়া আমার পিতার অগোচরে নতুন জরিপকালে (১৯৯৩/৯৪) বাড়িসহ জমির প্রতিটি দাগে দুই আনা অংশ করে তার নিজের নামে রেকর্ড ভুক্ত করেন। আমার পিতা ইন্তেকাল করেন ২০০৬ সালের মার্চে। এরপর পারিবারিক সিদ্ধান্তে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমি দেশে যাই। এবং সকল সহায়-সম্পত্তি দেখাশোনার দায়িত্ব গ্রহণ করি।
সে সময়েই কেয়ারটেকার কলা মিয়ার এহেন জালিয়াতি আমার দৃষ্টিগোচর হয়। এ অবস্থায় আমি আমার মা ও ভাই-বোনদের পরামর্শক্রমে আমাদের আত্মীয় মো. আব্দুল মালিককে কেয়ারটেকার হিসেবে নিযুক্ত করি। একইসাথে কলা মিয়ার জাল-জালিয়াতির ব্যাপারটি সামাজিকভাবে নিষ্পত্তির জন্যে কয়েক দফা আলোচনা করি। কিন্তু কলা মিয়া কেবলই কালক্ষেপণ করতে থাকেন। এ অবস্থায় আমরা মৌলভীবাজার সহকারি জজ আদালত এবং রাজনগর সহকারি জজ আদালতে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করি কলা মিয়ার বিরুদ্ধে।
এতে ক্ষ্রিপ্ত হয়ে কলা মিয়া আমাদের কেয়ারটেকার আব্দুল মালিককে নানাভাবে হুমকি-ধামকি দেয়। কয়েকবার হামলাও করেছে। এহেন আক্রমণের ব্যাপারে আব্দুল মালিক রাজনগর থানায় মামলা করেন কলা মিয়ার বিরুদ্ধে। লিখিত বক্তব্যে আরো জানানো হয়, মামলার তদন্তের পর কলা মিয়া ও তার ছেলে আমিন ও শামিমকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। সাড়ে ৪ মাস হাজতে থাকার পর জামিনে মুক্ত হয়ে ওরা বেপরোয়া হয়ে উঠে। এক পর্যায়ে ২০২১ সালের ১৭ নভেম্বর কলা মিয়া কয়েকজনকে সাথে নিয়ে আব্দুল মালিককে নৃশংসভাবে হত্যা করে। এ হত্যাকান্ডের ব্যাপারে এডরভাকেট আব্দুর রকিব মন্টু নিজে বাদি হয়ে মামলা (৯/১৯২ )করেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান। মামলার তদন্তের পর কলা মিয়াসহ দু’দফায় ৬ জনকে গ্রেফতার করে রাজনগর থানার পুলিশ। অভিযুক্তরা আড়াই বছর পর জামিনে মুক্ত হয়ে এখোন জঘন্য মিথ্যাচারে লিপ্ত হয়েছে।
বাংলাদেশ অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রকিব মন্টু বলেন, পৈত্রিক সহায়-সম্পদ সুরক্ষায় আপনজনকে কেয়ারটেকার নিযুক্ত করে আমরা ৬ প্রবাসী আজ অপপ্রচারণার ভিকটিম। আশা করছি হত্যা মামলায় অভিযুক্ত কলা মিয়াসহ অপর ৫ জনকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে ন্যায়-বিচার নিশ্চিত করা হবে। এ ব্যাপারে আমরা বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু দৃষ্টি কামনা করছি।