ডার্ক মোড
Sunday, 01 June 2025
ePaper   
Logo
জলবায়ু পরিবর্তনে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি, আশাশুনিতে প্রজনন সংকটে কিশোরী ও নারী

জলবায়ু পরিবর্তনে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি, আশাশুনিতে প্রজনন সংকটে কিশোরী ও নারী


সচ্চিদানন্দদে সদয় আশাশুনি(সাতক্ষীরা)

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে উপকূলীয় উপজেলা আশাশুনিতে কিশোরী ও প্রজনন বয়সী নারীরা চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছেন। ঘন ঘন নদী ভাঙ্গন, লবণাক্ততা বৃদ্ধি ও সুপেয় পানির সংকট নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্যকে মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে ফেলছে।স্থানীয়রা জানান, প্রতিটি দুর্যোগের পর নারী ও কিশোরীদের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ নিশ্চিত করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে নেই আলাদা টয়লেট কিংবা নিরাপদ পানি। ফলে পিরিয়ডকালীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় তৈরি হচ্ছে জটিলতা।আশাশুনির একটি গ্রামের কিশোরী রিমা (ছদ্মনাম) জানায়, “পিরিয়ড হলে খুব কষ্ট হয়, কিন্তু অনেক সময় কাপড় দিয়েই চালাতে হয়। দোকানে কিনতেও লজ্জা লাগে।”স্থানীয় এক গৃহবধূ বলেন, “নদীভাঙ্গনের সময় পানি উঠে ঘরে, সেই পানি আবার লবণাক্ত। এ পানি দিয়ে শরীর ধোয়া যায় না, তখন অনেক সমস্যা হয়।”বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লবণাক্ত পানি ব্যবহারের কারণে অনেক নারীই প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া, ত্বকের সংক্রমণ ও প্রজনন অঙ্গের রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।ডাঃ কৃষ্ণা বসাক বলেন, “লবণাক্ত পানি ব্যবহারে ইনফেকশন বেড়ে যাচ্ছে। এছাড়া স্যানিটারি প্যাডের অভাবে অনেক নারী নানা সমস্যায় পড়ছেন। কিশোরীরা সচেতন না থাকায় সমস্যা আরও বাড়ছে।”এদিকে, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও বিদ্যালয়গুলোতেও প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে পর্যাপ্ত সচেতনতা বা সেবা নেই বলে অভিযোগ উঠেছে। স্বাস্থ্যকর্মীদের উপস্থিতি অনেক জায়গায় অনিয়মিত, আর স্কুলে স্বাস্থ্যশিক্ষা কার্যক্রম সীমিত পর্যায়ে রয়ে গেছে।উপজেলার এক শিক্ষক বলেন, “আমরা চেষ্টা করি বিষয়গুলো ছাত্রীদের বোঝাতে, কিন্তু পরিবার বা সমাজের সাপোর্ট না থাকলে সচেতনতা তৈরি হয় না।”স্থানীয় এনজিওগুলো বলছে, পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ। তারা মেয়েদের জন্য আলাদা স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র, সেনিটারি প্যাড বিতরণ, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও স্বাস্থ্যশিক্ষার ওপর জোর দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।উপকূলীয় অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নারীদের স্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও সামাজিক নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। টেকসই উদ্যোগ, নারী-কেন্দ্রিক নীতি ও সামাজিক সচেতনতার মাধ্যমে এই ঝুঁকি কমিয়ে আনা সম্ভব। সরকার, বেসরকারি সংস্থা ও স্থানীয় সম্প্রদায়ের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন, যাতে নারীরা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা করে সুস্থ ও নিরাপদ জীবনযাপন করতে পারে।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন