
নারায়ণগঞ্জে কমে যাচ্ছে কৃষিজমি
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, নারায়ণগঞ্জ
প্রাচ্যেরডান্ডি ও শিল্পনগরী নারায়ণগঞ্জ জেলায় আশংকাজনক হারে কমছে কৃষি জমি। সারাদেশে বছরে ১ শতাংস কৃষি জমি কমলেও নারায়ণগঞ্জ জেলায় কৃষিজমি কমার হার আড়াই শতাংস। নারায়ণগঞ্জ জেলায় মোট কৃষি জমির পরিমাণ ৬৮ হাজার ৮৩৯ হেক্টর। এরমধ্যে মোট আবাদি জমি ৪৬ হাজার ৭৭৪ হেক্টর। জেলায় মোট কৃষক পরিবার ১ লাখ ৭২ হাজার ২৮৯ টি। দিন দিন জনসংখ্যা বাড়ছে।
নারায়ণগঞ্জে নগরায়ণ, আবাসন কোম্পানি ও শিল্পকারখানা গড়ে ওঠায় দিন দিন কৃষিজমির সংখ্যা কমছে। সেই সঙ্গে দূষণ বাড়ায় কমেছে জমির উর্বরাশক্তিও। এর ফলে উৎপাদন কমে যাওয়ায় জেলার খাদ্য নিরাপত্তা এখন হুমকির মুখে পড়েছে। কৃষকরা বলছেন, আবাসন কোম্পানির দৌরাত্ম্য ঠেকানো না গেলে ভবিষ্যতে খাদ্যসংকটে পড়তে হবে তাদের।
এদিকে, সারা দেশে মানবিক ডিসি হিসেবে পরিচিত নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা এবার জেলার কৃষিজমি রক্ষায় বিশেষ উদ্যোগ নিলেন। দেশে খাদ্য ঘাটতি দূর করার লক্ষ্যে জেলার সব দুই ফসলী জমিকে তিন ফসলী জমিতে রূপান্তরিত করতে কৃষক সমাবেশ করেন জেলা প্রশাসক। বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) স্থানীয় কৃষকদের নিয়ে আড়াইহাজার উপজেলার হাইজাদী ইউনিয়নের সরাবদী গ্রামে তিনি এ সমাবেশ করেন। সমাবেশে মাত্র দুইটি ফসল ফলানোর পরে অব্যবহৃত হয়ে পড়ে থাকা জমিগুলোতে আরেকটি ফসল ফলানোর জন্য নতুন পাইলট প্রকল্প চালু করেন নবাগত জেলা প্রশাসক।
স্থানীয়রা জানান, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ, সোনারগাঁ, আড়াইহাজার ও বন্দর উপজেলা একসময় কৃষিপ্রধান এলাকা ছিল। কিন্তু ৮০-এর দশকের শুরুতে রূপগঞ্জে শিল্পকারখানা গড়ে উঠতে শুরু করে। এরপর ২০১০ সাল থেকে এখানে আবাসন কোম্পানির মালিকদের দৌরাত্ম্য বাড়তে থাকে। মূলত এরপর থেকেই এখানকার কৃষিজমি কমতে থাকে। অন্য উপজেলাগুলোর মধ্যে বন্দর ও সোনারগাঁয়ে শিল্পের বিকাশ শুরু হয় ৯০-এর দশকে। তবে এ সময় আড়াইহাজারের মানুষ কৃষির ওপরই নির্ভরশীল ছিল।
বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের মধ্যে রূপগঞ্জে সবচেয়ে বেশি আবাসন কোম্পানি রয়েছে। সেই সঙ্গে এখানে অনেক শিল্পকারখানাও গড়ে উঠেছে। উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, রূপগঞ্জে ২৫টির মতো আবাসন কোম্পানি রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে সাত শতাধিক শিল্পকারখানা। আড়াইহাজারে ৮-১০টি আবাসন কোম্পানি এবং জাপান অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ ১৫টির মতো শিল্পকারখানা রয়েছে। আর সোনারগাঁয়ে ১০টি আবাসন কোম্পানি ও অর্ধশতাধিক শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে। আর বন্দরে আবাসন কোম্পানি রয়েছে ৫-৬টি। সেখানে শিল্পকারখানার সংখ্যা অর্ধশতাধিক।
এসব উপজেলার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগে কৃষিকাজ করেই জীবিকা নির্বাহ করতেন তারা। কিন্তু এখন কৃষিতে আগের মতো আর আয় নেই। কারণ আবাসন কোম্পানি ও শিল্পকারখানার মালিকরা জোরপূর্বক উর্বর জমি দখল করে বালু দিয়ে ভরাট করেছে। এরা ভূমিদস্যু এবং খুবই প্রভাবশালী। তাই বাধ্য হয়েই তাদের কাছে জমি বিক্রি করে দিতে হয়।
আড়াইহাজার উপজেলার হাইজাদী ইউনিয়নের সরাবদী গ্রামের আইএফএম কৃষক সংগঠনের সভাপতি সফল কৃষক শরীফুল ইসলাম এই প্রতিবেদককে বলেন, আমরা বেশিরভাগ জমিতেই দুই ফসল চাষ করতাম। এরপর অনাবাদি থাকতো। কিন্তু ডিসি আজ আমাদের গ্রামে এসে সারা বিশ্বে কৃষি জমি ক্রমাগত কমে যাওয়ার ভয়াবহ প্রভাবে ক্রমবর্ধমান খাদ্য সংকটের কথা জানালেন। তার কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমি আমার পুরো জমিতে এখন সবজি চাষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
একই গ্রামের মো. মকবুল হোসের ছেলে জুয়েল আহমেদ বলেন, আমরা আগে খাদ্য ঘাটতির ভয়াবহতা সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। আজ ডিসি নিজে আমার ক্ষেত ঘুরে ঘুরে দেখে আমাকে সবজি চাষের অনুরোধ করলেন। সবজি ফলন ভালো হলে আমি আর্থিকভাবেও লাভবান হতে পারবো, তিনি আরো যোগ করেন।
একই এলাকার হৃদয় হোসেন বলেন, ডিসি আমাদের উন্নতমানে সবজি বীজ দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। বীজগুলো পেলেই আমি অনাবাদি জমিতে সবজি চাষ করবো। নিজেদের চাহিদা মেটানোর পরে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রিও করতে পারবো।
নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলার সরাবদী গ্রামের দুই ফসলি জমিকে তিন ফসলি জমিতে রূপান্তরের পাইলট কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন নারায়ণগঞ্জ জেলার প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী তিন ফসলি জমি সাধারণত অধিগ্রহণের অনুমতি দেয়া হয় না। তাই তিন ফসলী জমি হিসেবে রূপান্তরিত করায় কৃষকদের কৃষি জমিগুলো