
জাদুকাটায় ‘মব’ তৈরি করে সরকারের ৩০০ কোটি টাকার খনিজ বালি লুট
সিলেট ব্যুরো
জাদুকাটায় ‘মব’ তৈরি করে ৩০০ কোটি টাকার খনিজ বালি লুটের ঘটনায় বিএনপি আ’লীগ নেতাকর্মী সহ ৮১ জনের নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মব তৈরি কনে টানা পাঁচ দিনরাতে লুটে নেয়া হয়েছে কমপক্ষে ৩০০ কোটি টাকার খনিজ বালি ইজারাবিহিন জাদুকাটা নদীর চর, একাধিক গ্রামের বসতবাড়ির পেছন থেকে।
মঙ্গলবার রাতে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়।
মামলার আসামিরা হলেন, তাহিরপুরের জাদুকাটা নদী তীরবর্তী সীমান্ত গ্রাম লাউড়গড়ের মৃত কিবরিয়ার ছেলে আব্দুল কাইয়ুম ওরফে খেলু মিয়া (অব:) মাষ্টার, আবুল কাসেমের ছেলে উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়ন ৮ নং ওয়ার্ড আলীগের সভাপতি খাজা মাঈনুদ্দিন,মকবুলের ছেলে ৮নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা আবুবক্কর, ময়দরের ছেলে ৮নং ওয়ার্ড বিএনপির সেক্রেটারী প্রার্থী ও চোরাকারবারিদের সোর্স রফিকুল ইসলাম, আব্দুল মান্নানের ছেলে আলহাজ, জাহিদ মিয়ার ছেলে চোরাকারবারি, চর দখলবাজ, চাঁদাবাজ শাজহাহান, শাহিন আলম, বিল্লাল আমিনের ছেলে হেনাজ, জালালের ছেলে আলমগীর, সুলতান আমিনের ছেলে চর দখলবাজ, চাঁদাবাজ নোরাঙ্গীর , শাহাদুল, আফজল উদ্দিনের ছেলে খনিজ বালি লুটকারি ও বালিচর বিক্রেতা নারজেল , পারভেজ, কবির ,ইঞ্জিলের ছেলে পুলিশ অফিসার কামালের ভাই চোরাকারবারি নজির, ফানা উদ্দিনের ছেলে অস্ত্রধারী বালি লুট ও চাঁদা আদায়কারি এহিবুল, আব্দুল খালেকের ছেলে মাদক চোরাকারবারি মজিবুর ওরফে ল্যাংটা মজিবুর, আবুল হোসেনের ছেলে সুরআলম,সাইতুর ছেলে কাঞ্চনখাল দখলকারি, বালির চর বিক্রেতা, চাঁদা আদায়কারি শফিকুল,তাজ উদ্দিনের ছেলে রুস্তম,আমুর ছেলে আব্দুল মন্নান, হেদায়েতের ছেলে মোহাম্মদ আলী, হুমায়ুন,কাছম আলীর ছেলে আব্দুর রহমান, মনরের ছেলে অস্ত্রধারী চাঁদাবাজ হৃদয় , আবু দুবের ছেলে অস্ত্রধারী চাঁদাবাজ জুনায়েদ, পুরানলাউড়ের শুক্কুর মাহমুদের ছেলে ইউনিয়ন বিএনপির সেক্রেটারী প্রার্থী গোলাপ মাহমুদের চাচাত ভাই অস্ত্রধারী চর দখলবাজ, চাঁদাবাজ শিপন, শোভন,শাহানশাহ, রহম আলীর ছেলে মোস্তফা , ছেলে মাইনুদ্দিন, উসমান গণির ছেলে অমর গণি, সুরুজের ছেলে শাহ আরফিন, খুর্শিদের ছেলে আজগর, মমিন (সাবেক) মেম্বারের ছেলে বাচ্চু , ছড়ারপাড় গ্রামের মহর আলীর ছেলে জাদুকাটা বোল্ডার পাথর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা পাথ্থর মোতালের সহোদর ৯নং ওয়ার্ড বিএনপি সভাপতি প্রার্থী আব্দুল মান্নান, আরব আলীর ছেলে এখলাছুর, মাদুর ছেলে আক্কাছ আলী, হেলালের ছেলে রহম আলী, সাহিদাবাদের নোয়াজ আলীর ছেলে মহরম আলী, রুপ আলীর ছেলে মোবারক হোসেন ,মমিন (সাবেক) মেম্বারের ছেলে আসাদ মিয়া,সাবিকুল, ঢালারপাড়ের আলীনুরের ছেলে বিল্লাল ,ঘাগটিয়া গ্রামের মৃত নুর জালালের ছেলে কথিত পরিবেশবাদী নেতা কাসমির রেজা ওরফে কাসমিরুলের ভাই আস্তারুল, আব্দুল মান্নানের ছেলে মাসুদ রানা, শিমুলতলা গ্রামের মৃত নুরুল ইসলামের(মাষ্টার) ছেলে সোহান, আলাল উদ্দিনের ছেলে সুমন,জুয়েল মিয়া,বিশ্বম্ভরপুরের মিয়ারচর গ্রামের তোতা মিয়ার ছেলে জাকির হোসেন ডালিম, মনোয়ার হোসেন অলিম সহ অজ্ঞাত নামা ২০ থেকে ৩০ জন।
জাদুকাটা বালি মহাল-১ এর ইজারাদারের পক্ষে বালি মহাল তদারকি কাজে নিয়োজিত মোশারফ বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
উপজেলার লাউরগড় গ্রামের বাসিন্দা আল জেদান, সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল হক অভিযোগ করে বলেন, সরকারের বিদ্যুৎ, জ¦ালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়ের আওতাধীন (বিএমডির) গেল ছয় বছর ধরে ইজারাবিহিন জাদুকাটা নদীর তীরবর্তী লাউরগড় বিজিবি ক্যাম্পের উওরে সাহিদাবাদ, কেউরি, কাঞ্চনখাল এলাকার কয়েক শত একর বালি চর মালিকানা দাবি করে প্রতিঘনফুট খনিজ বালি ২০ টাকা হারে চাঁদা নিয়ে বিক্রয় করে দেয় ওই চক্রটি। ওই কাজে সহায়তা করে এলাকার ভুমি দালাল ফিরোজ আলী, হেলাল ।
লাউরগড় সীমান্ত গ্রামের মানুষজন জানান, মুখ খুললে , বাঁধা দিলে এলাকাছাড়া হতে হবে , হবে মিথ্যা মামলা, চর নয় বসত বাড়ির পেছন কেটে খনিজ বালি লুট করিয়েছেন উপজেলার লাউরগড় গ্রামের আব্দুল কাইয়ুম মাষ্টার, সতুর ছেলে হারুন, আক্তারের ছেলে উপজেলা যুবদলের সদস্য আহবায়ক জাহাঙ্গীর তার সহোদর তমিজ, সাহাঙ্গীর, মামা ফানা উদ্দিন, মামাত ভাই এজিবুল , রাজমিনের ছেলে বাদাঘাট ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য চোরাকাররি ফুসকা জাহাঙ্গীর, ইউনিয়ন বিএনপির সেক্রেটারী প্রার্থী গোলাপ মাহমুদ তার চাচাত ভাইদের দিয়ে ও আওয়ামীলীগ নেতা খাঁজা মাঈনুদ্দিন, আবুবক্কর কয়েক গ্রামের যুব সমাজকে দেশীয় অস্ত্র, লাঠিসোটা হাতে ধরিয়ে দিয়ে মব তৈরি করে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় সম্পদ খনিজ বালির বিক্রির আড়ালে কয়েক কোটি টাকা চাঁদাবাজি করিয়ে নিজেরা ভাগ বাটোয়ারা করে নিয়েছেন।
রাজধানী ঢাকার ঠিবাধারী প্রতিষ্টানের স্বত্বধিকারি আহমেদ জামিল বললেন,যে খনিজ বালি লুট করে বিক্রি করা হয়েছে জাদুকাটা সীমান্ত নদী ছাড়া দেশের অন্য কোন নদীতে এ খনিজ বালি পাওয়া যায়না। বালির মান বা কোয়ালিটি ২.০৫। স্থানীয়ভাবে সরকারি মুল্য,ভ্যাট ট্যাক্স ছাড়াই ওই খনিজ বালির মূল্য রয়েছে প্রতিঘনফুট ১০০ টাকা। এ হিসাবে প্রতি দিবারাত্রী ১ হাজার থেকে ১৫০০ ’শ ফুট ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন কয়েক হাজার ছোট ছোট ষ্টিল বডি ট্রলারে করে বালি লুট করানো হয় ইজারাবিহিন চর থেকে। এরপর ইজারাদারের নিয়ন্ত্রণে থাকা বালি মহালের সীমানার মধ্যে বড় বাল্ক হেড (ষ্টিল বডি) একাধিক ট্রলারযোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রয়ের জন্য সরিয়ে নেয়া হয় লুটের খনিজ বালি।
গেল পাঁচ দিনে প্রতিদিন গড়ে ৬০ কোটি টাকার খনিজ বালি লুটে নেয়া হয়।
উপজেলার জাদুকাটা নদী তীরবর্তী বসতির রুহেল বললেন, দেশ বিদেশের মানুষজন দেখেছেন কি কায়দায় মব তৈরি করে লুটে নেয়া হল সরকারের ৩০০ কোটি টাকার খনিজ বালি। শুরুতে তাহিরপুরের ইউএনও, ওসি দেলোয়ার, এ্যাসিল্যান্ড কোন ভুমিকাই রাখেননি। তারা লুটের পর মতবিনিময় করেন, সচেতন করতে বিষয়টি দায়িত্বহীনতার পরিচয় বহন করে।
সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকির হোসেন মামলা দায়েরের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আসামিদের দ্রুত সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন বাংলাদেশ (বিজিবি) সুনামগঞ্জের অধিনায়ক লে. কর্ণেল জাকারিয়া কাদির বললেন, ‘গভীর রাতে মব তৈরি করে কমপক্ষে দুই হাজার বাল্কহেড একসঙ্গে ঢুকেছে। একেকটি বাল্কহেডে ৮-১০ জন করে শ্রমিক ছিল। বিজিবির লাউড়েরগড় ক্যাম্পের পক্ষে এতো মানুষকে ঠেকানো সম্ভব হয় নি। ৯ অক্টোবর সকল ঘটনা জানিয়ে সুনামগজ জেলা প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছি। ইজারাদারের সীমানা নির্ধারণে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে আরও স্পষ্ট করে করতে হবে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বললেন, জাদুকাটার ইজারাবিহিন চর, নদীর পাড় কাটার ঘটনায় ইজারাদারকে শোকজ করা হয়েছে। গেল পাঁচদিন ধরে যারা পাড় কাটায় জড়িত ছিল বিরুদ্ধে একাধিক মামলায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
