ডার্ক মোড
Saturday, 05 October 2024
ePaper   
Logo
নরসিংদীতে লটকনের বাম্পার ফলন

নরসিংদীতে লটকনের বাম্পার ফলন

নরসিংদী প্রতিনিধি

নরসিংদীতে চলতি মৌসুমে লটকনের বাম্পার ফলন হয়েছে। দাম ভাল থাকায় চাষীদের মনে হাসির ঝলক ফুটে উঠেছে। জেলার সর্বত্র ঝোপ-ঝাড়ে গাছে ঝাঁকে ঝাঁকে ধরে থাকে এ ফল। তবে সময়ের বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এ ফলের পুষ্টিগুণ সবার জানা হয়ে গেছে। তাই বাণিজ্যিক চাষের পাশাপাশি দেশের চাহিদা মিটিয়ে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে এই লটকন। নরসিংদী জেলার শিবপুর, পলাশ, বেলাব ও রায়পুরা উপজেলার লাল রংয়ের মাটিতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও খনিজ উপাদান থাকায় এসকল স্থানে লটকনের ফলন ভালো হয়।

জানা যায়, মানুষের শরীরে ভিটামিন ‘সি’ এর চাহিদা মেটায় এই লটকন। ছোট এ ফলটি ভিটামিন ‘বি-টু’, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লৌহসহ বিভিন্ন খনিজ উপাদানে ভরপুর। বাংলাদেশের লটকন চাষের একমাত্র বৃহত্তর এলাকা নরসিংদী জেলা। কারণ এ অঞ্চলের লটকন অন্য যে কোনো জেলা থেকে মিষ্টি এবং রসালো হয়ে থাকে। এখানকার বেলে ও দো-আঁশ মাটিতে লটকনের ফলন ভালো হয়। সেজন্য এ জেলার মানুষজন লটকনের বাণিজ্যিক চাষের দিকেই বেশি ঝুঁকছেন। আর্থিকভাবে লাভবানও হচ্ছে বলে প্রতিবছরই বাড়ছে এর আবাদ। লটকন চাষ করে ভাগ্যবদল হয়েছে শতশত কৃষক।

নরসিংদী জেলা কৃষি ও স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, চলতি মৌসুমে এ জেলায় ১ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে লটকনের চাষ হয়েছে। এটি গত বছরের তুলনায় প্রায় ২০০ হেক্টর জমি বেশি। অন্যান্য এলাকার তুলনায় মাটির গুণ ও আবহাওয়ার জন্য জেলার শিবপুর, বেলাব ও রায়পুরা উপজেলায় লটকন চাষ বেশি হচ্ছে। প্রতি হেক্টর জমিতে গড়ে ১৭ টন লটকন উৎপাদিত হচ্ছে। সেই হিসাবে ১ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে প্রায় ৩০ হাজার টন লটকন উৎপাদন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এছাড়াও জেলার পলাশ ও মনোহরদী উপজেলার কিছু কিছু এলাকায় সামান্য পরিমাণ লটকনের আবাদ হয়ে থাকে।

নরসিংদীর শিবপুর, পলাশ, বেলাব ও রায়পুরা উপজেলার বিশাল অঞ্চল টিলা ও ঢালাসমৃদ্ধ লালমাটির এলাকা। গ্রামের ভেতরে ঢুকলেই চোখে পড়বে ছায়াঘেরা লটকন বাগান। বাগানের অধিকাংশ গাছের গোড়া থেকে উপরি অংশের শাখা-প্রশাখায় লটকন জড়িয়ে আছে। দেখতে মনে হয় যেন পুরো গাছে লটকনের ফুল ফুটছে। বাগানে ঘুরতে ঘুরতে গাছে পাকা লটকন দেখে জিব্বায় জল এসে যায়।

এ বিষয়ে মরজাল বাজারের লটকন ব্যবসায়ী কফিল উদ্দিন জানান, নরসিংদী থেকে লটকন কিনে ঢাকা, সিলেট, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করা হয়। বর্তমানে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও এই লটকন রফতানি করা হচ্ছে। প্রকারভেদে পাইকারিভাবে বাজারে মণ প্রতি দাম ওঠে ৩ হাজার ৫শ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। যা খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ১০০ টাকা থেকে শুরু করে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।

বেলাব উপজেলার আব্দুল্লাহ নগর গ্রামের লটক চাষী কামাল মিয়া জানান, কম খরচে লাভজনক ফসলের মধ্যে অন্যতম ফল হলো লটকন। লটকন বাগান শুরু করতে প্রথমে খরচ ও সময় বেশি লাগলেও পরবর্তী সময়ে বিঘা প্রতি ১৪/১৫ হাজার টাকার বেশি খরচ হয় না। সে তুলনায় লাভ বেশি হয়। কখনও কখনও এত বেশি ফল আসে যে গাছের কান্ড ও ডাল পর্যন্ত দেখা যায় না। একটি পূর্ণবয়স্ক লটকন গাছে ৬ থেকে ৯ মণ পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়।

রায়পুরা উপজেলার মরজাল এলাকার আফাজ উদ্দিন বলেন, এবছর মোট ৫ বিঘা জমিতে লটকন চাষ করেছি। স্থানীয় বাজার ছাড়াও লটকন জমিতেই পাইকারি বিক্রি করে দেওয়া যায়। পাইকাররা বাগান থেকেই লটকন সংগ্রহ করেন।

নরসিংদী কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আজিজুর রহমান বলেন, লটকন চাষ বাড়াতে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে চারা উৎপাদন করাসহ কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশের বাজারে রপ্তানি হওয়াতে কৃষকরা লটকনের ন্যায্যদাম পাচ্ছেন। এখানকার মানুষ লটকন চাষের দিকে আরো ঝুঁকছেন। নরসিংদী জেলায় ১৯শত হেক্টর জমিতে লটকনের আবাদ হয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশী আবাদ হয়েছে শিবপুরে। চলতি মৌসুমে লটকনের মোট উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩০ হাজার মেট্রিক টন।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন