
গ্রামীণ সাংবাদিকতায় প্রেস কাউন্সিল পদক পেলেন পটুয়াখালীর সিকদার জাবির
নিজস্ব প্রতিনিধি
সাংবাদিকতায় রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল পদক-২০২৩' পেয়েছেন সময় টেলিভিশনের পটুয়াখালী জেলা প্রতিবেদক সিকদার জাবির হোসেন। দেশের গ্রামীণ জীবনযাত্রা নিয়ে অনুসন্ধানী ও সৃজনশীল প্রতিবেদনের জন্য ‘গ্রামীণ সাংবাদিকতা’ ক্যাটাগরিতে তাকে এই পদক প্রদান করা হয়। বুধবার বিকেলে রাজধানীর তথ্য ভবনে প্রেস কাউন্সিল ও তথ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে পদক প্রদান করেন তথ্য সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আরাফাত আলী।
এসময় প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের সভাপতিত্বে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি কাজী কেরামত আলী এমপি, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ হুমায়ুন কবীর খোন্দকার এবং ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান ও জুরি বোর্ডের সদস্য ড. মো. আবুল মনসুর আহাম্মদ সহ বিশিষ্টজনরা উপস্থিত ছিলেন ।
জাবির হোসেন পটুয়াখালী জেলার সাগর ও নদী বেষ্টিত দ্বীপ রাঙ্গাবালী উপজেলার বাহেরচর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মৌলভী আব্দুর রউফ ও খাদিজা বেগমের তিন সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় তিনি। পটুয়াখালী সরকারি কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স ও মাষ্টার্স সম্পন্ন করেছেন।
২০১৪ সালে দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় হাতেখড়ির মাধ্যমে সাংবাদিকতা জীবন শুরু করেন জাবির হোসেন। এক দশকের সাংবাদিকতা জীবনে তিনি দৈনিক যুগান্তর ও ডেইলি অবজারভার সহ বেশ কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে কাজ করেছেন। তিনি বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের অধিভুক্ত বরিশাল সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্য।
উপকূলের পথে প্রান্তে ঘুরে ঘুরে অনুসন্ধানী রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে দক্ষিণ উপকূলের সমস্যা ও সম্ভাবনাকে দেশবাসীর কাছে তুলে ধরার ক্ষেত্রে তার ভূমিকা অনন্য। ঝড়, বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসকে উপেক্ষা করে মানুষের কাছে তুলে ধরেছেন প্রত্যন্ত গ্রামের দু:খ দুর্দশার চিত্র।
"সাগর ও নদী বেষ্টিত দ্বীপ রাঙ্গাবালীতে নেই হাসপাতাল, দুই লাখ মানুষের ভরসা হাতুড়ে ডাক্তার এবং কবিরাজের তাবিজ-কবজ" এ বিষয় নিয়ে ২০২২ সালে সময় টেলিভিশনে সিকদার জাবির হোসেনের একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রচার হয়। প্রতিবেদনটিতে চরাঞ্চলের স্বাস্থ্যসেবার করুণ চিত্র তুলে ধরা হয়। এরপরই রাঙ্গাবালীতে শুরু হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজ। অন্ধকারে আলো ফোঁটার মতো খুশীর ঝলক দেখা দেয় দ্বীপবাসীর মধ্যে। এছাড়াও প্রত্যন্ত গ্রামে নির্মিত নতুন সমুদ্র বন্দর পায়রা ও একাধিক বিদুৎ কেন্দ্র নিয়ে সম্ভাবনার প্রতিবেদনের মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
এভাবেই গ্রামীণ সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদান রেখেছেন তরুণ এই সাংবাদিক। তাই 'প্রেস কাউন্সিল পদক-২০২২' এ গ্রামিণ সাংবাদিকতা ক্যাটাগরিতে পদকলাভ করেন তিনি।
প্রতি বছর চার জন সাংবাদিক ও দুটি প্রতিষ্ঠানকে পদক প্রদান করা হয়। এবার প্রতিষ্ঠান ক্যাটাগরিতে পদক লাভ করেছে জাতীয় দৈনিক ভোরের কাগজ ও আঞ্চলিক দৈনিক কক্সবাজার। ভোরের কাগজের পক্ষে পদক গ্রহণ করেন সম্পাদক শ্যামল দত্ত এবং দৈনিক কক্সবাজারের পক্ষে পদক নেন সম্পাদক ফাতেমা জাহান।
এছাড়া উন্নয়ন সাংবাদিকতা ক্যাটাগরিতে পদক পেয়েছেন বাংলাদেশ টেলিভিশনের বার্তা প্রযোজক ইকবাল ফরহাদ। নারী ক্যাটাগরিতে পদক পেয়েছেন দৈনিক ভোরের কাগজ পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার ঝর্ণা মনি। আজীবন সম্মাননা ক্যাটাগরিতে মরণোত্তর পদক পেয়েছেন দৈনিক বেগম পত্রিকার সম্পাদক প্রয়াত নূর জাহান। তিনি ২০১৬ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তার হয়ে পদক গ্রহণ করেন তার মেয়ে সাংবাদিক নূর জাহান ফ্লোরা নাসরিন খান।
পুরষ্কার হিসেবে প্রতিষ্ঠান ক্যাটাগরিতে ১ লাখ টাকা, একটি ক্রেস্ট, এবং সনদপত্র দেয়া হয়। আর ব্যাক্তি ক্যাটাগরিতে ৫০ হাজার টাকা, একটি ক্রেস্ট, এবং সনদপত্র প্রদান করা হয়।
উল্লেখ্য: রিপোর্টিংয়ে রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পদক এটি। ঢাকা বাইরে অর্থাৎ সারাদেশের বিভাগ ও জেলা থেকে প্রতি বছর এক জন সাংবাদিককে গ্রামীণ সাংবাদিকতা ক্যাটাগরিতে এ পদক প্রদান করা হয়। বরিশাল বিভাগে কর্মরত কোন সাংবাদিক এবারই প্রথম প্রেস কাউন্সিল পদক অর্জন করেছে।
