কক্সবাজারে অসার প্রমাণীত নিরাপত্তা প্রকল্প
স.ম ইকবাল বাহার চৌধুরী, কক্সবাজার
একর পর এক খুন , চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই সহ বিভিন্ন অপরাধের মাত্রা দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে পর্যটন শহর কক্সবাজার।বিগত কয়েক বছর ধরে তা জ্যামিতিক হারে বাড়ছে। র্যাব, বিজিবি সহ আইনশৃংখলা বাহিনীর আঁকা সকল পরিকল্পনা সন্ত্রাস আর ছিনতাইকারীদের নিকট এক প্রকার অসহায় মনে হচ্ছে এমনটি মনে করেন সচেতন মহল। অনেকে কক্সবাজার শহরকে সন্ত্রাসীদের অভয়নগর বলেও মনে করছেন। এরই প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে শহরের আইনশৃংখলা রক্ষায় এগিয়ে আসেন কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক)।
পুরা শহরকে হাতের মুটোয় নিতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে আইনশৃংখলা নিয়ন্ত্রনের জন্য নেওয়া হয় একটি প্রকল্প। আর সেই প্রকল্পের আওতায় শহরের গুরুত্বপুর্ণ ও ঝুঁকিপুর্ণ পয়েন্টগুলোতে ১৫০ সিসি ক্যামরা বসিয়ে চুরি ছিনতাই ও ডাকাতি সহ পর্য়টন কেন্দ্রীক অপরাধ নিয়ন্ত্রনের জন্য চেষ্টা চালানো হয়। তারই আওতায় অতি গ্ররুত্বপুর্ণ বিবেচনায় নিরাপদ পর্যটন নিশ্চিত করতে কক্সবাজার শহরের প্রাথমিক ভাবে ৪০টি পয়েন্টে ৫২টি ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা বসানো হয়েছে। সার্বক্ষণিক ফুটেজ মনিটরিংয়ের লক্ষ্যে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে নির্মিত হয়েছে সিসি ক্যামেরার কন্ট্রোল রুম।
সিসি ক্যামেরার আওতায় আসা স্থানগুলো হলো- বাসটার্মিনাল পুলিশ বক্স ও সিএনজি পাম্প, কক্সবাজার কারাগার, স্টেডিয়ামের সামনে ও মোহাজের পাড়ার মোড়, সদর হাসপাতালের দক্ষিণ ও পূর্ব পাশের মোড়, জেলা শিক্ষা অফিসের সামনে ( সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়), গোলদিঘীর পাড়ের দক্ষিণ মোড়, অগগমেধা ক্যাং (বৌদ্ধ মন্দির ) সড়ক, বার্মিজ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের উত্তর মোড়, বড় বাজার সামনে মোড় ( বাজারঘাটা) ,ভোলাবাবুর পেট্রোল পাম্প, লালদিঘীর পূর্ব পাড় মসজিদের সামনে, পৌরসভার সামনে, গুমগাছ তলা (শ্যামলী কাউন্টারের পাশে) , বিমানবন্দর গেইটের সামনে, ঝাউতলা হোটেল রেনেসার সামনের যাত্রী ছাউনিতে, হলিডের মোড়ের যাত্রী ছাউনীর সামনে ও পিটিআই স্কুলের সামনের মোড়ে (পিডিবির সামনে) সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছিল।
এছাড়াও আরআরআরসি অফিসের সামনে (বাণিজ্য মেলার মাঠ), লাবণীর মোড়ের যাত্রী ছাউনী, কল্লোল মোড়, হান্ডি রেস্টুরেন্টের মোড়, সী ইন পয়েন্ট ট্যুরিস্ট পুলিশ বক্স, সুগন্ধার মোড় ( ড্রাগন মার্কেটের সামনে), কলাতলীর পেছনের মোড় (সী ক্রাউন এর সামনে), কলাতলীর মোড়, হোটেল সী প্যালেসের উত্তর ও দক্ষিণ পাশ, সুগন্ধা পয়েন্ট ট্রাফিক পুলিশ বক্স, লং বীচের পাশে ( মোহাম্মদীয়া হোটেল সামনের পশ্চিম পাশ), নিরিবিলি অর্কিড এর এটিএম বুথের পাশে, সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সামনে (কটেজ জোনের পাশে) জাম্বুর মোড়, গোলচত্বর মোড়ের দক্ষিণ পাশে ( ইউএনএইচসিআরের পেছনের রাস্তা), পাসপোর্ট অফিসের সামনে, সার্কিট হাউস গেইট, পুলিশ সুপার বাসভবনের সামনের মোড় ও পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়।
এ সময় পুলিশের ভষ্য মতে সিসি ক্যামেরার কারণে কমপক্ষে ৬০ শতাংশ অপরাধী অপরাধের অন্ধকার পথ ছেড়ে দেবে বলে আমরা আশা করছিল। কিন্ত বিগত ৫ বছরে হয়েছে তার হিতে বিপরীত। বিগত ৫ বছরে প্রায় ৯০% সিসি ক্যামরা নিস্ক্রীয় বা অকেজো হয়ে পড়েছে। আর বিগত ৫ বছরে কক্সবাজার সদরে খুন হয়েছে প্রায় ৯০ জন। কিন্তু সচেতন মহলের অনেকের মতে সেই নিরাপত্তা প্রকল্প সিসি ক্যামরা ইতিমধ্যে কার্যকারিতা অসার প্রমাণিত হয়েছে। বেড়েছে অপরাধ প্রবনতা।
তবে জেলা পুলিশের ভাষ্য মতে খুন, চুরি, ডাকাতিসহ অপরাধ নির্মূলে কক্সবাজার শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টের সিসি ক্যামরা নষ্ট ও অকেজো হয়ে পড়ায় খুনসহ নানা অপরাধে জড়িত অপরাধীদের শনাক্ত করতে হিমশিম খাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
আমরা কক্সবাজারবাসী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন বলেন, পর্যটন শহর কক্সবাজারের আইনশৃংখলা উন্নয়নের লক্ষে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তা প্রকল্প সিসি ক্যামরা শহরের নিরাপত্তায় অসার প্রমাণিত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে পুলিশ আরো বেশী তৎপরতা জোরদার করলে হয়তো কিছুটা সুফল আশা করা যায়। শহরে দিনদিন ।পরাধ প্রবনতা বাড়ছেই। এতে করে পর্যটন শিল্পের উপরও প্রবাব পড়ার আশংকা রয়েছে বলে মনে করি বলেন তিনি।
এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী মোহাম্মদ হানিফ বলেন, সিসি ক্যামরা নয়, পুলিশকেই আন্তরিক হতে হবে আইনশৃংখলা স্বাভাবিক করতে। ইতিমধ্যেই সিসি ক্যামরা শহরে আইনশৃংখলা রক্ষায় অনেকটা অসার প্রমানিত হয়েছে। তাই শুধু সিসি ক্যামরা দিকে চেয়ে থাকলে তা আরো খারাপের দিকেই যাবে। পুলিশের পাশাপাশি র্যাব ও আনসার বাহিনীকেও কাজে লাগালে ভাল ফল পাওয়া যেতে পারে।
এ বিষয়ে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (অথরাইজ অফিসার) মোহাম্মদ রিশাদ উন নবী বলেন, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বসানো সিসি ক্যামেরাগুলো জেলা পুলিশ তদারক করেন। পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো সিসি ক্যামেরা নষ্টের অভিযোগ আসলে তা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সচল করার ব্যবস্থা করা হয়। তবে এই কতটি সিসি ক্যামেরা অকেজো রয়েছে তা বলতে পারেননি এবং বিষয়টি জেলা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে জানা যাবে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মো. জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, কক্সবাজার জেলা পুলিশের কন্ট্রোল রুমের নিয়ন্ত্রনে থাকা শহরে বিভিন্ন পয়েন্টে বসানো সিসি ক্যামরার মধ্যে প্রায় সিসি ক্যামেরা অকেজো, শুধু পুলিশের সিসি ক্যামেরা নয়, পৌরসভা ও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বসানো সিসি ক্যামেরাও অচল রয়েছে। আর জেলা পুলিশের নিয়ন্ত্রনে থাকা ক্ষতিগ্রস্ত ক্যামেরা মেরামত করার জন্য সম্ভাব্য ব্যয়ের চাহিদাপত্র তৈরি করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। বরাদ্দ কিংবা সহযোগিতা পেলে ক্যামেরা গুলো সচল করা হবে।
তিনি আরো বলেন, অপরাধ নির্মূল পুলিশের নিয়মিত কাজ। জেলাজুড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ তৎপর রয়েছে এবং পর্যটন জোন সহ জেলার আইশৃংখলা রক্ষায় জেলা পুলিশ কার্য়করী পদক্ষেপ নিয়েছে। আশা করি অল্প সময়ের মধ্যে জেলার আইনশৃংখলা রক্ষণীয় উন্নতি হবে আপনাদের সকলের সহযোগিতায়।