ডার্ক মোড
Saturday, 27 July 2024
ePaper   
Logo
ঢাকার ডি.আর. অহিদুল কারাগারে, আতঙ্কে দুর্নীতিগ্রস্ত সাব-রেজিস্ট্রার জেলা রেজিস্ট্রাররা

ঢাকার ডি.আর. অহিদুল কারাগারে, আতঙ্কে দুর্নীতিগ্রস্ত সাব-রেজিস্ট্রার জেলা রেজিস্ট্রাররা

বিশেষ প্রতিনিধি

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রার অহিদুল ইসলাম কারাগারে যাওয়ার পর ভূমি রেজিস্ট্রেশনের সাব-রেজিস্ট্রার, জেলা রেজিস্ট্রার এবং খাতের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে যাদের বিরুদ্ধে দুদক অনুসন্ধান কিংবা তদন্ত চালাচ্ছে-হারাম হয়ে গেছে তাদের ঘুম।

জমির শ্রেণি পরিবর্তন,জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে নামজারিকৃত জমির রেজিস্ট্রেশন, নানা সঙ্কটে ফেলে নিকাহ রেজিস্ট্রার, ভেন্ডার ও ডিডরাইটারদের কাছ থেকে অর্থ আদায়সহ পদ্ধতিগত দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত কোটি কোটি টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন তারা। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ এবং সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এসব দুর্নীতিগ্রস্ত রেজিস্ট্রার-সাব রেজিস্ট্রারদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছে সংস্থাটি। বিপুল অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে দীর্ঘদিন অনুসন্ধান-তদন্ত দীর্ঘদিন ঘুম পাড়িয়ে রাখলেও কয়েক মাস আগে ঢাকার জেলা রেজিস্ট্রার অহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে দুদক।

দাখিলকৃত চার্জশিট আদালত আমলে না নিয়ে যাতে পুন:তদন্তের জন্য দুদকে ফেরত পাঠায়-এ চেষ্টাও করেছেন তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সকল চেষ্টা ব্যর্থ হয়। হাইকোর্ট থেকে নেয়া অন্তর্বর্তীকালিন জামিনের মেয়াদ শেষ হলে গত ৩০ এপ্রিল অহিদুল ইসলাম আত্মসমর্পন করে জামিন প্রার্থনা করেন। ওইদিন চার্জশিট গ্রণের বিষয়ে শুনানি ছিলো। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়ে দেন।

কারাগারে পাঠালেও রীতিমতো ভিআইপি মর্যাদায়ই ছিলেন কারাগারে। ডিভিশন প্রাপ্তও হন। তবে কারামুক্ত হওয়ার জন্য তিনি মরিয়া হয়ে ওঠেন। এ লক্ষ্যে তিনি আইন,বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিদের সানুগ্রহ পেতে কয়েক কোটি টাকা লগ্নি করেন-মর্মে গুঞ্জণ ওঠে।

এদিকে রেজিস্ট্রেশন সেক্টরের প্রভাবশালী এই কর্মকর্তার পরিণতিতে আতঙ্ক নেমে এসেছে দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের মধ্যে। কারণ, বাংলাদেশ রেজিস্টার সার্ভিস এসোসিয়েশনের সভাপতি হচ্ছেন ঢাকার জেলা রেজিস্ট্রার অহিদুল ইসলাম। দুদকের মামলায় তাকেই যদি কারাগারে যেতে হয় তাহলে অন্যদের কী পরিণতি হবে ! এই আতঙ্কের মধ্যে কাটছে তাদের দিন-রাত।

