আমতলীর ৭৭ বছর বয়সী বৃদ্ধসহ একই পরিবারের ৩ জন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যা মামলার আসামী
আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি
১০ বছরেও ঢাকায় যায়নি তালতলী উপজেলার শারিকখালী ইউনিয়নের উত্তর বাদুরগাছা গ্রামের ৭৭ বছর বয়সী আলহাজ্ব লিয়াকত হাওলাদার। তিনি ঢাকায় আদাবর থানায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আলী মিয়া হত্যা মামলার আসামী।
একই সঙ্গে তার দুই ছেলে মসজিদের ইমাম আলহাজ্ব গোলাম মোস্তফা হাওলাদার (৪৮), ব্যবসায়ী আবুল কালাম হাওলাদার ওই মামলার আসামী। বাবা-ছেলে হত্যা মামলার আসামী হওয়ায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত এ হত্যা মামলা থেকে তাদের অব্যহতি দেয়ার দাবী জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
বৃদ্ধ আলহাজ্ব লিয়াকত হাওলাদার কান্নাজনিত কন্ঠে বলেন, ৭৭ বছর বয়সে আমি ঠিকমত চলাফেরা করতে পারি না, আমি যাব হত্যা করতে? বাড়ীতে ছেলেদের সহযোগীতায় মসজিদে নামাজ আদায় করতে যাই, আবার তাদের সহযোগীতায় ঘরে ফিরি। কিন্তু আমি এখন হত্যা মামলার আসামী। তিনি আরো বলেন, ২০১৪ সালে হজ্বে যাওয়াকালিন সময় ঢাকায় গেছি। এরপর ১০ বছরে ঢাকায় যাইনি। আমার দুই ছেলেও গত ৫ বছরে ঢাকায় যায়নি। আমি ও আমার দুই ছেলেকে হত্যা মামলার আসামী করা হয়েছে। পুলিশ প্রশাসনকে এ হত্যা মামলার তদন্ত করে আমাকে ও আমার দুই ছেলেকে অব্যহতি দেয়ার দাবী জানান তিনি।
মামলাসুত্রে জানাগেছে, গত বছরের ১৯ জুলাই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শেখেরটেক এলাকার জাবেদ আলীর ছেলে আলী মিয়া অংশ নেয়। ওই সময়ে তিনি সন্ত্রাসীদের গুলিতে গুরুতর আহত হয়। তাকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।
ওই হাসপাতালে ছয়দিন চিকিৎসা শেষে গত বছরের ২৫ জুলাই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এ ঘটনায় গত বছর ১৪ নভেম্বর ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নিহত আলী মিয়ার চাচাতো ভাই তোহা খাঁন বাদী হয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১২৭ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় ১৩ নং আসামী ৭৭ বছর বয়সী আলহাজ্ব মোঃ লিয়াকত হাওলাদার, ১৫ নং আসামী তার ছেলে আবুল কালাম হাওলাদার ও ১৯ নং আসামী তার আরেক ছেলে মসজিদের ইমাম আলহাজ্ব মোঃ গোলাম মোস্তফা হাওলাদারকে।
নিরহ ও অরাজনৈতিক পরিবারের তিনজন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যা মামলার আসামী করায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। আসামী আবুল কালাম ও গোলাম মোস্তফার অভিযোগ, বাবা ৭৭ বছর বয়সী বৃদ্ধ। চলাফেরা করতে পারে না। তিনি কিভাবে ঢাকায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত আলী মিয়ার ওপর গুলি চালালো? আমরা দুই ভাই গত পাঁচ বছরেও ঢাকায় যাইনি, কিভাবে আমরা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আলী মিয়াকে হত্যা করলাম ? তারা আরো বলেন, আমাদের পরিবার কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত নয়। বাড়ীতে পরিবার দেখাশুনা করা ছাড়া আর কিছুই করিনা। একটি কুচক্রিমহল ষড়যন্ত্রমুলক আমাদের আসামী করেছে। তদন্ত করলেই এর সত্যতা বেড়িয়ে আসবে। ইমামসহ পিতা-পুত্রের বিরুদ্ধে এমন মিথ্যা অভিযোগে মামলা প্রত্যাহারের দাবী জানান তারা।
স্থানীয় দেলোয়ার খাঁন ও ইব্রাহিম হাওলাদার বলেন, আলহাজ্ব লিয়াকত হাওলাদার ঠিকমত চলাফেরা করতে পারেনা। সে কিভাবে ঢাকায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলি চালালো ? এমন মিথ্যা অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধের দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহারের দাবী জানান তারা।
মামলার ১৯নং আসামী মসজিদের ইমাম আলহাজ্ব মোঃ গোলাম মোস্তফা হাওলাদার বলেন, এলাকার মসজিদে ইমামতি করি। কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আমার পরিবার সম্পৃক্ত নই। কিন্তু আমাকে ও আমার বৃদ্ধ বাবা ও ভাইকে ষড়যন্ত্রমুলকভাবে ঢাকায় হত্যা মামলায় আসামী করা হয়েছে। এ মামলা থেকে আমাদের অব্যহতির দাবী জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, এ তদন্ত করলেই ঘটনার সত্যতা বেড়িয়ে আসবে।
তালতলী থানার ওসি মোঃ শাহজালাল বলেন, ডিএমপির আদাবর থানা থেকে তিনজনের নামপরিচয় সনাক্ত করে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলেছে। ওই অনুসারে প্রতিবেদন দেয়া হবে।
ডিএমপির আদাবর থানার ওসি মাহফুজ ইমতিয়াজ ভুঁইয়া মুঠোফোনে বলেন, মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, বিনা অপরাধে কাউকে হয়রানী করা হবে না।