ঢাকা-নারায়ণগঞ্জে ডাবল রেল লাইন নির্মাণ প্রকল্প ২নং রেলগেইটে ‘যানজট’ সমস্যা
স্টাফ করেসপিন্ডেন্ট, নারায়ণগঞ্জ
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ট্রেন লাইন ডাবল হবে। তবে শহরের প্রধান ট্রাফিক পয়েন্ট ২নং রেলগেইটে ওভারপাস নির্মিত হবে। ফলে ট্রেনের জন্য যানজট হবেনা। এমন আলোচনা হয়েছিল ৫ আগস্টের আগে। বিশেষ করে তৎকালীন নাসিক মেয়র এই বিষয়ে সোচ্চার ছিলেন। এখন নাসিক মেয়র ডাঃ সেলিনা হায়াৎ আইভী অপসারিত। ফের ডাবল রেল লাইন প্রসঙ্গটি সামনে এসেছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে। এ নিয়ে আজ (২৭ জানুয়ারী) নাসিকে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সেই বৈঠকেও ২নং রেল গেইটের বিষয়টি নিয়ে বিশদ আলোচনা হবে। নগরবাসী আন্ডার পাস বা ওভার পাসের পক্ষে।
তবে রেলওয়ের প্রকৌশলীরা বলছেন, ভিন্ন কথা। তাদের মতে, ২নং রেলগেইটে এমনিতেই শহরের স্থানীয় যানবাহনের জন্য দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। তবুও বিষয়টি আলোচনায় স্থান পাবে। ঢাকা- নারায়ণগঞ্জে প্রতিদিন চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী ও ছাত্রসহ প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪৫০০ জন যাত্রী যাতায়াত করেন। নারায়ণগঞ্জ রেল স্টেশন বন্ধ করে সড়ক নির্মাণ করা হলে নারায়ণগঞ্জবাসীসহ আশপাশের মানুষ পরিবেশগত, স্বাস্থ্যগত এবং অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
জানা গেছে, যানজট নিরসনের নামে প্রশাসন কর্তৃক নারায়ণগঞ্জ রেল স্টেশন বন্ধ করে বহুতল বাণিজ্যিক ভবন ও চাষাঢ়া থেকে-নারায়ণগঞ্জ রেলপথ সরিয়ে সড়ক পথ নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে। ঢাকার যানজট নিরসন এবং জনসংখ্যার চাপ কমাতে ঢাকা- নারায়ণগঞ্জ রেলের অবদান অপরিসীম। কাজেই নারায়ণগঞ্জ স্টেশন বহাল রেখেই দ্রুত ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ডাবল লাইনে রূপান্তর করাসহ অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
সম্প্রতি ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর প্রকল্প কর্মকর্তা মোঃ আতিকুর রহমান এক প্রবন্ধে উল্লেখ করেন যে, বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের ভিতরে একটি ২ নং রেলগেট এ ঘন্টায় ৩ বার সিগন্যালে অপেক্ষা করতে হয়। অথচ রেলক্রসিং ছাড়াই রেলগেট সংলগ্ন ইন্টারসেকশনটিতে সড়ক পরিবহনের জন্য সিগন্যালে ঘন্টায় ২০ সিগন্যালের সমান সময় অপেক্ষা করতে হয়।
কাজেই ৯ মিনিটের সিগন্যালকে যানজটের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। এছাড়া রেলস্টেশন চাষাঢ়ায় ¯’ানান্তর হলে নারায়ণগঞ্জ থেকে সমপরিমাণ যাত্রী পরিবহন করতে প্রতিদিন অন্যান্য সড়ক পরিবহনের তুলনা করলে দেখা যায়, ৯০ টির মত বাস, ২,২৫০ টি রিকশা, সিএনজি ১৫০০ এবং প্রাইভেট গাড়ি লাগবে ১৫০০ টি। যা সড়কে অধিক যানজটের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। পাশাপাশি মানুষের যাতায়াত ব্যয় দ্বিগুন হবে, যানবাহন পেতে দূর্ভোগ বাড়বে।
প্রকৌশলী মোঃ আবদুস সোবহান জানান, নারায়ণগঞ্জ স্টেশন দিয়ে লক্ষ মানুষ যাতায়াত করে। নানা রকম যড়যন্ত্র করেও মানুষকে রেল বিমুখ করতে না পেরে স্টেশন বন্ধ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। তিনি নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশন বন্ধের কার্যক্রম অবিলম্বে বন্ধ করে বর্তমান ট্রেনের কোচ সংখ্যা বৃদ্ধি করে দেশের সকল বন্ধ স্টেশনগুলো চালু করার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর যুগ্ম সম্পাদক শাহজাহান মৃধা বেণু বলেন, রেলে যত সহজে যাতায়াত করা যায়, তা অন্য মাধ্যমে সম্ভব নয়। কাজেই বিশ্বের প্রায় বেশির ভাগ শহরেই এখন রেলকে প্রাধান্য দিয়ে বিভিন্ন রকমের ট্রেন দিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলছে। সে সময় আমরা যোগাযোগ ব্যবস্থায় রেলকে পশ্চাৎপদ করে রাখছি। নারায়ণগঞ্জ স্টেশন না সরিয়ে বরং সঠিক ব্যবস্থাপনা করা প্রয়োজন।