এদিকে দুদকসূত্র জানায়, হৃত ভাব-মর্যাদা পুনরুদ্ধারে সম্প্রতি দুর্নীতি বিরোধী অভিযান জোরদার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। গত মাসের দ্বিতীয় সপ্তায় অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। এ লক্ষ্যে দুদকের প্রধান কার্যালয়,বিভাগীয় কার্যালয় এবং সমন্বিত জেলা কার্যালয়গুলোতে দীর্ঘদিন অনড় অবস্থায় পড়ে থাকা অনুসন্ধান ও তদন্তের নথিগুলো সচল করার তাগিদ দেয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট অনুসন্ধান ও তদন্ত কর্মকর্তাদের নতুন করে সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে অনুসন্ধান-তদন্ত সম্পন্ন করার। অন্যথায় দুদক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কারণদর্শানো, বিভাগীয় তদন্তসহ নানা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। অনুসন্ধান-তদন্ত কার্যক্রম ত্বরান্বিত করার সামগ্রিক সিদ্ধান্তের আওতায় দুর্নীতিপ্রবণ খাত হিসেবে পরিচিত আইনমন্ত্রণালয়ের রেজিস্ট্রেশন সেক্টরের ফাইলগুলোও নড়েচড়ে উঠছে।

সূত্রটি জানায়, দুদকে রেজিস্ট্রেশন সেক্টরের সাব- রেজিস্ট্রার, জেলা রেজিস্ট্রার, নকলনবীশ,দলিল লেখকসহ দেড় শতাধিক অনুসন্ধান ও তদন্ত চলমান রয়েছে। যদিও তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ভিন্ন ভিন্ন। এর মধ্যে কিশোরগঞ্জ সদর সাব-রেজিস্ট্রার মিনতী দাস,ঢাকা উত্তরার সাব রেজিস্ট্রার লুৎফর রহমান মোল্লা, ঢাকার মোহাম্মদপুর সাব রেজিস্ট্রার শাহীন মিয়া, নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লার সাব রেজিস্ট্রার সাজ্জাদ হোসেন,গাজীপুর শ্রীপুরের সাব রেজিস্ট্রার ওসমান গনি মন্ডল, কালিয়াকৈর সাব রেজিস্ট্রার নূর আমিন, চট্টগ্রাম রাউজানের সাব রেজিস্ট্রার আবু তাহের মোস্তফা,নারায়ণগঞ্জ, সোনার গাঁও সাব রেজিস্ট্রার মজিবুর রহমান, সিলেট মৌলভীবাজার সদর সাব রেজিস্ট্রার ইয়াসমিন সিকদারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অনুসন্ধান চলছে।

এছাড়া জয়পুরহাট জেলা রেজিস্ট্রার তোরাব হোসেন, কুমিল্লার জেলা রেজিস্ট্রার আসাদুল ইসলাম, ঠাকুরগাঁও জেলা রেজিস্ট্রার মো: হেলালউদ্দিন, শেরপুর জেলা রেজিস্ট্রার নূর নেওয়াজ, ময়মনসিংহ জেলা রেজিস্ট্রার পথিক কুমার সাহা, চট্টগ্রাম জেলা রেজিস্ট্রার মিশন চাকমা, যশোর জেলা রেজিস্ট্রার আবু তালেব, ঝিনাইদহের জেলা রেজিস্ট্রার সাব্বির হোসেন, মেহেরপুর জেলা রেজিস্ট্রার সাইফুল ইসলাম, গাজীপুর জেলা রেজিস্ট্রার সাবিকুন নাহার, বগুড়ার জেলা রেজিস্ট্রার রফিকুল ইসলাম, পঞ্চগড় জেলা রেজিস্ট্রার মো: রেজাউল করিম বকশি, নারায়ণগঞ্জ জেলা রেজিস্ট্রার জামিলুর রহমানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান এবং মামলার তদন্ত চলমান রয়েছে। বিপুল অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে দুদকের একশ্রেণির দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারির সহযোগিতায় তাদের অনেকে অনুসন্ধান ও তদন্তের নথি ধামাচাপা দিয়ে রেখেছেন। কমিশনের চাপে সেগুলো এখন সক্রিয় হচ্ছে।

এ বিষয়ে দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন গত বৃহস্পতিবার বলেন, দুর্নীতির বিষয়ে আমাদের অবস্থান জিরো-টলারেন্স। পেন্ডিং তদন্ত-অনুসন্ধানগুলো শেষ করার জন্য ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তাগিদ দেয়া হয়েছে।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন