ডার্ক মোড
Wednesday, 15 January 2025
ePaper   
Logo
ঈদের পর, পূজার পর ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের চেষ্টা করেছিল, তারা কি পেরেছিল

ঈদের পর, পূজার পর ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের চেষ্টা করেছিল, তারা কি পেরেছিল

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেছেন, গত ১৬ বছর ধরে বাংলাদেশের প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল তাদের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে চেষ্টা করেছে, তারা ওই ফ্যাসিস্ট সরকারকে নাকি পতন ঘটানোর। তারা কি পেরেছিল? ১৬ বছর ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন ঈদের পরে, পূজার পরে আন্দোলনের চেষ্টা করেছিল এই ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের ঘটাতে, তারা কি পেরেছিল?

রোববার বিকেলে মুন্সীগঞ্জ শহরস্থ সরকারি হরগঙ্গা কলেজ মাঠে ছাত্র-জনতার সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি।

সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, যেদিন ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নেমেছে এবং ছাত্ররা সামনের সারিতে ছিল সেদিনই ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হয়েছে। এই ছাত্র-জনতার ওপরে বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের যেই আস্থা রয়েছে তা তথাকথিত রাজনৈতিক দলগুলোর উপর নেই। আপনাদের ওপরে দেশের অসংখ্য মানুষ যে আস্থাটি রেখেছে এখন সময় তাদের আস্থার প্রতিদান দেওয়া।

সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে ছাত্র-জনতার উদ্দেশে ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কে সারজিস বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের নির্যাতন-নিপীড়নের ডকুমেন্টগুলো জীবন্ত রাখতে হবে। তারা চাইবে স্মৃতিগুলো ভুলিয়ে দিতে। যদি এগুলো ভুলে না যান তাহলে তারা আবার এসে ক্ষমতায় বসতে পারবে না। আগামীতে এই বাংলাদেশে যারা শাসন করবে কিংবা রাজনীতিতে নেতৃত্ব দেবে, যদি তাদের উদ্দেশ্য থাকে আবার কোনো ফ্যাসিস্ট সরকার কায়েম করার, তারাও চাইবে আপনার স্মৃতি থেকে ফ্যাসিজমগুলো মুছে দেওয়ার জন্য। তাই ফেসবুক পোস্ট, ছবি, ভিডিও, ডায়েরি লেখা বা বইয়ের মাধ্যমে সেগুলো লিপিবদ্ধ করতে হবে।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, কোয়ালিটির জায়গা থেকে স্কিলফুল হতে হবে। সময়ের প্রয়োজনে সবই করতে হবে। কিন্তু প্রথম ও প্রধান কাজ হলো পড়াশোনা ঠিক রাখা।

এদিন বিকেলে সারজিস আলমসহ ১৪ সদস্যের দল সরকারি হরগঙ্গা কলেজ মাঠে গণঅভ্যুত্থানের প্রেরণায় শহীদ পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ছাত্র-নাগরিক মতবিনিময় সভায় অংশ নেয়। সেখানে ব্যানার-মিছিল নিয়ে সহস্রাধিক মানুষ অংশ নেয়।

নিহত ও আহতদের পরিবারের সদস্যরা সারজিস আলমকে বলেন, আন্দোলনের দিন অস্ত্র নিয়ে যারা হামলা করেছিল তাদের অনেকে এখন প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। মামলা থেকে যোগসাজশে তাদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। আসামিদের ব্যাপারে প্রশাসনও শক্ত অবস্থান নিচ্ছে না।

এছাড়া গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত অনেকে ৪ আগস্ট শহরের সুপারমার্কেটে আন্দোলনের বিভিন্ন ভিডিও-ছবি সারজিসকে দেখান। সারজিস আলম সবার কথা লিখে নেন এবং আহতদের চিকিৎসা ব্যয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে বহন করা হবে বলে আশ্বস্ত করেন।

এর আগে বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে সফরের অংশ হিসেবে সকাল ৮টার দিকে মুন্সীগঞ্জে পৌঁছায় কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলমের নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের সমন্বয়ক দল। সকাল ৯টার দিকে স্থানীয় ছাত্র সমন্বয়কদের সঙ্গে ও পরে নিহত-আহতদের পরিবারের সঙ্গে মতবিনিময় করে সমন্বয়ক দল। এ সময় স্বজনরা আন্দোলনে নিহতদের শহীদি মর্যাদা প্রদানের দাবি তোলেন। সারজিস আলম নিহত ও আহতদের পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন। আহতদের চিকিৎসা বিষয়ে সহযোগিতার কথা জানান।

এরপর দুপুর ১টার দিকে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেন সমন্বয়করা। এতে জেলার বিভিন্ন বিষয়ে আলোকপাত করা হয়। এতে জেলা জাতীয় পার্টির একাংশ, জামায়াতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির নেতাকর্মীরা অংশ নেন। আর ১৪ সদস্যের টিমে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- ইব্রাহীম নীরব, মম, সালেহীন আবেদিন অয়ন, মোবাশ্বের, জেদনি, রোহান, ইফতি, তালহা, মো. আনোয়ার হোসাইন, মো. হৃদয়সহ বাকিরা।

উল্লেখ, গত ৪ আগস্ট মুন্সীগঞ্জের সুপার মার্কেট এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন মুন্সীগঞ্জ শহরের উত্তর ইসলামপুর এলাকার কাজী মতিনের ছেলে রিয়াজুল ফরাজি, আলী আকবরের ছেলে মোহাম্মদ সজল ও সিরাজ সরদারের ছেলে নূর মোহাম্মদ ডিপজল। এছাড়া সেদিন অর্ধশতাধিক গুলিবিদ্ধসহ আহত হন অন্তত শতাধিক ছাত্র-জনতা।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন