ডার্ক মোড
Wednesday, 29 January 2025
ePaper   
Logo
বেতাগীতে হাতুড়ে চিকিৎসক দেন ব্যবস্থাপত্র ও প্যাথলজি নমুনা পরীক্ষা

বেতাগীতে হাতুড়ে চিকিৎসক দেন ব্যবস্থাপত্র ও প্যাথলজি নমুনা পরীক্ষা

বেতাগী (বরগুনা) প্রতিনিধি

একজন জাহাঙ্গীর আলম। সে চিকিৎসা দিলেও স্থানীয়দের কাছে তার পরিচিতি স্বর্ণাকার হাতুড়ে ডাক্তার হিসাবে। কারণ আগে স্বর্ণালঙ্কারের ব্যবসা করতেন। তবে এখন সে চিকিৎসক হিসেবে খুলেছেন চেম্বার, সেখানেই বিভিন্ন রোগের চিকিৎসাও দেন। এতেই শেষ নয়, দেন ব্যবস্থাপত্র ও রোগ নির্ণয়নে জন্য নমুনা পরীক্ষা ইউএনও‘র কাছে এমনই লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগিরা।

জানাগেছে, জাহাঙ্গীর আলম ১০ বছর আগে বেতাগী পৌর শহরের সদর রোডে খুলেছিলেন স্বর্ণালঙ্কারের ব্যবসা। এর আগে ঢাকায় স্বর্ণাকারের দোকানে থাকতেন। সেই ব্যবসা ছেড়ে সর্বশেষ এখন দেখা যাচ্ছে একইস্থানে একই ব্যক্তির উপজেলার পৌরশহরে চলে এসেছে চেম্বার। সেখানে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসাও দেন। সব রোগের বিশেষজ্ঞ হিসাবে দিচ্ছেন ব্যবস্থাপত্র ও রোগ নির্ণয়নে জন্য রক্ত, প্রসাবসহ নানা ধরনের নমুনা পরীক্ষা। তবে চিকিৎসক না হয়েও তার ব্যবস্থাপত্র ও প্যাথলজি পরীক্ষা দেয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয়রা আরও জানান, শুরু থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত তিনি ছাপানো ব্যবস্থপত্র ব্যবহার করে চিকিৎসা দিতেন। তখনকার সময় ব্যবস্থাপত্র লেখা ছিলো ডা: জাহাঙ্গীর আলম, আরএমপি প্যারামেডিকেল এবং এমসিএইচ শিশু হাসপাতাল, পাশাপাশি জেনারেল প্রাকটিশনার, ঢাকা। কিন্ত এখন সে ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন সাদা কাগজে। যেখানে চিকিৎসক ও কোন ডিগ্রি লেখা নেই। তবে কোন প্রতিষ্ঠান থেকে সে এসব কোর্স করেন তা বলেননি।

জাহাঙ্গীর আলম প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে পারবেন বলে দাবি করলেও এর আগে ছাপানো ব্যবস্থপত্র ব্যবহার করে চিকিৎসা প্রদান এবং নানা অনিয়মের কারণে তিনি একাধিকবার প্রশাসনের অভিযানের কবলে পরেন। এসময় ভ্রাম্যমাণ আদালত তাকে চিকিৎসা থেকে বিরত থাকতে ও সতর্ক করে দিয়েছিল। এজন্য সাময়িক তার চেম্বার বন্ধ রাখলেও পরবর্তীতে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে চিকিৎসা শুরু করেন।

তবে এবারে আবার নতুন করে বেতাগী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় থেকে তাকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ তার কার্যালয় উপস্থিত হওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি বর্তমানে নাম ও ডিগ্রি বিহীন সাদা কাগজ ব্যবহার করে ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন।

এ বিষয়ে গত ১৬ জানুয়ারি ভুক্তভোগিদের পক্ষ থেকে প্রতিকার চেয়ে ইতোমধ্যে বরগুনা সিভিল সার্জন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।

ঐঅভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয় জাহাঙ্গীর আলম কোন রেজিষ্টার চিৎিসক নয়। নেই কোন প্রশিক্ষন। তিনি অবলীলায় গ্রামের গরীব, অসহায় ও অশিক্ষিত মানুষকে নানা প্রলোভনের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবার নামে হাতুড়ে চিকিৎসা করে আসছেন। ঝুঁকিপূর্ণ এন্টিবায়েটিক ঔষধসহ অচেনা টোটকা কোম্পানীর বলবর্ধক ঔষধের ব্যবস্থাপত্র দিয়ে সাধারণ মানুষকে মৃত’্য ঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছেন। এখানে সম্প্রতি গড়ে ওঠা বেশ কিছু প্রাইভেট ক্লিনিকের সাথে চুক্তি করে অবলীলায় সকল রোগীদের আকারণে টেষ্ট দিয়ে বিপূল পরিমানের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন। এতে স্থানীয় সচেতন সমাজে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে সরেজমিনে তদন্ত পূর্বক হাতুড়ে চিকিৎসক জাহাঙ্গীর আলমের এহেনো কার্যকলাপ বন্ধে দ্রæত ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি করেন তারা।

ভুক্তভোগি হাসানুজ্জমান সহ স্থানীয় কয়েকজন অভিযোগ করেন, সে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসাও দেন। সরকারি হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসকদের এগুলো দেখানো হলে তারা জানান, ব্যবস্থাপত্রের এসব ওষুধ সেবন করলে রোগীর ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। ব্যবস্থাপত্রগুলো অসম্পূর্ণ বলেও জানান তারা।

বেতাগী হাসপাতালের এক চিকিৎসক যৌন রোগের একটি ব্যবস্থাপত্র দেখে জানান, ওই রোগীকে যে তিনটি ওষুধ দেয়া হয়েছে তা উচ্চশক্তির। এ ধরনের ওষুধ নিয়মিত খেলে যে কোনো সময় রোগীর হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। যৌন শক্তিও হারিয়ে যেতে পারে।

তারা জানান, জাহাঙ্গীর আলমের রোগী আসে প্রচারের কারণে। পৌর শহরসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় তার লোক আছে। তারা রোগীদের তার কাছে পাঠান। বিনিময়ে তাদের খুশি রাখেন তিনি।

সোমবার দুপুরে কাছে আসা দুইজন রোগী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পল্লী চিকিৎসকের পরামর্শে জাহাঙ্গীর আলমের কাছে চিকিৎসা নিতে যান তারা। তিনি অনেক ভাল ডাক্তার বলে শুনেছেন। তবে তার কথাবার্তা চিকিৎসকের মতো মনে হয়নি তাদের।

এ বিষয়ে জাহাঙ্গীর আলম জাহাঙ্গীর আলম জানান, তিনি এল.এম.এ.এফ,ঢাকা (স্থানীয় চিকিৎসা সহকারী এবং পরিবার পরিকল্পনা) কোর্স করেছেন। সে অনুযায়ী, প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। এর বেশি কিছু নয়। পাশাপাশি তিনি আরও দাবি করেন, তার বড় ছেলে ফরিদপুর মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট ৪র্থ বর্ষে পড়াশুনা করছেন। তার কাছ থেকে মেডিসিনের প্রাথমিক জ্ঞান নিয়ে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।

বেতাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বশির গাজী বলেন,‘জাহাঙ্গীর আলমের বিষয় লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর তাকে একটি নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ তাকে কার্যালয় উপস্থিত হওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছি। তা যাচাই-বাছাই শেষে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন